X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
২২ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:৩৩আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০১৭, ০০:২৪

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও এর উপাচার্য (ডানে) শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১১৮টি পদের নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূর-উন-নবীর বিরুদ্ধে। এসব পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করা হয়নি। নিয়োগের সাক্ষাৎকারেও করা হয়েছে অনিয়ম।
উপাচার্যের মেয়াদ আগামী ৫ মে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি তড়িঘড়ি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে চান বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট শিক্ষক নিয়োগ তিন মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নূর-উন-নবী উপাচার্য হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ইউজিসি ও মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনার পরও নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতা করা হয়। সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে এখন আলোচনায় উঠে আসা ১১৮টি পদের নিয়োগের অনুমোদনও আসে গত বছরের প্রথম দিকে।
প্রায় এক বছর পর গত ৯ ফেরুয়ারি একই দিনে তিনটি পৃথক স্মারকে এসব নিয়োগের নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষকদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ১২ ফেব্রুয়ারি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ১৩ ফেব্রুয়ারি ও কর্মচারীদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৪ ফেরুয়ারি।
এসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে চাকরি প্রার্থীদের আবেদনের জন্য ন্যূনতম ২১ দিন সময় পাওয়ার বিধান মানা হয়নি। তিনটি পদের মধ্যে শিক্ষক পদে আবেদনের জন্য প্রার্থীদের সর্বোচ্চ সময় দেওয়া হয়েছে ১৮ দিন।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রে জানা গেছে, ১১৮টি পদের বিপরীতে আবেদনপত্র জমা পড়েছে প্রায় ১০ হাজার। আবেদনপত্রগুলো পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই করতে ১৫ দিন সময় লাগার কথা। কিন্তু মাত্র সাত দিনের মাথায় সাক্ষাৎকারের কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। অনেক প্রার্থীকে মোবাইল ফোনে এসএমএস দিয়েও সাক্ষাৎকারের জন্য উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। আবেদনকারীদের যোগ্যতার যাচাই-বাছাইয়ের বদলে ব্যক্তি পছন্দকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিয়োগবিধি অনুযায়ী কেন চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন করার জন্য ২১ দিন সময় দেওয়া হয়নি এবং কেন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্রুতগতিতে ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করা হয়েছে, এসব প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারর ইবরাহিম কবীর ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপাচার্যের চাকরির মেয়াদ বেশিদিন না থাকায় একটু তড়িঘড়ি করে আবেদনপত্র আহবান করা হয়েছে। তবে সব আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রার্থীদের ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। অনেকে কার্ড পাননি সত্যি, তবে অনেককে এসএমএস দিয়ে আসতে বলা হয়েছিল।’
এদিকে নিয়োগ পরীক্ষার সাক্ষাৎকার বোর্ড নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সাক্ষাৎকার কমিটিতে রাখা হয়েছে বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষকে। জানা গেছে, তিনি উপাচার্যের দীর্ঘদিনের বন্ধু। কমিটিতে থাকলেও বেশিরভাগ পরীক্ষায় তিনি উপস্থিত থাকছেন না। কমিটিতে থাকা রংপুর বিভাগীয় কমিশনারও দাফতরিক ব্যস্ততার কারণে পরীক্ষাগুলোতে উপস্থিত থাকছেন না।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার ইবরাহিম বলেন, ‘অভিযোগটি সঠিক নয়। যাদের নামে অভিযাগ উঠেছে তারা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে হয়তো দুই-একবার আসেননি।’
এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সংরক্ষণ না করে শিক্ষকসহ ১১৮টি পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কারণে রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু উপাচার্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মোছাদ্দেক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ৩ এপ্রিল একটি গণমাধ্যমে ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখতে পাই। এরপর উপাচার্যকে ফোন দিলে তিনি আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখার প্রয়োজনই তিনি মনে করেননি। এ বিষয়ে সরকারি বিধানের কথা তাকে বললেও তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতে রাজি হননি। এ কারণেই দুদকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।’
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ না করার প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার ইবরাহিম বলেন, ‘আমি নিজেই একজন মুক্তিযোদ্ধা, এখানে আমার কোনও ইনটেনশন ছিল না। তবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করা হয় না। সে কারণে এখানেও তা করা হয়নি।’
এর মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় গত ৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। পরদিন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। একই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ব্যত্যয় ঘটানো কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে রুলের জবাব দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে তাবিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপাচার্য অধ্যাপক নূর উন নবীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে আগেও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। আমার সঙ্গে আবেদনকারী হিসেবে আরও ছিলেন শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি হাফিজার রহমান।’
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ইউজিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ইউজিসির একটি তদন্ত কমিটি সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তদন্ত করার দীর্ঘ ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি ওই কমিটি। উপাচার্যের মেয়াদ আর ১৩ দিন থাকায় এক সপ্তাহের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ইউজিসির চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তাবিউর রহমান।
এদিকে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর শিক্ষক নিয়োগে হাইকোর্টের তিন মাসের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও শুক্রবার (২১ এপ্রিল) দৈনিক ইত্তেফাকের অনলাইন সংস্করণে একটি সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত তিনটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও কোটা সংরক্ষণের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। যারা কোটা অনুযায়ী আবেদন করতে ইচ্ছুক তাদের ২৮ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করতে হবে।’
সংশোধিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার নিজেই তার নামে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি জানি না।’ তিনি না জানলে তার নামে কিভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ভীষণ ঝামেলায় আছি। আর কিছু বলব না।’
কথার এক পর্যায়ে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে উপাচার্যের পক্ষ থেকে। তিনি বলেছেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার কোনও কথা বলার প্রয়োজন নেই।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূর-উন-নবী তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি মহল অপপ্রচার চালিয়েছে। সব কাজ শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গেই করেছি।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে গত দু’দিন ধরে তার মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করতে গেলে সেখানেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, উপাচার্য জরুরি কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি কবে ফিরবেন, তা বলা সম্ভব নয়।
/এআর/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী