X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে ডিসির সই জাল করে চারশ’ অস্ত্রের লাইসেন্স!

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
২৭ মে ২০১৭, ০৬:১৫আপডেট : ২৭ মে ২০১৭, ২১:৩৮

রংপুর রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ের জিএম শাখা থেকে জাল কাগজপত্র তৈরি করে প্রায় চারশ অত্যধুনিক অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে। ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে এসব লাইসেন্স দেওয়া হয়। আর এ ঘটনা ফাঁস হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসনে।

এ ঘটনায় জিএম শাখার অফিস সহকারী সামসুল ইসলাম ও পিয়ন পান্নুর নামে দুটি মামলা করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাস। মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, অত্যাধুনিক এসব আগ্নেয়াস্ত্র কেনা হলেও বেশিরভাগ অস্ত্রের হদিস মিলছে না।

এদিকে, মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে গত বৃহস্পতিবার রাতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের বাড়ি তল্লাশী করেছে। এ সময় অফিস সহকারী সামসুল ইসলামের আলমারি থেকে ১১ লাখ নগদ টাকা, পুরাতন স্ট্যাম্প, পুরাতন পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও উদ্ধার করা হয়।

মামলার অভিযোগ অভিযোগে বলা হয়, ঘটনার মূল নায়ক জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী সামসুল ইসলাম লাইসেন্স প্রতি কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা করে প্রায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ঘটনার সঙ্গে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকজন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীসহ প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত রয়েছে।

রংপুর অঞ্চলের দুদকের উপ-পরিচালক মোজাহার আলী সরকার তল্লাশীর বিষয়ে বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত করছে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক জাকারিয়াকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

মামলার কাগজপত্রে দেখা গেছে, ওই দুই কর্মচারী ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত যারা রংপুরে জেলা প্রশাসক ছিলেন, তাদের সই জাল করে ৪ শতাধিক অস্ত্রের ভুয়া লাইসেন্স দিয়েছেন। প্রতিটি অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য তারা ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন।

জাল কাগজের মাধ্যমে দেওয়া লাইসেন্সের মধ্যে রয়েছে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ব্লক-ই এর ৭/১ রোডের বাড়ি নম্বর ২ এর মালিক শেখ গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদের পুত্র শেখ জহুরুল ইসলামকে একটি ৩২ বোর পিস্তল, ইতালিতে তৈরি এফ ৯৯৭৯৯ ডব্লিউ ২৫ রাউন্ড কার্তুজসহ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, যা লাইসেন্স নং-০৪/২০০০। অস্ত্রটি কেনা হয়ে দিনাজপুরের গণেশতলার মেসার্স মাহবুব আর্মস কোং লিমিটেড থেকে। তবে লাইসেন্স নেওয়ার সময় রংপুর মহানগর শালবন এলাকার সোনালী এন্টার প্রাইজের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়।

এছাড়াও রংপুরের বদরগঞ্জের দামোদারপুর এলাকার রাজু আহমদের ছেলে সুমন আলীকে ২০০৬ সালে ১০ রাউন্ড বন্দুকসহ একটি একনলা বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। যার লাইসেন্স নং-০২/২০০৬। ওই অস্ত্রটি কেনা হয় বগুড়া খান মার্কেটের খান আর্মস কোং লিমিটেড থেকে। এই লাইসেন্সটি নবায়ন করা হয় ২০১৫ সালে।

অন্যদিকে রংপুরের তারাগঞ্জের ইকরচালী গ্রামের মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের পুত্র মনোয়ারুল ইসলামকে ২০০৯ সালে একটি একনলা বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। লাইসেন্স নং ০৯/২০০৯। এই তিনটি লাইসেন্সই দেওয়া হয় জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের সই জাল করে। এভাবে চারশ’র বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। এসব লাইসেন্সের বিপরীতে দেওয়া ঠিকনাও ছিল ভুল।  তাছাড়া লাইসেন্স পাওয়ার আগে গোয়েন্দা ও পুলিশের ক্লিয়ারেন্সও জাল ছিল।

দুদক রংপুর অঞ্চলের উপ পরিচালক মোজাহার আলী সরকার জানান, ‘আদালতে আবেদন করে সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে সামসুল ইসলামের বাড়িতে তল্লাশি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। যা এখনই বলা যাচ্ছেনা।’

রংপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ‘বিষয়টি আমরা বিস্মিত হয়েছি। এভাবে পেছনের তারিখ দেখিয়ে সই জাল করে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি আমাদের হতবাক করেছে। আমরা তাদের সাময়িক বরখাস্ত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এরসঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এসএমএ/এসএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ওয়ান্ডারার্স 
রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ওয়ান্ডারার্স 
ঘামে ভেজা ত্বকের যত্নে...
ঘামে ভেজা ত্বকের যত্নে...
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা