বর্ষার আগেই ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার নদের তীরবর্তী মানুষজন। ইতোমধ্যে ভাঙনের শিকার কয়েক'শ পরিবার ঘর-বাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ নদের ভাঙনে প্রায় সর্বশান্ত হয়ে পড়লেও এখনও সরকারি বা বেসরকারি কোনও সহায়তা পায়নি তারা।
উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজিবপুরের মোহনগঞ্জ ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তী কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে। প্রতিদিনই নদের গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘর-বাড়িসহ ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে মোহনগঞ্জ বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও কমিউনিটি ক্লিনিকসহ নানা স্থাপনা। এ অবস্থায় ভাঙনরোধে দ্রুত সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
এদিকে, নদের ভাঙন ঠেকাতে ইউনিয়নবাসী মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালন করলেও তা আমনে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর কেউ অন্যের জমিতে কেউ বা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করলেও মিলছে না কোন সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা। এ অবস্থায় অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটছে পরিবার গুলোর।
অন্যদিকে, ভিটে-মাটিসহ ফসলি জমি হারানোর আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটছে ভাঙনের হুমকিতে থাকা অন্য পরিবারগুলোর।
মোহনগঞ্জ গ্রামের জামাল উদ্দিন জানান, এ পর্যন্ত ৪ বার বাড়ি ভেঙেছি। আবারও ঘর-বাড়ি নদীর কিনারে পড়েছে। দু-একদিনের মধ্যে না সরালে নদের গর্ভে বাড়ি চলে যাবে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই সরকার যেন নদী ভাঙন বন্ধ করার ব্যবস্থা করে।
ভাঙনের শিকার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের জোহরা বেগম জানান, ১০ দিন হয় ভাঙনের মুখে ঘর-বাড়ি সরায় অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। এখনও ঘর তুলতে পারি নাই। টাকা নাই। মেম্বার চেয়ারম্যানরাও কোন সাহায্য দেয় না। আবার তিন বেলা খাবারও যোগার করতে পারছি না।
একই এলাকার ভাঙনের শিকার সোবহান মিয়া বলেন, ভিটে-মাটি, আবাদি জমি সবই নদীতে গেছে। কোথাও ঘর উঠাবো সে জায়গাও নাই। বউ-বাচ্চা নিয়ে বিপদে আছি।
মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আমার ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র ভয়াল রুপ ধারন করেছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে আমি উপজেলা চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসীকে নিয়ে অনেকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করেছি। কোনও কাজ হচ্ছে না। শুধু বলে বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল আলম জানান, ভাঙন ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করলেও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগের। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কুড়িগ্রাম পনি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন চলছে। আমরা এ দুইটি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ এবং প্রায় ২০ কিলোমিটার ড্রেজিংসহ একটি প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছি যেটা প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া মোহনগঞ্জ বাজার এলাকায় ভাঙন রোধে গত বছর কিছু কাজ করেছি। এ বছরও ৩৩০ মিটার কাজের অনুমোদন পেয়েছি। অতিশীঘ্রই সেখানে কাজ শুরু হবে। এছাড়া প্রবল ভাঙন কবলিত এলাকা গুলোতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার জন্য বোর্ডে বরাদ্দ চেয়েছি। বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে।
/এমডিপি/