X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘মোরা’ মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
২৯ মে ২০১৭, ১৯:২২আপডেট : ২৯ মে ২০১৭, ১৯:২৮

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূলে প্রস্তুতি পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রায় সবগুলো জেলায় সতর্কতামূলক ও প্রস্তুতিসভা হয়েছে। প্রশাসন ও বিভিন্ন সেবা সংস্থাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যে কোনও প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য জেলা প্রশাসন হটলাইন চালু করেছে। মাইকিং করে উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে সতর্ক করা হচ্ছে।    

আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ বার্তা অনুযায়ী, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন  এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরও ঘণীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। মঙ্গলবার (৩০ মে) সকাল নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৯ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কাছের এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর থেকে বলা হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীঢপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরেও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ৮ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

‘মোরা’র প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় জরুরি প্রস্তুতি সভা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। সভায় উপকূলীয় অঞ্চলে মাইকিং করে অন্তত দুলাখ লোককে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কক্সবাজারে ৫৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার, ৮৮টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুর্গতদের জন্য শুকনা খাবারের পাশাপাশি খিচুড়ির ব্যবস্থা রাখা হবে। ঘূর্ণিঝড় মোরা মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই কক্সবাজারের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তীরের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে নৌযানগুলোকে

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। চার লাখ ৪৫ হাজার মানুষ এগুলোতে আশ্রয় নিতে পারবেন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এরইমধ্যে মাইকিং করে উপকূলবর্তী মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার সার্ভিস, সিভিল সার্জন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, রেড ক্রিসেন্ট, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, আনসার-ভিডিপিসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থাকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

সোমবার (২৯ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জরুরি সভার আয়োজন করে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। সভায় জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী সংশ্লিষ্ট সবাইকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকার নির্দেশ দেন। সভায় দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রাম জেলায় ৪৪৪টি ইউনিটে সর্বমোট ৬ হাজার ৬৬৬ জন সেচ্ছাসেবক রয়েছেন। যারা ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতায় মাঠে থাকবেন।

জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘প্রশাসনের লোকদের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালীদের এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করছেন। এছাড়া স্থানীয় মসজিদের মাইকেও মাইকিং করা হচ্ছে।’ তিনি দুর্গতদের যে কোনও প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ০৩১-৬১১৫৪৫ নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় ভোলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ভোলা জেলা প্রশাসক মোহা. সেলিম উদ্দিন জানান, জেলার চরাঞ্চলের মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সোমবার দুপুর থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে সরবরাহের জন্য শুকনো খাবার রেখেছে জেলা প্রশাসন। হাসপাতালগুলোকে অ্যাম্বুলেন্স ও ওষুধ প্রস্তুত রাখাতে বলা হয়েছে। ছোট ছোট নৌযানগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ ভোলার কর্মকর্তা মো. নাসিম জানিয়েছেন, সোমবার বেলা ১২টার পর থেকে ভোলা থেকে সব রুটে লঞ্চ ও স্পিড বোট চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সোমবার (২৯ মে) দুপুরে বরিশাল নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বরিশালের অভ্যন্তরীণ সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোরা’র সম্ভাব্য গতিপথ (ছবি-সংগৃহীত)

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরি সভা করে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলার সব সরকারি  কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলায় ৮৩টি মেডিক্যাল টিম এবং ২৩৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। 

মংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার ওলিউল্লাহ জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরা’র আঘাত থেকে রক্ষা পেতে চট্টগ্রাম নৌঘাটি থেকে ১০টি যুদ্ধ জাহাজ মংলা নৌঘাটিতে এসে পৌঁছেছে। কোস্টগার্ডের দুটি জাহাজ মঙ্গলবার সকালে এসে পৌঁছাবে।

ঘূর্ণিঝড় মোরা’র প্রভাবে চাঁদপুরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ কারণে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভা থেকে চরাঞ্চলের মানুষদের সচেতন করতে মাইকিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নৌ-যানগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চাঁদপুরের জেলা প্রসাশক আব্দুস সবুর মণ্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রাখাসহ মেডিক্যাল টিম গঠন, স্বেচ্ছাসেবক দল, ফায়ার সার্ভিস, শুকনা খাবার, খাবার পানি ও দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সব চেয়ারম্যানদের সতর্ক থাকতে বলেছি।’

নোয়াখালীতে ১০২টি মেডিক্যাল টিম গঠন ও ৩১২ টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে প্রয়োজনে আরও ১০০টি স্কুল-কলেজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ছয় লাখ টাকা ও ২৯৮ মেট্রিক টন চাল মজুদ রাখা হয়েছে।

পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় মোরা মোকাবিলায় ৩৫১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় প্রায় পাঁচ শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার মৎস্য বন্দর আলীপুর ও মহিপুরে আশ্রয় নিয়েছে।

লক্ষ্মীপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু, পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা, ১০২টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আশ্রয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

ঘূর্ণিঝড় মোরায় দেশের মধ্যাঞ্চলের জেলা মাদারীপুরেও ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারে এই ধারণায় বিকেলে মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারে, এই আশঙ্কায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মাদারীপুরে সকাল থেকেই বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বইছে। ইতোমধ্যেই ঝড়ো হাওয়ায় কাঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

/এফএস/ এপিএইচ/

আরও পড়ুন- উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খারকিভে আবাসিক ভবনে রুশ হামলায় আহত ৬
খারকিভে আবাসিক ভবনে রুশ হামলায় আহত ৬
গরমে সুস্থ থাকতে চাইলে মানতে হবে এই ৮ টিপস
গরমে সুস্থ থাকতে চাইলে মানতে হবে এই ৮ টিপস
দুর্নীতি মামলায় এসকে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন
দুর্নীতি মামলায় এসকে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন
পঞ্চগড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ২ জনের
পঞ্চগড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ২ জনের
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা