X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই ভেঙে পড়েছে সোনাহাট স্থলবন্দরের সীমানা প্রাচীর

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
২২ মে ২০১৭, ০৬:২৮আপডেট : ২২ মে ২০১৭, ০৮:০৬

সোনাহাট স্থলবন্দরের নির্মাণাধীন সীমানা প্রাচীরের ধসে পড়া অংশ কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় সোনাহাট স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্মাণ কাজে নিম্নমানের জিনিসপত্র ব্যবহার করায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের ৩০ দিনের মাথায় প্রায় ২শ ফিট দেয়াল সম্পূর্ণরুপে ভেঙে পড়েছে। গত ১৮ মে বিকালে সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ায় স্থানীয় জন সাধারণের মধ্যে এই অবকাঠামো নির্মাণ কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়নাধীন প্রায় মোট ১৪ দশমিক ৬৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে মাটি ভরাটসহ অবকাঠামো নির্মাণ, শেটঘর, ওয়েট স্কেল, ড্রেন নির্মাণ ও সীমানা প্রাচীরসহ অন্যান্য সব কাজের মোট ব্যায় বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। কিন্তু ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়া সব কাজের গুণগত মান নিয়ে এলাকাবাসী ও স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

আরও জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাটি ভরাট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ অনিক ট্রেডিং করপোরেশন মোহম্মদপুর ঢাকার লাইসেন্সে কাজ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সরকার রকীব আহম্মেদ জুয়েল ও আব্দুর রাজ্জাক। সীমানা প্রাচীর নির্মাণের ৩০ দিনের মাথায় প্রায় ২শ ফিট দেয়াল ভেঙে পড়েছে। মাটি থেকে ১৫ ফিট উচ্চতার ওয়াল ভেঙে স্থানীয় কৃষক দেল মোহাম্মদ ও আব্দুল লোকমানের ধান ক্ষেতের ওপর পড়ে। সীমানা প্রাচীর ভেঙে যাওয়ার পর সাব ঠিকাদার ইট, বালু ও নির্মাণ সামগ্রী সরানোর কাজ করছে।

স্থানীয়রা জানান, সীমানা প্রাচীরের ফাউন্ডেশন মাত্র ২ ফিট করে দেওয়া হয়েছে এবং নির্মাণ কাজে প্রথম শ্রেণির ইট ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহার করা হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির ইট।

এছাড়া অবকাঠামো নির্মাণে খোয়া পিক ও প্রথম শ্রেণির ইটের হওয়ার কথা থাকলেও খোয়া তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির ইট ও ইটভাটার টুকরো রাবিশ । এগুলো সরবরাহ করেছেন ইট ভাটা মালিক আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা জামাল।

এছাড়াও কাজে সিমেন্ট কম দিয়ে নিম্নমানের বালু ও ভিটি বালু ব্যবহার করে কাজ করা হয়েছে। মাটি ভরাটের কাজ ভিটি বালু দিয়ে করার কথা থাকলেও এটেল মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মজিদ, নছের আলী, রফিকুল ইসলাম, মিজু আহমেদ, জহুরুল হক ও মফিজুল ইসলাম জানান, ব্যাপক অনিয়মের মধ্যদিয়ে কাজ সম্পন্ন হতে থাকলেও ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।

সোনাহাট স্থল বন্দরের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো তমিজউদ্দিন জানান, প্রায় ২শ ফিট সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়েছে। প্রায় ৪৩ কোটি টাকার কাজের ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সব কাজই নিম্নমানের। কাজের মান নিয়ে কেউ কোওন প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই ভেঙে পড়েছে সোনাহাট স্থলবন্দরের সীমানা প্রাচীর

সোনাহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আপনি কোনও কিছু লিখলে সাব ঠিকাদার সরকার রকীব আহমেদ জুয়েল ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন।

স্থলবন্দর নির্মাণ কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী রুবেল আহমেদ জানান, তিনি সীমানা প্রাচীর ও মাটি ভরাট কাজের ব্যায় বরাদ্দ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তিনি প্রাচীর ভাঙার বিষয়ে সাব ঠিকাদার জুয়েলের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অনিক ট্রেডিং করপোরশনের প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দেয়াল ধসে পরার বিষয়টি জেনেছি। তিনি এ সম্পর্কে আর কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও বর্গাচাষি দেল মোহাম্মদ ও আব্দুল লোকমান মিয়া জানান, তাদের পাকা ধান ক্ষেতের ওপর দেয়াল ভেঙে পড়েছে। তারা ঠিকাদারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

এ ব্যাপারে সাব ঠিকাদার সরকার রকীব আহমেদ জুয়েল বলেন, ‘নির্মাণ ব্যায়সহ সবকিছুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অনিক ট্রেডিং করপোরেশন জানেন। আমি শুধুমাত্র মাটিসহ মালামাল সরবরাহ করি।’

উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর দেশের উত্তরের সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট নামক স্থানে সোনাহাট স্থলবন্দরের অবকাঠামোসহ উন্নয়ন কাজ শুরু করে সরকার। কাজের উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

কিন্তু উন্নয়ন কর্মকান্ডের শুরুতেই নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। নির্মাণ কাজে নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহারের অভিযোগ তোলে এলাকাবাসী। আর এর সত্যতা মেলে গত ১৮ মে স্থলবন্দর এলাকায় সীমানা দেওয়াল ভেঙে পড়লে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বন্দর উন্নয়নের নামে এখানে লুটপাট শুরু হয়েছে। নিম্নমানের বালু আর নামমাত্র সিমেন্ট-রড দিয়ে দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। যার ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেয়াল ভেঙে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৫ অক্টোবর দেশের ১৫তম স্থলবন্দর হিসেবে সোনাহাট স্থলবন্দরের গেজেট প্রকাশ করে সরকার। স্থলবন্দরের জন্য ভূমি উন্নয়ন, সীমানা দেয়াল, স্থলবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অফিস ভবন, ওয়্যার হাউস, কাস্টমস ওয়্যার হাউস, অভ্যন্তরীণ সড়ক, ওপেন ইয়ার্ড, ওয়াচ টাওয়ার, দুটি ওজন সেতু, ডরমেটরি ভবন নির্মিত হবে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে স্থলবন্দরের কাজ শেষ হয়ে বন্দরের কার্যক্রম শুরু হতে সময় লাগবে আনুমানিক দু বছর।

/এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
ন্যাটোর কোনও দেশ আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার: পুতিন
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’