X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাটির টানে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে হাওর পাড়ে

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ
১১ জুন ২০১৭, ২০:১১আপডেট : ১১ জুন ২০১৭, ২৩:৩০

ইকবাল হোসেন তালুকদার উন্নত জীবন ও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ৮ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ইকবাল হোসেন তালুকদার। কয়েক মাস যেতে না যেতেই বিদেশের মোহ কেটে যায়। এরই মধ্যে ফসল চাষের সময়ও এসে যায়। মাটির টানে ফিরে আসেন দেশে। শুরু করেন চাষাবাদ। হাওরের বুক চিরে ফোটান সবুজের হাসি।
২০০৯ সালের মাঝামাঝিতে তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের রতনশ্রী গ্রামের কৃষক ইকবাল হোসেন ছেলে-মেয়েদের উন্নত জীবন নিশ্চিতের জন্য চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান সিটিতে। দেশে রেখে যান বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি। তবে মন পড়ে থাকে ফসলের জমিতে। উন্নত দেশের আরাম-আয়েশ ও বিলাসী জীবন ছেড়ে ইকবাল হোসেন নাড়ির টানে ছুটে আসেন দেশে। আর মিশিগানে রয়ে যায় এক ছেলে-দুই মেয়েসহ স্ত্রী। তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে বছরে ২-৩ মাস তিনি মিশিগানে থাকেন।
প্রতিবছর ফসল রোপণের সময় গ্রামে ফিরে আসেন ইকবাল। জমিতে ধানের বীজ বপন থেকে শুরু করে চাষাবাদ, চারা রোপণ, সেচ, সার, কীটনাশক সবই তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে চলে। জমি থেকে ধান কেটে মাড়াই ও গোলায় তোলা পর্যন্ত নিজে উপস্থিত থাকেন। স্থানীয়রাও ইকবাল হোসেনের কাজকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
রতনশ্রী গ্রামের মৃত আফতাব মিয়া তালুকদারের দুই ছেলে ও ছয় মেয়ের মধ্যে ইকবাল দ্বিতীয়। তিনি মাধ্যমিকের গণ্ডী পার হতে পারেননি। শৈশবে বাবা মারা যাওয়ায় পরিবারের হাল ধরেন। পুঁথিগত বিদ্যা আয়ত্ত করতে না পারলেও বাবার কাছ থেকে চাষাবাদের বিদ্যা ভালোভাবেই রপ্ত করেছিলেন।
রতনশ্রী গ্রামের এক পাশে বৌলাই নদী। অন্যপাশে মাটিয়ান হাওর। এ হাওরে কম খরচে বেশি ধান উৎপন্ন হয়। শুরুতে জলমহালের (ফিশারি) ব্যবসায় জড়িত ছিল তাদের পরিবার। পরে তারা কৃষিতে মনোযোগী হন। গড়ে তোলেন ১৮ হাল (২১৬ কেয়ার) জমির কৃষি খামার। প্রতি বছর তারা প্রায় ২ হাজার মণ ধান উৎপাদন করেন।
সস্ত্রীক ইকবাল হোসেন তালুকদার ৫/৬ বার ফসল ডুবির পরও ইকবাল চাষাবাদ ছাড়েননি। প্রকৃতি বিরূপ হলেও তিনি কৃষিতেই অবিচল। চাষাবাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি শ্রমিকের প্রতিটি কাজ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। একইসঙ্গে শ্রমিকের চাহিদা মতো মজুরি দিতেও কোনও দ্বিধা নেই তার। তাই হাওর এলাকায় বোরো চাষাবাদের সময় শ্রমিকের আকাল দেখা গেলেও তিনি অনায়াসে শ্রমিক পেয়ে যান।
ইকবাল হোসেন বলেন, ‘পরিবারের লোকজনের তাগিদে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমেরিকা পাড়ি জমাতে হয়েছিল। কিন্তু আমার মন পড়ে থাকে বাংলাদেশে। সংসারে কোনও কিছুর অভাব নেই। তারপরও বিদেশ যেতে হয়েছে। তাই প্রতিবছর ফসল চাষাবাদের সময় দেশে আসি। সোনালী ফসল গোলায় তুলে আবার সেখানে যাই। প্রতিবছর আমাকে দেড় লাখ টাকা বিমান ভাড়া গুনতে হয়। তাতেও কোনও দুঃখ নেই আমার। যতদিন বেঁচে থাকবো মাটির টানে চাষাবাদে চালিয়ে যাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকার চাষিরা এক ইঞ্চি জায়গাও পতিত রাখে না। অথচ হাওর এলাকায় পতিত জমির অভাব নেই। সুযোগ পেলে পতিত জমি আবাদের একটি প্রকল্প গ্রহণ করবো।’
এলাকার শিক্ষক গোলাম সারোয়ার লিটন বলেন, প্রবাসীরা উন্নত দেশে গেলে আর দেশে ফিরতে চান না। কিন্তু ইকবাল হোসেন হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে প্রতিবছর চাষাবাদের সময় দেশে এসে হাজির হন। বিষয়টি এলাকাবাসী ইতিবাচক ভাবে দেখেন।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ৮ বছর ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাষাবাদ করতে দেশে চলে আসেন। এরকম দৃষ্টান্ত আর কোথাও আছে বলে তার জানা নেই।
/এসটি/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা