X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

থামছে না সুন্দরবনের হরিণ শিকার

আবুল হাসান, মংলা
০৫ মে ২০১৭, ০৭:৫৫আপডেট : ০৫ মে ২০১৭, ০৭:৫৫
image

সুন্দরবনের চিত্রল হরিণ (ফাইল ফটো) ‘বাঘের লাফ বিশ হাত, হরিণের লাফ একুশ হাত’। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় এই প্রবাদ বাক্যটি বহুল প্রচলিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো – বাঘের থাবা থেকে রেহাই পেলেও শিকারির ফাঁদ ও গুলি থেকে রেহাই পাচ্ছে না সুন্দরবনের চিত্রল হরিণ। সম্প্রতি সুন্দরবনে হরিণ শিকারের এই চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সুন্দরবনের আশপাশের এলাকাগুলোতে তাই নিয়মিতই বিক্রি হচ্ছে হরিণের মাংস। দিন দিন এই প্রবণতা বাড়ছেই। তবে বন বিভাগের দাবি, শিকারিদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

স্থানীয়রা বলছেন, এক শ্রেণির ভোজনবিলাসী মানুষের কাছে হরিণের মাংসের ব্যাপক কদর রয়েছে। তাছাড়া, কেউ কেউ শৌখিনতার নামে হরিণের চামড়া ও শিং নিজেদের সংগ্রহে রাখতে, বিশেষ করে বাড়ির দেয়ালে টাঙিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। এর জন্য তারা চড়ামূল্য দিতেও দ্বিধাবোধ করেন না। ফলে শিকারিরাও অর্থের লোভে হরিণ শিকারে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

গত বুধবার (৩ মে) ভোরে সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা ও আংটিহারা এলাকা থেকে দু’টি নৌকাসহ ৫১ কেজি হরিণের মাংস ও হরিণ শিকারের ফাঁদ জব্দ করেছে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন (মংলা সদর দফতর)। কোস্টগার্ডের অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার এম ফরিদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হরিণের মাংস ও হরিণ শিকারের ফাঁদ জব্দ করা হলেও এর সঙ্গে জড়িতরা পালিয়ে যায়। তাদের ধরা যায়নি।’ পরে জব্দ করা হরিণের মাংস বন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয় বলেও জানান তিনি। 

৫১ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করা হয়

বনসংলগ্ন এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরিণের মাংস ব্যবসায়ীরা পেশাদার শিকারিদের অগ্রিম দাদন দিয়ে মাংস এনে নানা কৌশলে বিক্রি করছে। স্থানীয় কয়েকটি গ্রামে নিয়মিতই বসছে হরিণের মাংস বেচাকেনার গোপন হাট। এসব হাটে প্রতিকেজি হরিণের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩শ থেকে ৪শ টাকায়। 

মংলার জয়মনি, চিলা, বাঁশতলা, বৌদ্ধমারী, কাটাখালী, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, ধানসাগর, বগি, দাকোপের ঢাংমারী, বানিশান্তা, খাজুরা, সাতক্ষীরা, খুলনার কয়রা, আংটিহারাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোতে সুযোগ বুঝে শিকারিরা অনেক সময় প্রকাশ্যেই হরিণের মাংস বিক্রি করে থাকে।

মংলার জয়মনির স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফাঁদ, বিষ, টোপ, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেও হরিণ শিকার চলছে। কোনও কোনও সময় শিকারি চক্র জেলেদের ছদ্মবেশে বনের গহীনে গিয়ে হরিণ শিকার করে তা গোপনে লোকালয়ে নিয়ে আসে। পরে হরিণের মাংস, চামড়া, শিং কৌশলে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়।’

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সংঘবদ্ধ শিকারি চক্রের লোকালয়ে নির্দিষ্ট এজেন্ট নিয়োজিত রয়েছে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে ৩ থেকে ৪শ’ টাকা কেজি দরে হরিণের মাংস সংগ্রহ করা যায়। অনেক সময় টাকার পরিমাণ বেশি হলে এজেন্টরা সরাসরি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে হরিণের মাংস পৌঁছে দিয়ে আসে।’

খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা চৌধুরী আমির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা হরিণের মাংস বিক্রি বা পাচারের খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গেই তাদের আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।’ তিনি বলেন, ‘বনকর্মীদের কাজের গতি ও বন ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের জন্য সুন্দরবনকে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) আওতায় এনে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এরই মধ্যে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিগগিরই সব রেঞ্জে এই ব্যবস্থা চালু হবে। এর ফলে বনকর্মীদের কাজের গতিবিধি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। শিকারি চক্রের গতিবিধি শনাক্ত করাও সহজ হবে।’

/টিআর/এসএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!