কয়েক দিনের টানা বর্ষণে নাটোরের বিভিন্ন নদীর পানি ঢুকে পড়ে ধান ক্ষেতে। হাওর অঞ্চলের মতো ফসল হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন চাষিরা। আশার কথা হলো আপাতত বর্ষণ থেমেছে। নদীর পানিও বিপদ সীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। তবে জেলার বন্যা দুর্গত কৃষকদের আতঙ্ক এখনও কাটেনি। পাকা ধান কাটা এবং তা বাড়িতে নিয়ে যেতে দিনমজুররা উচ্চ পারিশ্রমিক চাইছে। এ নিয়েই এখন চিন্তায় কৃষকরা।
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, সম্প্রতি ভারি বর্ষণের কারণে আত্রাই ও গুড় নদীর পানির বিপদ সীমা অতিক্রম করে নদী সংলগ্ন খাল দিয়ে বিলে প্রবেশ করে। তিনটি স্লুইচ গেট থাকার পরও পানি প্রবাহ রোধ করা যায়নি। ফলে চৌগ্রাম ইউনিয়নের সারদাহনাগর এলাকার ৪০-৫০ হেক্টর জমি, পৌর এলাকার পাটকোল এবং ডাহিয়া ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি ও কাওয়া-টিকরী এলাকার ১০ হেক্টর, তাজপুর বিলের ১০-১৫ হেক্টর এবং সাতারদিঘী এলাকার বিলের ১০-১২ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য এলাকার ধানের জমিতে ১-দেড় ফুট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকায় মাইকিংও করা হয়। পরে কৃষকরা আতঙ্কিত হয়ে জমির কাঁচা ধান কাটতে শুরু করেন।
নলডাঙ্গা উপজেলার হালতিবিল এলাকার কৃষক নাছির উদ্দিন ২০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। দিনমজুরদের উচ্চ পারিশ্রমিক কারণে ধান কাটতে সমস্যার পড়েছেন। অন্যান্য বছর যেখানে প্রতি মণ ধানের বিপরীতে দিন মজুরদের ৩-৩.৫ কেজি ধান দিতে হত এবার সেখানে তারা প্রতি মণের বিপরীতে ৬-৭ কেজি ধান চাচ্ছে। আর এটা না হলে দৈনিক ৮০০ টাকা মজুরি দিতে হবে।
সিংড়া উপজেলার দক্ষিণ দমদমা এলাকার কৃষক গোলাম আজম জানান, তার ধান এখন পানির মধ্যে। দিনমজুরদের উচ্চ চাহিদার কারণে তিনি ধান কাটতে বা বাড়িতে আনতে পারছেন না। জমি থেকে নৌকায় করে ধান আনতে হবে। এজন্য প্রতি নৌকাকে প্রতিদিন ১৬০০-২০০০ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ অন্যান্য সময়ে এই ভাড়া মাত্র ৬০০-৭০০ টাকা।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমূল আহসান জানান, আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় কৃষকদের আতঙ্ক কেটে গেছে। তারা কাঁচা ধান কাটা বন্ধ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ডিডি এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এরপর তাকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও তাদের ক্ষতির তালিকা করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া তিনটি স্লুইচ গেট সংস্কার, পাটকোল সেতুর নিচে একটি নতুন স্লুইচ গেট নির্মাণ এবং ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের করে চিঠি পাঠানো হবে।
/এসটি/