X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

৭ খুনের ৩ বছর: আপিলেও ফাঁসির রায় বহালের আশা স্বজনদের

তানভীর হোসেন, নারায়ণগঞ্জ
২৭ এপ্রিল ২০১৭, ০৬:৩২আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০১৭, ০৭:৫৭

 

সাত খুন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা। তারা বলছেন, ফাঁসির রায় হয়েছে। এখন ওই রায় কার্যকরের অপেক্ষা। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেই তারা স্বস্তি পাবেন।  একই আশাবাদ ব্যক্ত করলেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানও। তিনি বলেন, ‘আশা করি, সুপ্রিম কোর্টের রায়েও বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকবে। তাহলে স্বজন হারানো পরিবারগুলোর পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জবাসীও খুশি হবে।’

চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি এই মামলায় ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ এবং ৯ জনকে সাত থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ৩০ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন এই মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন,  আসামি র‌্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত অধিনায়ক তারেক সাঈদ ও পুলিশের এসআই পুর্নেন্দ্র বালা। 

এর আগে, গত ২২ জানুয়ারি এই মামলার ডেথ রেফারেন্সের কপি হাইকোর্টে পৌঁছে। নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রায়ের কপি, জুডিশিয়াল রেকর্ড ও সিডিসহ বিভিন্ন নথিপত্র হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেন। পরে এই মামলার ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য ২৯ জানুয়ারি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি সাত খুনের পর উপ-নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর গত বছরের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি হেরে যান। সাত খুনের পর থেকেই একের পর হুমকিতেও তিনি পিছপা হননি। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আদালত যাদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছেন, তাদের যেন দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তাহলেই নিহত পরিবারগুলো স্বস্তি পাবে।’

সাত খুনের সময়ে নিহত মনিরুজ্জমান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী নুপুর বেগম ছিলেন সন্তসম্ভবা। ওই হত্যাকাণ্ডের পর তিনি একটি কন্যাসন্তানের জন্মদিন। শিশুটির নাম রাখা হয় ‘রওজা’। বর্তমানে তার বয়স  ২ বছর ১০ মাস। একমাত্র কন্যান সন্তানকে নিয়েই চলছে নুপুর বেগমের সংসার।

সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী মধ্যপাড়া এলাকার শ্বশুর শুক্কুর আলীর বাড়ির নিচ তলায় রওজাকে নিয়ে বসবাস করেন নুপুর বেগম।  বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমি কি জানতাম এ বয়সে বিধবা হব? আমার মেয়ে এখনও বাবাকে খোঁজে। আমি উত্তর দিতে পারি না। বাবার শূন্যস্থান তো আর পূরণ হওয়ার না। ’ তিনি  বলেন, ‘ফাঁসির রায় হয়েছে। যখন ফাঁসি কার্যকর হবে তখন খুশি হব। মনে একটা সান্ত্বনা পাব যে আমার স্বামীর হত্যার বিচার আমি পেয়েছি। এর আগে মনটাও শান্ত হবে না।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য উপস্থাপনের কারণে মামলাটি নিম্ন আদালতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমি আশা  করব, উচ্চ আদালতও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখবেন।’

এদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আশা করি, বিচারিক আদালতে যে রায় হয়েছে, উচ্চ আদালতের ডেথ রেফারেন্সেও সেই রায় বহাল থাকবে। তাহলেই নারায়ণগঞ্জবাসী খুশী হবে।’

নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ তাজুলের ঘটনার পর থেকে ওর মা তাসলিমা খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সংসারের খরচ জোগাড় করে সব সময় ওর মার ওষুধ কিনে দিতে পারি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাজুলের শোকে আমার বাবা-মাও মারা গেছেন। মৃত্যুর আগেও তারা অনেক আফসোস করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের বিচারিক আদালত থেকে যে ফাঁসির রায় দিয়েছেন, তাতে শুধু আমাদের পরিবারের না দেশের মানুষের আশা পূর্ণ হয়েছে। এখন উচ্চ আদালতে এ রায় বহাল থাকবে, এটাই আমার প্রত্যাশা।’ 

সিদ্ধিরগঞ্জের বাগমারা এলাকার নিজ বাড়িতে বসবাস করেন ওই ঘটনায় নিহত সিরাজুল ইসলাম লিটনের ভাই রফিক ও তার পরিবার। লিটনের ভাই রফিক বলেন,  ‘ফাঁসির রায় হয়েছে। তা এখন সারাদেশের মানুষ জানে। আমরাও চাই এ রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকবে। সব আসাসির দ্রুত রায় কার্যকর করা হবে। তাহলে মন থেকে একটু শান্তি পাব যে, আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার আমরা পেয়েছি।’

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ, পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত বাকিরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম। ওই ঘটনায় গত ১৬ জানুয়ারী প্রধান আসামী নূর হোসেন, র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা ও মেজর আরিফ হোসেনসহ ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন। বাকি ৯ জনকে সাত থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা