স্বামী মোসলেম উদ্দিন মারা যাওয়ার পর থেকে পালাক্রমে তিন মাস করে তিন ছেলের বাড়িতে থাকছিলেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নের তেজপাটুলী গ্রামের মরিয়ম নেছা। সম্প্রতি তিন মাস পূর্ণ হওয়ার ২০ দিন আগেই ছোট ছেলে মারফত আলীর বাড়িতে মরিয়ম নেছাকে রেখে যায় মেজো ছেলে মোবারক আলী। মারফতের বাড়িতে তার বৃদ্ধা মাকে থাকতে দেওয়া হয় গোয়াল ঘরে গরুর সঙ্গে। বেড়াহীন ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় গত ২৭ মে মরিয়ম নেছার পায়ের কয়েক জায়গায় শেয়ালে কামড়ে চলে যায়। আহত অবস্থায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রশিদ বলেন, ‘যে গোয়াল ঘরটিতে ওই বৃদ্ধাকে রাখা হয়েছিল সেই ঘরে কোনও বেড়া নেই। গরুতো আছেই। পাশেই আবার রয়েছে একটি ছোট পুকুর। এখানে মানুষ থাকতে পারে না।’
স্থানীয়রা জানান, এলাকার চেয়ারম্যান ময়েজ উদ্দিন তরফদার স্থানীয়ভাবে মরিয়মের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এরপর বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিনের নজরে আসলে তিনি চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেন। জেলা সমাজসেবা অধিদফতর, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বৃদ্ধা মরিয়মকে ২৯ মে রাতে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মরিয়ম নেছার চিকিৎসায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সত্য রঞ্জন সূত্রধর বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘মেডিক্যাল বোর্ডের সব সদস্যই আজ থেকে কাজ শুরু করেছেন। রোগীকে পর্যবেক্ষণ করার পর বেশ কিছু প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা কার্যক্রমও শুরু করা হয়েছে।’
যার বাড়িতে এই ঘটনা ঘটেছে সেই মারফত আলী জানান, তারা তিন ভাই ও দুই বোন। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই তার মা পালাক্রমে তিন মাস করে প্রত্যেক ছেলের বাড়িতে থাকেন। মেজ ভাই মোবারক আলীর বাড়িতে তিন মাস পূর্ণ হওয়ার ২০ দিন আগেই তিনি মাকে তার বাড়িতে রেখে যান। এরই মধ্যে তিনি (মারফত) কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে চলে যান। এ সময় তার স্ত্রী মনোয়ারা মাকে গোয়াল ঘরে গরুর পাশে থাকতে দেয়। ওই ঘরে কোনও বেড়া না থাকায় গত ২৭ মে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় মায়ের পায়ের কয়েক জায়গায় শেয়ালে কামড়ে চলে যায়। মার চিৎকারে আশপাশের মানুষ ছুটে আসে। খবর পেয়ে তিনি কালিহাতি থেকে ছুটে আসলেও অপর দুই ভাই মোখলেছুর রহমান ও মোবারক আলী মাকে দেখতে আসেননি।
মারফত বলেন, ‘আমরা কামলা মানুষ, কাম করে খাই। আমাগোর অবহেলার কারণেই গরুর সঙ্গে গোয়াল ঘরে রাখছি মারে। আমাগো অবহেলায় আইজ মারে শেয়ালে কামড়াইছে। আগে বুঝি নাই, আমরা ভুল করছি, অপরাধ করছি। আমাগোর ভুলের জন্যই মা আইজ কষ্ট পাইতাছে।’
এদিকে মায়ের প্রতি অবহেলার অভিযোগে গত রাতে (৩০ মে) মরিয়মের বড় ছেলে মোখলেছুর রহমানকে পুলিশ আটক করে আদালতে পাঠিয়েছে। ফুলবাড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কবিরুল ইসলাম জানান. ১৫১ ধারায় মোখলেছুর রহমানকে আটকের পর ময়মনসিংহ আদালতে পাঠালে তাকে আদালত জেলহাজতে পাঠান।
এদিকে, শেয়ালে কামড়ানোর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় হাসপাতালে মরিয়মকে দেখার জন্য নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ভিড় করছেন। তার চিকিৎসায় স্থানীয় সংসদ সদস্য নগদ ১০ হাজার, উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। এছাড়া জেলা সমাজসেবা অধিদফতর মরিয়ম নেছার চিকিৎসাসহ সব দায়িত্বই পালন করছেন।
/বিএল/এফএস/
আরও পড়ুন-
‘মোরা’র আঘাতে কক্সবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৫২ হাজার ৫৩৯