X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

একটি পোস্টার ও ‘জঙ্গি’ মুন্না!

তৌহিদ জামান, যশোর
১৭ মে ২০১৭, ১৮:০২আপডেট : ১৭ মে ২০১৭, ১৮:৪৪

তৌহিদ জামান মায়ের বকা খেয়ে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে যাওয় মুন্না অল্পের জন্য জঙ্গি হওয়া থেকে বেঁচে যান। আর এ জন্য সে মিডিয়ার কাছে কৃতজ্ঞ। বাড়ি ছেড়ে যাওয়া, ফিরে আসা ও মুন্নার কর্মময় জীবন নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনসহ একাধিক সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার ফলে নামের সঙ্গে ‘জঙ্গির’ তকমা লাগতে লাগতেও বেঁচে যান মুন্না।
রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর গোটা দেশ থমকে দাঁড়ায়। সারাদেশে সতর্ক হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যশোরেও পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। সম্ভাব্য জঙ্গিদের পাকড়াও করতে গ্রহণ করে নানা পদক্ষেপ। প্রথম দফায় যশোর পুলিশ প্রশাসন জঙ্গিদের ধরিয়ে দিতে পাঁচজনের নাম-ছবি দিয়ে একটি রঙিন পোস্টার বের করে। সেই পোস্টারে প্রথমে যার নাম ও ছবি ছিল তিনিই কামরুজ্জামান তুহিন ওরফে মুন্না।
২১ জুলাই পোস্টার প্রকাশের পর ২৫ জুলাই ভোরে সস্ত্রীক যশোরে পৌঁছান মুন্না। এ সময় মিডিয়াকর্মীরা তার বাবা চা দোকানি আব্দুস সোবহানের ভাড়া বাসায় হাজির হন। বাসায় পুলিশের বের করা পোস্টারটি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুন্না। তিনি বলতে থাকেন, ‘আমি জঙ্গি নই। কোনও জঙ্গির সঙ্গে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই।’
সাংবাদিকরা খুঁজে বের করেন মুন্নার নিখোঁজ হওয়ার কাহিনী। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ডিগ্রি ভর্তি হয়েছিলেন মুন্না। অসচ্ছল পরিবার লেখাপড়ার খরচ মেটাতে না পারায় টিউশনি এবং পরের চায়ের দোকানে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ মেটাতেন তিনি। বাড়ি ফেরার বছর তিনেক আগে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলা নিয়ে তিনি জুয়ায় অংশ নেন। বিষয়টি জানতে পেরে মা তাকে বকাঝকার একপর্যায়ে বলেন ‘দূর হয়ে যা, তোর মুখ আর দেখতে চাই না।’ অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে ঢাকা চলে যান মুন্না। বাড়ির সঙ্গে সব যোগাযোগ ছিন্ন করেন।
ঢাকায় তিনি বছর দুয়েক কাজ করেন ইসলামবাগে একটি প্লাস্টিক কারখানায়। পরে জিঞ্জিরা খেজুরবাগ এলাকায় ডেকোরেটরের দোকানে কাজ নেন। সেখানে আলাপ হয় ইয়াসমিন আক্তারের সঙ্গে। আলাপ থেকে প্রেম। বিয়ের জন্যে মেয়েপক্ষ তার অভিভাবকদের কাউকে আনার কথা বলায় মুন্না বাড়িতে ফোন করেন। এরপর তার বাবা ঢাকায় গেলে মুন্নার সঙ্গে ইয়াসমিনের আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়। তার পরই ২৫ জুলাই ভোরে বাবা, স্ত্রী, শ্যালিকা ও নানি শাশুড়িকে নিয়ে যশোরে পৌঁছান মুন্না।
শহরের শঙ্করপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার মুরাদ হাজির বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে সপরিবারে বসবাস করে মুন্নার পরিবার। তারা শরীয়তপুরের মানুষ। বাবার কর্মসূত্রে যশোর আগমন। শারীরিক সমস্যার কারণে ভারি কাজ করতে পারেন না। তাই এলাকায় একটি চায়ের দোকান দিয়েছেন। চার ছেলেমেয়ের জনক সোবহান। মেয়ে দুটিকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলে আবদুল আহাদ যশোর এমএম কলেজে বিএ পড়ে। কোচিং চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ যোগায় সে। বড় ছেলে ‘নিখোঁজ’ তালিকা থেকে যে প্রায় জঙ্গি হয়ে যাচ্ছিল, সেটা জেনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলো পুরো পরিবার।
জঙ্গি সম্পৃক্ততা না পেয়ে পুলিশি রিপোর্টের ভিত্তিতে পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন মুন্না। এখন বাবার চায়ের দোকানে সহযোগিতার পাশাপাশি দুই ভাই মিলে কোচিং সেন্টারও চালাচ্ছেন। ভালো আছেন তারা।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মীনা বাজার এখন মিরপুর-১২ নম্বরে
মীনা বাজার এখন মিরপুর-১২ নম্বরে
কুবিতে উপাচার্য-ট্রেজারার-প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ৩ দফতরে তালা
কুবিতে উপাচার্য-ট্রেজারার-প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ৩ দফতরে তালা
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা