X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

জ্যৈষ্ঠের খরতাপে প্রাণ ওষ্ঠাগত

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
২৪ মে ২০১৭, ১০:৫৫আপডেট : ২৪ মে ২০১৭, ১০:৫৭

জ্যৈষ্ঠের খরতাপে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রখর রোদে পুড়ছে পথ-ঘাট, বাতাসে ঝড়ছে আগুনের ফুলকি। জ্যৈষ্ঠের খরতাপে বিষিয়ে উঠছে জনজীবন। ঘরে বসেও রেহাই মিলছে না এই গরমে। লোডশেডিং আর ভ্যাপসা গরমে সেখানে বেসামাল স্বাভাবিক জীবন-যাপন। গত কয়েকদিন এমন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন চট্টগ্রামবাসী। প্রচণ্ড গরমে এখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত।





অতিরিক্ত এ গরমে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নগরীর খেটে খাওয়া মানুষ। গরমে অন্যরা বাইরে না বের হলেও জীবিকার তাগিদে কাঠফাটা রোদে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে অসহনীয় গরমের সঙ্গে বাড়ছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ।
মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। যারা বের হচ্ছে তারা প্রয়োজন সেরে দ্রুত বাসায় ফিরছেন। নিম্ন আয়ের মানুষদেরকেই সড়কে কাজ কর্মে ব্যস্ত দেখা গেছে।
নগরীর কাজির দেউরি এলাকায় ঠেলাগাড়ি চালান আব্দুর রহিম। ওই এলাকায় তার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, গরমে ঘরে-বাইরে কোথাও শান্তি নেই। বাইরে প্রচণ্ড রোদ। রাতে বাসায় গিয়ে একটু শান্তিতে ঘুমাবো তারও উপায় নেই। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে জীবন শেষ।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি। এ ধরনের তাপমাত্রা আরও ৭/৮ দিন বিরাজ করবে।’
এদিকে অসহনীয় গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিশু কিশোরসহ অসংখ্য নগরবাসী। শিশুরা সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অহরহ।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাত্রাতিরিক্ত গরমে শিশু বিভাগের রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, ‘গরমের কারণে শিশুদের মধ্যে ভাইরাস জ্বর ও নিউমোনিয়া প্রকোপ বেড়েছে। ঘাম থেকে ঠাণ্ডা লেগে অধিকাংশ শিশুরা নিউমোনিয়ায় ভুগছে। হিটস্ট্রোকে অনেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গরমে অতিরিক্ত পানি শূন্যতা দেখা দেয়। তাই এসময় প্রচুর পরিমাণ পানি ও খাবার স্যালাইন খেতে হবে। পচা বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।’ শিশুদের বেশি করে নিরাপদ পানি পান করানো এবং নবজাতকদের ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে মাত্রাতিরিক্ত তাপদাহের সঙ্গে চট্টগ্রামে বেড়েছে লোডশেডিংও। বিদ্যুতের বারবার আসা যাওয়ায় বিষিয়ে উঠছে জনজীবন। গ্রীষ্মের শুরুতে লোডশেডিং শুরু হয়ে দিন দিন এর মাত্রা বাড়ছে। গত কয়েকদিনে গড়ে ১০ থেকে ১৫ বার বিদ্যুত আসা যাওয়া করছে। সন্ধ্যার পরেও পাওয়া যাচ্ছে না নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ। এতে অধিকাংশ সময় আবাসিক বাসাবাড়ি অন্ধকারে ডুবে থাকছে। পড়াশুনা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
লোডশেডিংয়ে ফ্রিজ ব্যবহারকারী দোকানিরাও পড়েছেন জটিলতায়। ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা লোকসানে পড়ছেন। এছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে নগরীর ছোট থেকে মাঝারি ধরনের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নগরীর লালখান বাজার এলাকার বনফুল শো রুমের বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, ‘গত কয়েকদিনে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে আমাদের অনেক মিষ্টি ও দধি নষ্ট হয়ে গেছে। বিদ্যুতের আসা যাওয়ায় ফ্রিজে কিছু রেখেও কোনও লাভ হচ্ছে না।’
তবে পিডিবির কর্মকর্তাদের দাবি, এখানে লোডশেডিং নেই। চট্টগ্রামে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে টেকনিক্যাল কারণে। অতিরিক্ত গরম পড়ায় এর প্রভাব একটু বেড়েছে।
পিডিবি চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে লাইনের ত্রুটির কারণে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মুখে পড়েন। তাতে হয়তো গ্রাহকরা আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পান না। আর এখন মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিভ্রাট ঘটছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে লাইনগুলো অতিরিক্ত চাপ নিতে পারছে না। এ কারণে এখন ঘণ ঘণ বিদ্যুৎ যাচ্ছে আসছে। অতিরিক্ত চাপে লাইন নষ্ট হওয়ার কারণেও কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সোমবার (২২ মে) চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯০০ থেকে ৯৫০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে চট্টগ্রামের কেন্দ্রগুলো থেকে (সরকারি-বেসরকারি) পাওয়া গেছে ৬০০ থেকে ৬২০ মেগাওয়াট। আরও ২০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। এ দিন চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল ৫০ মেগাওয়াট।
পিডিবি সিনিয়র সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সোমবার চট্টগ্রামে ৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল, বাকিটা ছিল বিদ্যুৎ বিভ্রাট। অতিরিক্ত গরমের কারণেই এ বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার এই সমস্যা আর থাকবে না।’
/এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ওসির বিরুদ্ধে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
ওসির বিরুদ্ধে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা