X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুপির আলোয় চলে নৈশপ্রহরী সুরুজের ‘সেবা শিক্ষালয়’

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা
২৮ মে ২০১৭, ০৯:০৫আপডেট : ২৮ মে ২০১৭, ১০:১১

কুপির আলোয় ‘সেবা শিক্ষালয়ে’ পাঠদান অনেক দূর পর্যন্ত পড়াশুনার স্বপ্ন ছিলো নৈশপ্রহরী শাহ্ আলম সুরুজের (৫০)। কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে নিজের স্বপ্ন পূরণ না হলেও সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন তিনি। এরপরই গড়ে তোলেন ‘সেবা শিক্ষালয়’ পাঠাগার। যেখানে গত ৯ বছর ধরে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কুপির আলোয় সুবিধাবঞ্চিতদের পড়ানো হয়।  পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠার পর অবশ্য সুরুজের সঙ্গে যুক্ত হন কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণী। এখন ‘সেবা শিক্ষালয়ে’ পড়াশুনার পাশাপাশি  সুবিধাবঞ্চিতের ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়।

২০০৮ সালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজের বারান্দায় চট বিছিয়ে ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানের মাধ্যমে ‘সেবা শিক্ষালয়ে’র যাত্রা শুরু।

সরেজমিনে দেখা যায়, এই পাঠশালায় প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ে পড়ানো হয়। তবে পঞ্চম ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে পড়ানো হয়। শুরু থেকে কখনও কলেজের খোলা মাঠে, কখনও বারান্দায়, আবার কখনও কলেজের ক্লাসরুমে সুবিধাবঞ্চিতদের পাঠদান করানো হয়।

কলেজের বারান্দায় চলছে পাঠদান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঠশালায় নির্দিষ্ট কোনও শিক্ষক নেই। শাহ্ আলম সুরুজ ছাড়াও এখানে ৮ থেকে ১০ জন কলেজ পড়ুয়া স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠদান করেন। বৃহস্পতিবার পাঠদানের পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে গ্রামে গ্রামে বাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারী নির্যাতন, মাদকবিরোধী প্রচারণা চালানো হয়।

আনোয়ার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে এসে পড়াশুনা করতে পেরে অনেক ভালো লাগে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ানো হয়।’

রহিমা খাতুন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শুধু লেখাপড়া নয়, এখানে খেলাধুলা ও শারীরিক কসরতের ব্যবস্থাও রয়েছে। সামাজিক কাজেও আমরা অংশ নিই। এখানে লেখাপড়া করতে পেরে অনেক ভালো লাগে।’

এক শিশু শিক্ষার্থীকে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন নৈশ্য প্রহরী শাহ্ আলম সুরুজ নূর আলম নামে শিক্ষার্থী বলেন, ‘দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে এখানে পড়াশুনা করছি। এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। সেবা শিক্ষালয় না থাকলে পড়াশুনার সুযোগই হতো না।’

স্থানীয় সমাজকর্মী আমিনুল হক বলেন, ‘সুরুজের এই উদ্যোগে মুগ্ধ এলাকাবাসী। তার উদ্যোগে এলাকার পরিবেশই পাল্টে গেছে।’

স্থানীয়রা জানান, আর্থিক সংকটের কারণে শাহ্ আলম সুরুজ এসএসসির পর আর পড়াশুনা করতে পারেননি। এখন ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজে নৈশপ্রহরী হিসেবে চাকরি করেন।

শাহ্ আলম সুরুজ বলেন, ‘আশা ছিল,  নিজে লেখাপড়া শিখে একদিন বড় মানুষ হব। কিন্তু অভাব-অনটনের কারণে সে আশা পূরণ হয়নি। এরপর সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে গড়ে তুলি সেবা শিক্ষালয়।’

ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজের এই বারান্দায় সুবিধাবঞ্চিতদের পাঠদান চলে তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার সামর্থ্যবানদের কাছ থেকে টাকা তুলে পাঠশালার জন্য চক, ডাস্টার, খাতা-কলম কিনি। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই কুপি নিয়ে আসে।’

শাহ্ আলম সুরুজ অভিযোগের সুরে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও স্থানীয় প্রশাসন বা সরকারিভাবে কোনও সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। এ কারণে ‘সেবা শিক্ষালয়’-এর নিজস্ব ভবন ও অবকাঠামো নেই। মেঝেতে বসে লেখাপড়া করতে শিক্ষার্থীদের কষ্ট হয় বলে তারা জানিয়েছে। তাই সরকারি সহায়তা বা শিক্ষানুরাগীদের পৃষ্টপোষকতা পেলে ভবন নির্মাণ করা যেত। এতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা আরও ভালোভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারতো।’

এ ব্যাপারে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, ‘সুরুজের পাঠশালা নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তার উদ্যোগে সরকারিভাবে সহযোগিতার চেষ্টা চলছে।’

/এমএ/এসএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী