X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গাছ চুরি থামছেই না

সাইফুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
২৫ মে ২০১৭, ১৫:২৫আপডেট : ২৫ মে ২০১৭, ১৫:২৫

লাউয়াছড়া মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ চুরি থামছেই না। সংঘবদ্ধ চোরচক্র উদ্যানের মূল্যবান গাছ কেটে নেওয়ার ফলে আবাস হারিয়ে ও যানবাহনের নিচে পড়ে প্রায়ই মারা যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। তারওপর উদ্যানের ভূমি দখলে নিয়ে অনেকে লেবু ও হলুদের চাষ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, গত ১৮ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত জানকিছড়া থেকে ৪টি সেগুনগাছ চুরি হয়েছে। ২০ মে ফুলবাড়ী ফরেস্ট অফিস থেকে এক হাজার গজ দূরে বন ভেতর থেকে একটি ছাতিয়ান গাছ কেটে নেয় চোরচক্র।

বন্যপ্রাণী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লাউয়াছড়া উদ্যানে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ১৭ প্রজাতির পোকামাকড় রয়েছে। ২০০৬ সালে লাউয়াছড়ায় ৬৯টি উল্লুক ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় এ উদ্যানে প্রচুর সেগুন, লোহাকাঠ, চাপালিশ, জারুল, নাগেশ্বর, কদম, বট, পাকুড়, ডুমুর, বহেরা, আমলকী, হরীতকী, গর্জন, ছাতিয়ান, শিমুল, আম, কাঁঠাল প্রভৃতি গাছ ছিল। কিন্তু চোরচক্র গাছ কেটে বন উজাড় করছে। বিশেষ করে ফলদ গাছগাছালি কমতে থাকায় অনেক পশুপাখি এ বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে এসে শিকারিদের হাতে ধরা পড়ে। ট্রেনে কাটা পড়ে ও সড়ক দুর্ঘটনায় এক বছরে উদ্যানের প্রায় ২৫ টি হরিণ এবং ৮০টি সাধন বানর ও হনুমান মারা গেছে। এছাড়া অনেক কয়েকশ বিভিন্ন প্রজাতি সাপের মৃত্যু হয়েছে। লাউয়াছড়ায় উদ্ধার হওয়া কিছু সেগুন কাঠ

স্থানীয়রা জানান, আগে বিপুলসংখ্যক ডুমুরের গাছ ছিল। ডুমুরগাছে ধনেশ পাখি বসত। এখন ডুমুরগাছ নেই বলে এ বনে ধনেশ পাখি দেখা যায় না। মূল্যবান শ্বেতচন্দনগাছ ছিল। চোরেরা দল সব কেটে নিয়ে গেছে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত আট-নয় মাসে সড়কপথে ও রেলপথে কাটা পড়ে ১০টি মায়া হরিণ মারা গেছে। সাধারণ বানর, হনুমান ও লজ্জাবতী বানর মিলিয়ে কমপক্ষে ২০টি মারা গেছে। অসংখ্য সাপ মারা গেছে। আর বৃষ্টি হলেই ব্যাঙ বের হয়ে ট্রেনে ও সড়কপথে যানবাহনের নিচে পিষ্ট হয়ে মারা যায়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লাউয়াছড়া বসবাসকারী কয়েকজন খাসিয়া জানান, লাউয়াছড়ায় প্রায় ১৫/২০ হাজার সেগুনগাছ ছিল। জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পর ইউএসএইডের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সেগুন, চাপালিশসহ গাছগাছালি গণনা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন বড়জোর ৩০০/৪০০টি সেগুনগাছ আছে।

জাতীয় উদ্যানের ভেতর বসবাসকারী ব্যক্তি মালিকানাধীন ৭০-৮০ একর জমিতে ১০টি লেবুবাগান রয়েছে। এর মধ্যে বেশি লেবুবাগান জানকীছড়া-সংলগ্ন ডলুবাড়ি এলাকায়।

এ ব্যাপারে এসিএফ তবিবুর রহমান বলেন, ‘বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে লেবুবাগান উচ্ছেদ করা হয়েছে। শিগগির উচ্ছেদকৃত খালি জায়গায় প্রয়োজনীয় ফলদ ও বনজ গাছের চারা লাগানো হবে।’ আগে উদ্যান থেকে সেগুনসহ প্রচুরসংখ্যক মূল্যবান গাছ চুরি হলেও এখন তেমন গাছ চুরি হচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘দু-তিনটা চাপালিশও গাছ চুরি হলেও অভিযান পরিচালনা করে কাটা গাছ উদ্ধার করা হয়েছে। গাছ চোররা আল্টিমেটাম দিয়ে গাছ চুরি করে।’

লাউয়াছড়া বনবিটের আওতাভুক্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি মূলত জানকীছড়া ক্যাম্প, লাউয়াছড়া ক্যাম্প ও বাঘমারা ক্যাম্পের সমন্বয়ে পরিচালিত। একজন বিট কর্মকর্তা এবং মাত্র ছয়জন বনপ্রহরী বনভূমি ও বন্য প্রাণী রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। উদ্যানের ভেতরে মাগুরছড়া ও লাউয়াছড়ায় খাসিয়া আর জানকীছড়ার ডলুবাড়ি সীমানা ঘেঁষে টিপুরীদের বাস। এসব মানুষ বনের ভেতর যুগ যুগ ধরে পান চাষাবাদ করে আসছেন।

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাছ চুরি রোধে পাহারা জোরদার করা হয়েছে। আগের চেয়ে গাছ চুরি কিছুটা কমেছে।’

প্রসঙ্গত ১৯১৭ সালে আসাম সরকার কমলগঞ্জের পশ্চিম ভানুগাছের ৩ হাজার ৮৮ একর এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯২৩ ও ১৯২৫ সালে পর্যায়ক্রমে কালাছড়া ও চাউতলী এলাকাকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৪ সালের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়।

/এফএস/

আরও পড়ুন- 
সশস্ত্র ইউনিট চায় দুদক

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা