X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেল শনির হাওর

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
২৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:৪৮আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:২৯

শনির হাওরে বাঁধ ভেঙে ঢুকছে পানি কৃষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বাঁধ ভেঙে ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জের অন্যতম শস্য ভান্ডার শনির হাওর। আজ রবিবার ভোররাতে হাওরটির তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের রাজধরপুর গ্রাম সংলগ্ন লালুরগোয়ালা বেড়িবাঁধটি ৫০ ফুট দীর্ঘ হয়ে ভেঙে পড়ে। এছাড়াও রামজীবনপুর গ্রামের সামনে বেড়িবাঁধের একটি অংশও ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে তীব্র স্রোতে হাওরটির পাশ দিয়ে বয়ে চলা বৌলাই নদীর পানি ঢুকছে হাওরটির ভেতরে। এতে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার ৫০টি গ্রামের ৫০ হাজার কৃষকের কাঁচা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়।

রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাওরের পানি আর  মানুষের চোখের পানি একাকার হয়ে গেছে। হাওর জুড়ে কৃষকদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে শনির হাওরের আকাশ। গোখাদ্যের জন্য কাঁচা ধান কেটে কৃষক উচু জমিতে সংরক্ষণ করছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ঢলের পানি তাও ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এ অবস্থা পুরো হাওর জুড়ে চলছে। উৎসুক শিশুরা জাল দিয়ে নতুন পানিতে মাছ ধরতে ব্যস্ত। অন্যদিকে হাজার হাজার কৃষক তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, শনির হাওরে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলেন তাহিরপুর উপজেলার কৃষকরা। হাওরের বাকি জমির ধান পার্শ্ববর্তী জামালগঞ্জ ও বিশম্ভরপুর উপজেলার কৃষকরা চাষ করেছেন। তার দাবি তাহিরপুর উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৫ হাজার একশ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়েছে। তবে কৃষকরা জানিয়েছেন, পানিতে তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
হাওরপাড়ের বাসিন্দারা জানান, মার্চ মাসের শেষ দিকে টানা বৃষ্টি শুরু হলে নিজের জমির ধান পানি থেকে রক্ষায় কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধে কাজ শুরু করেন। টানা একমাস রাতদিন হাওরের বাঁধে কাজ করেছেন হাওরপাড়ের অর্ধশতাধিক গ্রামের হাজারো কৃষক। কিন্তু টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে হাওর সংলগ্ন বৌলাই নদীর পানি বেড়ে চলায় শেষ রক্ষা হয়নি। বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়েছে হাওরের বেড়িবাঁধ।

রামজীবনপুর গ্রামের কৃষক মনু মিয়া বলেন, ২০ দিন ধরে বাঁধে কাজ করেও শেষ রক্ষা করতে পারিনি। আফর ভেঙে এক নিমিষেই তলিয়ে গেল এত বড়ো হাওর।

একই গ্রামের সুফিয়া খাতুন হাওরের ভাঙন দেখতে এসে বলেন, ‘ভিক্ষা করে তিন কেয়ার জমি করেছি। তিনমুঠো ধানও কাটতে পারিনি।’

বাঁধ ভেঙে ঢুকছে পানি
সোলেমানপুর গ্রামের আজর  আলী বলেন, ‘জীবনেও এত পানি দেখিনি। হাওরে, নদীতে পানি আর পানি।’

সাহেবনগর গ্রামের মকন মিয়া বলেন, ‘এভাবে টাকা খরচ করে বাঁধ নির্মাণের নাটক করে কোনও লাভ নাই। নদী খনন না করলে এভাবে আগামীতেও ফসল তলিয়ে যাবে।’

উজ্জ্বলপুর গ্রামের হোসেন আলী বলেন, হাওরের ধান উঠলে কৃষকের অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার হয়। তাদের ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, বিয়ে শাদী সবই নির্ভর করে এর উপর। ফসল তলিয়ে যাওয়ায় হাওরপাড়ে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

উজ্জ্বপুর গ্রামের আব্দুল মতিন বলেন, ঘরে নেই খাবার, গোয়ালে নেই গরু। সংসার কীভাবে চলবে আর আগামীতে চাষাবাদ কীভাবে করব?

বেহেলী কৃষ্ণকান্ত বর্মণ বলেন, কৃষকদের ব্যাপকভাবে সাহায্য সহযোগিতা না করলে এলাকায় তীব্র অভাব দেখা দেবে।

তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, স্থানীয়দের নিয়ে দীর্ঘদিন হাওরের ফসল রক্ষার বাঁধ টিকিয়ে রেখে ছিলেন। কিন্তু আজকের পানির চাপ আর কিছুতেই সহ্য করতে পারেনি বাঁধ। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য ব্যাপকভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর দাবি জানান তিনি।

হাওরপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো হচ্ছে ভাটি তাহিরপুর, ঠাকুরহাটি, গোবিন্দশ্রী, জাকিরনগর, সাহাগঞ্জ, শ্রীপুর, নিশ্চিন্তপুর, ইকরামপুর, নোয়ানগর, মাড়াল, গোপালপুর, সাহেবনগর, রামজীবনপুর, আলীপুর, রাধানগর, বেহেলী, ইসলামপুর, চন্ডীপুর, শিবপুর, মশালঘাট, রাজিনপুর, বসন্তপুর, বাগোয়া, শাহাপুর, দাওয়া, মাহমুদপুর, বারুংকা, তিওরজালাল, পাতারি, আনোয়ারপুর, লোহাচুড়া, নোয়াহাট, ফাজিলপুর, দক্ষিণকুল, হোসেনপুর, চিকসা, বীরনগর, জয়নগর, ধুতমা, উজান তাহিরপুর, মধ্য তাহিরপুর। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী কিছু গ্রামের কৃষকরা এ বৃহত্তর হাওরটিতে বোরো ধান চাষ করে থাকেন।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়ি বাঁধ রক্ষায় হাওরপাড়ের কৃষকরা সবধরনের চেষ্টাই করেছেন। প্রশাসন সাধ্যের চেয়ে বেশি বাঁশ, বস্তা ও বালু সরবরাহ করেছে। অনেক জায়গাতে মজুরির ভিত্তিতেও কাজ করিয়েছি। জনপ্রতিনিধিরাও আন্তরিক ছিলেন। তবুও রক্ষা করা গেল না শনির হাওরটি। কৃষকরা যাতে ভাতের জন্য কষ্ট না করে এজন্য পরিবার প্রতি ২০ কেজি চাল উপজেলার সাড়ে বারো হাজার কৃষককে দেওয়া হবে।

/বিএল/    

আরও পড়ুন:

‘হাওরে বোরো ধানের ৮৬ শতাংশই নষ্ট হয়েছে’

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা