X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুন্দরবন ভ্রমণে হয়নি পর্যটন নীতিমালা

আবুল হাসান, মংলা
২৪ এপ্রিল ২০১৭, ০৬:০০আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৭, ০৬:০৪

ছবি: সংগৃহীত সুন্দরবন ভ্রমণে দিন দিন মানুষের আগ্রহ বাড়লেও পর্যটন নীতিমালা ও সুষ্ঠু ব্যাবস্থাপনার অভাবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এ খাতের প্রসার ঘটছে না। বরং সুন্দরবনবিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের চরম অব্যবস্থপনা, অনিয়ম ও দর্নীতির ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত।

গত ১৩ বছরের ব্যাবধানে সুন্দরবন ভ্রমণে যেমন পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে সরকারের রাজস্ব আদায়। বনবিভাগের হিসেব মতে, ২০০১-০২ অর্থ বছরে দেশি-বিদেশি মিলে ৫৯ হাজার ১৬৯ জন পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেছে। পর্যটকদের কাছ থেকে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৩৯ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩১৭ জন। সেই হিসেবে রাজস্ব পাওয়া যায় ১ কোটি ৮৩ লাখ ৫১ হাজার ৪০৫ টাকা। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে এই দীর্ঘ সময়ের তুলনায় সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটক সংখ্যা ও রাজস্ব আদায় খুবই অপ্রতুল।

সেভ দ্য সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ড. লায়ন শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবন ভ্রমণে দিন দিন মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।কিন্তু পর্যটন নীতিমালা ও সুষ্ঠ ব্যাবস্থাপনার অভাবে এ খাতের প্রসার ঘটছে না।’

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৮৭৮ খৃষ্টাব্দে সমগ্র সুন্দরবন সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর এক বছর পর বনবিভাগকে সুন্দরবনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়। বন বিভাগ সুন্দরবনের দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৩৭ বছর কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমনে পর্যটন নীতিমালা হয়নি।

যদিও বিভাগীয় বনকর্মর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম দাবি করেছেন, সরকার সুন্দরবন ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে, যা চলতি বছরই পাশ হতে যাচ্ছে।

এদিকে নীতিমালার অভাবে থেমে থাকছে না সুন্দরবন ভ্রমণ। সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়ছে। তবে পর্যটন আইন নীতিমালা না থাকায় এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে সুন্দরবনের ওপর। সেই সঙ্গে দুর্নীতিও বাসা বেঁধেছে দেশের আমলানির্ভর অন্য সব খাতের মতো এ খাতেও।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জুলাই মাস থেকে শুরু হলেও মূলত অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে মার্চ-এপ্রিল সময় পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন ঘটে সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছর এ সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার বিদেশি পর্যটকসহ হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমী সুন্দরবন ভ্রমণ করতে আসেন।

সুন্দরবনে যত বিদেশী পর্যটক আসে তারা প্রায় সবাই সুন্দরবনের অভায়ারণ্য এলাকায় তিন থেকে পাঁচদিনের জন্য ভ্রমণে আসে। অন্যদিকে দেশি পর্যটকদের প্রায় নব্বই শতাংশও অভায়ারণ্য এলাকায় ভ্রমন করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রের কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘সরকারিভাবে পর্যটন নীতিমালা না থাকলেও সুন্দরবন ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটি মৌখিক নীতিমালা কার্যকর আছে। যাতে বলা হয়েছে, একটি জাহজে সাধারণত ৫০ জন পর্যটক সরকার নির্ধারিত রাজস্ব জমা দিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন। ভ্রমণের ক্ষেত্রে একজন বিদেশি পর্যটককে প্রতিদিনের জন্য রাজস্ব দিতে হয় ৭৫০ টাকার সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। আর একজন দেশি পর্যটককে প্রতিদিন ভ্যাটসহ ১৫০ টাকা দিতে হয়। শিক্ষার্থী ও গবেষকদের ক্ষেত্রে ভ্যাটসহ প্রতিদিন ৩০ টাকা।

সুন্দরবনে বেড়াতে আসা বিভিন্ন পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নীতিমালা না থাকায় এটিকে পুঁজি করে বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তারা দুর্নীতির পসরা খুলে বসেছেন। আবাসিক ব্যাবস্থা থাকলেও কোনও কোনও জাহাজে ১৫০ থেকে ৩০০ জনের অধিক পর্যটন বহন করা হয়। সে ক্ষেত্রে এ সব জাহাজের পর্যটকদের ৭০ জনের প্রদেয় রাজস্ব দফতরে জমা হয়। বাকি টাকা সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের কর্মকর্তাদের পকেটে যায়, যা চলছে বছরের পর বছর। কর্মকর্তাদের এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের ফলে কতিপয় পর্যটক ব্যবসায়ীরাও দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে আসছে। ফলে সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব।

এখানেই শেষ নয়, দেখা যায় যে সব ট্যুর স্পট বিদেশি পর্যটকরা মোটা অংকের অর্থ খরচ করে ভ্রমণ করেন, সেই একই স্পটে নামসর্বস্ব ট্যুর অপারেটর কর্তৃপক্ষ ১৫০ জন থেকে ৩০০ জনের অধিক দেশি পর্যটক নিয়ে খুবই কম পয়সায় ভ্রমণ করেন পিকনিক আকারে। যে কারণে ওই এলাকায় হৈ-চৈ হট্টগোল আর বিভন্ন শব্দে যন্ত্রের ব্যবহারে বন্য পরিবেশ বিষিয়ে তোলা হয়। যার বিরু প্রভাব পড়ে পর্যটন খাতে। এ ছাড়া বনের পর্যটন স্থানগুলোতে ওঠা নামার ব্যবস্থা নেই। নেই ভালো অবকাঠামো। পর্যটন মৌসুমে স্পটগুলোতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনায় সয়লাব থাকে। বিশেষ করে পর্যটকদের দেখার জন্য ট্যুর স্পটে বন্যপ্রাণীর সর্বদা বিচরনের কোনও পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেই।

/এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
সর্বাধিক পঠিত
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!