X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাংবাদিকের অভিজ্ঞতায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান

বিপুল সরকার সানি, দিনাজপুর
১৭ মে ২০১৭, ১৮:৫৫আপডেট : ১৭ মে ২০১৭, ১৯:০৬

বিপুল সরকার সানি এখন পর্যন্ত দেশে যেসব জঙ্গি সদস্য আটক হয়েছে বা আত্মঘাতী বোমা হামলা কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অভিযানে নিহত হয়েছে, তাদের অধিকাংশের বাড়িই দিনাজপুরে। চলতি বছরের মার্চ মাসের ২৯ তারিখে মৌলভীবাজার জেলার নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে সাতজনের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে। সাংবাদিকতার কারণে অনেকবারই যাওয়া হয়েছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে। তবে কখনোই মনে হয়নি এই উপজেলায় এত জঙ্গি সদস্যের জন্ম হয়েছে। শুধু ঘোড়াঘাটে নয়, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও চিরিরবন্দরও অনেক জঙ্গির জন্মস্থান। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানের পর পুলিশ প্রত্যেকটিতে দাবি করেছে, জঙ্গি সদস্যদের বিষয়ে অনেক আগেই তথ্য ছিল। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, তথ্য থাকার পরও কেন আগেই তাদের আটক করতে পারেনি পুলিশ? এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমরা সংবাদকর্মীরা গিয়েছি সেসব এলাকায়। সেখানে দেখেছি জঙ্গিবাদের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের কতখানি ঘৃণা করে এলাবাবাসী। এলাকার কেউই চায় না জঙ্গিদের কারও লাশ দাফন করা হোক তাদের গ্রামে। শুধু এলাকার লোকজনই নয়, এমনকি নিহত জঙ্গির পরিবারের সদস্যরাও তাদের লাশ দাফনে অস্বীকৃতি জানায়।
সর্বশেষ আমরা গিয়েছিলাম মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে নিহত জঙ্গি সদস্য লোকমান আলীর বাড়িতে। ওই বোমা বিস্ফোরণে তিনিসহ মারা গিয়েছিলো তার স্ত্রী ও ৫ মেয়ে। লোকমানের বাড়ি ঘোড়াঘাটের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে কান্নার রোল থাকলেও পরিবারের সদস্যদের সাফ কথা, জঙ্গির লাশ তারা নেবেন না। পরের দিন তারা মৌলভীবাজারে গিয়েছিলেন তবে লাশ গ্রহণ করেননি।
এর আগে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকার কল্যাণপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় জঙ্গি সদস্য আব্দুল্লাহ। তার বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ভল্লবপুর গ্রামে। সেখানে গিয়েছিলাম সংবাদ সংগ্রহ করতে। আব্দুল্লাহর মা মোসলেমা বেগম সংবাদকর্মীদের সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘যে সন্তান ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ খুন করতে পারে তার লাশ দাফন তো দূরের কথা, এমন সন্তানের মুখ পর্যন্ত দেখতে চান না তিনি।’
দিনাজপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান একই মাসে শোলাকিয়ায় হামলাকারী আটক জেএমবি সদস্য শফিউলের বাড়িতেও যাই সংবাদের প্রয়োজনে। তার বাড়িও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে। সে ঘোড়াঘাট উপজেলার মারুপাড়া গ্রামের আব্দুল হাইয়ের পুত্র। গত ২ মার্চ ঢাকায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অভিযানে আটক নব্য জেএমবি’র নেতা মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুরও একসময়ে চাকরি করতেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার অকড়াবাড়ি হামিদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায়।
সাম্প্রতিক সময়ে জেএমবি’র উত্থানের ঘটনার পরপরই দিনাজপুরে বেশ কিছু সফল অভিযান পরিচালনা করেছে র্যা ব, ডিবি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে অনেক জেএমবি সদস্যকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ১১ এপ্রিল ও ১২ এপ্রিল নব্য জেএমবি’র উপদেষ্টা রিয়াজুল ইসলামসহ তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়।
এছাড়া, ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর জেএমবি সদস্যদের গুলিতে আহত হন ইতালীয় নাগরিক ও ধর্মযাজক ডা. পিয়েরো পারোলারি। ইতালীয় নাগরিককে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর গত ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে সনাতন ধর্মালম্বীদের ইসকন মন্দির কমিটির সভাপতি ডা. বীরেন্দ্রনাথ রায়কে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এর মাত্র ৪ দিনের মাথায় ৪ ডিসেম্বর রাতে কান্তজিউ মন্দিরের রাস মেলায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। এই ঘটনার সপ্তাহ না পেরুতেই গত ১০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার ডাবোর ইউনিয়নের জয়নন্দবাজারের পাশে ডহচি জগন্নাথ মন্দির ও ইসকন মন্দিরে ধর্মসভা চলাকালীন ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির ঘটনা ঘটে। এতে দু’জন আহত হয়। পরে এলাকাবাসী ধাওয়া দিয়ে শরিফুল ইসলাম ও মোসাব্বিরুল হক নামে ২ জেএমবি সদস্যকে আটক করে।
দিনাজপুর জেলায় জেএমবির নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ২০০১ সাল থেকে। ওই বছরের ২০ মে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায় ২৫টি পেট্রোল বোমা, কাগজপত্রসহ আট সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টায় দিনাজপুর জেলার কালুরমোড় ছোটগুড়গোলায় একটি ছাত্রাবাসে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থল থেকে জেএমবির তিন সক্রিয় সদস্যকে আহত অবস্থায় আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে অনেক জেএমবি সদস্য। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি বিষয়ে আগের চেয়ে অনেক তৎপর।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়