X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

কে এই জীবন আরা?

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
২৫ এপ্রিল ২০১৭, ০৫:৫৯আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০১৭, ০৬:০১

জীবন আরা ইয়াবার চালানসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন কক্সবাজারের জীবন আরা বেগম (৩২)। এ ঘটনায় মামলাও দায়ের হয় তার বিরুদ্ধে। রিমান্ডে নেওয়ার পর আদালতে নেওয়া হলে আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি উল্টো অভিযোগ করেন তার ওপর পুলিশি নির্যাতনের। শুধু তাই নয়, ওসিসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের এবং সংবাদ সম্মেলন করে জীবন আরা এখন পরিণত হয়েছেন ‘টক অব দ্য কক্সবাজার’-এ।

বাংলা ট্রিবিউনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে জীবন আরার ইয়াবা ব্যবসার নানা তথ্য। জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের মেয়ে তিনি। গত ২ মার্চ রাতে ছয় হাজার পিস ইয়াবাসহ জীবন আরা বেগম, তার স্বামী আলী আহমদ, নারায়ণগঞ্জের মুজিবুর রহমান ও নিপা নামের এক নারীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

এ মামলায় একদিনের রিমান্ড শেষে গত ১৩ মার্চ আদালতে পাঠানো হলে ১৪ মার্চ জীবন আরা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ করেন। তার অভিযোগ ছিল, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কক্সবাজার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মানস বড়ুয়া তাকে রিমান্ডে নিয়ে বৈদ্যুতিক শক দেওয়াসহ শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন করেছে। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নারী ডাক্তারের মাধ্যমে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেন। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা পরীক্ষা সম্পন্ন করে ১৫ মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

চিকিৎসকের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামির শরীরে গুরুতর আঘাত, অমানুষিক নির্যাতন বা বৈদ্যুতিক শকের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কোমরের নিচে একটি দাগ থাকলেও তা মারাত্মক নয় এবং অনেক পুরনো। এরপর ২৩ মার্চ জামিনে মুক্তি পান জীবন আরা।

এ ঘটনার পর গত ১১ এপ্রিল কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন, চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার আহমদ, এসআই আবদুর রহিম, এসআই মানস বড়ুয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিশেষ জজ আদালতে পৃথক দুইটি মামলা করেন জীবন আরা। গত ২০ এপ্রিল মামলার শুনানি শেষে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মো. কামরুল আজম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আদালতে গত ১৫ মার্চ ডাক্তারি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। মীমাংসিত বিষয়ে কাগজপত্র গোপন করে ভিন্ন আদালতে একই অভিযোগ করেন জীবন আরা। এটি পুলিশকে হয়রানি করা ছাড়া কিছুই না। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন।’

কক্সবাজার সদর থানার এসআই আবদুর রহিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেডিক্যাল রিপোর্টে ওই নারীর শরীরে কোনও দাগ পাওয়া যায়নি। কিন্তু জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর এসব চিহ্ন আসলো কীভাবে?’

এ বিষয়ে জীবন আরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২০ এপ্রিল আদালতে পৃথক দুইটি অভিযোগ করেছি। এর মধ্যে ২ মার্চ বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনাটি নথিভুক্ত হয়েছে। আর নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে ২৭ এপ্রিল আদালত সিদ্ধান্ত জানাবেন।’

তদন্তকালে নতুন করে কেন মামলা করলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশের তদন্তে প্রতিকার পাবো কিনা সন্দেহ রয়েছে। তাই আদালতে জানিয়েছি।’ ডাক্তারি প্রতিবেদনে শরীরে কোনও চিহ্ন না পাওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানান তিনি।

স্বজনদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই বলে দাবি করে জীবন আরা জানান, জাহাঙ্গীর নামে তার এক দেবর রয়েছে। সে পুলিশের হুমকির প্রেক্ষিতে আত্মগোপনে রয়েছে। পুলিশ পরিকল্পিতভাবে তাকে ইয়াবা মামলায় আদালতে পাঠিয়ে নানাভাবে হয়রানি করছে।

পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মানস বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জীবন আরা ও তার স্বামী আলী আহমদের আত্মীয়-স্বজনদের একটি মাদক সিন্ডিকেট রয়েছে। গত ১৫ মার্চ কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে ৮ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ জীবন আরার ছোট বোন হাসিনা বেগম, হাসিনার স্বামী শাহ আলম ও অপর এক বোনের স্বামী জিয়াউল হককে আটক করে। ওই ইয়াবার চালানের সঙ্গে জীবন আরা ও আলী আহমদের জড়িত থাকার তথ্যও কুমিল্লা পুলিশের কাছে রয়েছে।কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার মামলাটি পুলিশ ব্যাপক তদন্ত করছে।’

টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আবদুল গফ্ফার জানান, মৃত আবদুল আজিজের মেয়ে হাসিনা ও জীবন আরা। আর শাহ আলম ও জিয়াউল হক এ দুইজনের মধ্যে শাহ আলম হলেন হাসিনার স্বামী। আর জিয়াউল হক অপর এক বোনের স্বামী। হাসিনা, শাহ আলম ও জিয়াউল হক ইয়াবাসহ কুমিল্লায় আটকের খবর তিনি শুনেছেন।

সূত্রে জানা গেছে, জীবন আরা তার পাঁচ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয়। বিভিন্ন সময়ে তার কয়েকজনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। সর্বশেষ কক্সবাজার সদরের ঝিংলজা ইউনিয়নের আলী আহমদকে বিয়ে করেন তিনি। আলী আহমদের বিরুদ্ধেও ইয়াবাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া আলী আহমদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম পাঁচলাইশন থানায় গাড়ি ছিনতাই মামলাও হয়েছে।

পুলিশর দাবি, আলী আহমদের ভাই জাহাঙ্গীরও একই চক্রের সদস্য। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

/এসএনএইচ/এআর/এমপি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলি হামলায় হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতার মৃত্যু: যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েলি হামলায় হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতার মৃত্যু: যুক্তরাষ্ট্র
ম্যারেজ কাউন্সেলিং সম্পর্কে যা কিছু জানা জরুরি
ম্যারেজ কাউন্সেলিং সম্পর্কে যা কিছু জানা জরুরি
নিজ বাড়ির সামনে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
নিজ বাড়ির সামনে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
কয়রায় সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া
কয়রায় সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া
সর্বাধিক পঠিত
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই