X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গত মৌসুমে তুলেছি আধাপাকা ধান, এবার নিঃস্ব

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ
২৬ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:১০আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:১৮

হাওরের পানিতে ডুবে গেছে ফসল গত মৌসুমেও আগাম বন্যার কারণে সুনামগঞ্জের কৃষকরা পাকা ধান ঘরে তুলতে পারেননি। আধাপাকা ধানেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাদের। কিন্তু এ বছরের অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল তাদের আধাপাকা ধানও ঘরে তুলতে দেয়নি। সব ধান তলিয়ে নষ্ট হয়েছে হাওরের পানিতে। মৌসুমের একমাত্র ফসল হারিয়ে জেলার প্রায় ৩ লাখ কৃষক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সরকার এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করলেও তা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, ত্রাণের পরিমাণ বাড়ানো না হলে কেউ কেউ ত্রাণ পাবেন, বঞ্চিত হবেন অনেকেই। ক্ষতিগ্রস্ত একজন কৃষকও যেন ত্রাণ সহায়তার বাইরে না থাকেন, সেই দাবিই জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, গত মৌসুমে আধাপাকা ধানে তাদের ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হলেও কম ছিল। কিন্তু এবার কাঁচা ধানই তলিয়ে গেলে সর্বশান্ত হয়েছেন কৃষকরা। পাশাপাশি হাওরে মাছের মড়কের সঙ্গে সঙ্গে হাওরাঞ্চলে হাঁসের মড়ক তাদের আরও দিশেহারা করে তুলেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। ফসলহানির আগে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৯১ হাজার হতদরিদ্র জনগণ ১০ টাকা কেজি মূল্যের চাল পায়। গত ৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয় জেলা ও উপজেলা সদরে খোলাবাজারে ১৫ টাকা দরে চাল ও ১৭ টাকা দরে আটা বিক্রি। উপজেলা পর্যায়ে প্রতিদিন তিনজন ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৩ টন চাল ও ৩ টন আটা খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া দেড় লাখ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে অতি দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। জেলার মোট ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ বিশেষ খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রত্যেকে ৩৮ কেজি চাল ও নগদ ৫০০ টাকা পাবেন।

জেলা মানবিক সহায়তা কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক জনগোষ্ঠী এবং দারিদ্র্যের হার বিবেচনা করে ভিজিএফ বিতরণ করা হবে। নির্ধারিত কমিটি এই কার্ডের তালিকা প্রণয়ন করবে। প্রত্যেক ভিজিএফ কার্ডধারীকে ১২টি শর্তের মধ্যে কমপক্ষে ৪টি শর্ত পূরণ করতে হবে।

সুনামগঞ্জে হওরের পানি বাড়ছেই জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রাপ্ত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা অনুযায়ী, জেলায় মোট ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮২৪ জন কৃষকের ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬১২ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। যার ধানের বাজার মূল্য ১৭শ কোটি টাকা। এ বিশাল ক্ষতির তুলনায় সরকারি সাহায্য কর্মসূচি অপ্রতুল। তাই প্রতিদিন সরকারি খাদ্য সহায়তার চাল আটা কিনতে না পেরে মানুষ খালি হাতে বাড়ি ফেরেন।

দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের সজনপুর গ্রামের কৃষক এনাম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার এলাকায় ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডে কোনও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু হয়নি। বর্তমানে দিরাই উপজেলা সদরে খোলা বাজারে চাল আটা বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু গ্রামর সাধারণ মানুষ ৫ কেজি চাল ও আটার জন্য নৌকা ভাড়া দিয়ে এত দূরে যেতে আগ্রহী নয়। তাই তারা খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে।’

জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাক ইউনিয়নের জামলাবাজ গ্রামের সিদ্দিক মিয়া বলেন, ‘ঋণ করে খেতে কাজ করলাম। এখন ঋণের টাকা পরিশোধ করব কিভাবে আর সংসারের চাল, ডাল কিনব কিভাবে?’

মাছিমপুর গ্রামের আবুল কাসেম জানান, সরকার শহরে খোলাবাজারে চাল আটা বিক্রি করলে কী হবে, গ্রামের মানুষ তো এগুলো পাবে না। তারা টাকা খরচ করে শহর থেকে চাল আটা কিনে আনতে পারবে না। তাই ওয়ার্ড ভিত্তিক খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করার দাবি জানান তিনি।

নাজিমনগর গ্রামের খোরশেদ আলম জানান, গ্রামের মানুষ খুব অভাবের মধ্যদিয়ে দিন কাটাচ্ছে। ফসলহানির ঘটনায় শুধু জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বর্গাচাষি, ধানকাটার শ্রমিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে সরকারি সাহায্যের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। তা না হলে কেউ পাবে কেউ পাবে না এই অবস্থার সৃষ্টি হবে।

বিলে পানি বাড়ায় ধান কাটছেন কৃষকরা ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারমান আব্দুল মোতালিব খান বলেন, ‘আগাম বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধর্মপাশা উপজেলা । এখানে বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী দরিদ্র ও দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন। কৃষিকাজ ও মাছ ধরা ছাড়া বিকল্প আয় রোজগারের কোনও উৎস নেই তাদের । এতো অপ্রতুল সাহায্য দিলে অনেক পরিবারই সরকারি সাহায্যের বাইরে থেকে যাবে।’

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘তাহিরপুর উপজেলা অত্যন্ত সম্পদ সমৃদ্ধ। কিন্তু এ বছরের বন্যায় ধনী-গরীব সব শ্রেণির কৃষক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখানকার হাওরবাসীর প্রধান আয়ের উৎস হলো কৃষি ও মাছ। বছরের ৬ মাস তারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু এ বছর মাছের মড়ক দেখা দেওয়ায় জেলেরা বিপাকে পড়েছেন।’ তাদের জন্য বিশেষ ঋণ সহায়তা কর্মসূচি চালু করার দাবি জানান তিনি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘চলতি মাসের ২৭ তারিখের মধ্যে ভিজিএফ কার্ডধারীদের তালিকা তৈরি করে ২৮ তারিখে বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা কমিটি সভা করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ভিজিএফ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করবে। প্রতিটি কার্ডাধারি চলতি মাসে ৩৮ কেজি চাল ও নগদ ৫০০ টাকা করে পাবে।’

জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সব ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সব স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনও গড়মিল বা অনিয়ম পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি আরও ত্রাণ লাগে তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে জনকল্যাণে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সরকারের কথা হলো— একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না এবং সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এআর/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা