'মেয়ের সুখের জন্য জামাইয়ের ঘর সাজাতে ফ্রিজ, ড্রেসিংটেবিল, সোকেস, গয়না, মোবাইল ফোন এমনকি গবাদিপশু পর্যন্ত দিয়েছি। শুধু মোটরসাইকেলের দাবিপূরণ করতে পারিনি। এটাই আমার মেয়ে জীবনের জন্য কাল হলো।’ শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনে নিহত কমলা খাতুনের মা নুরছবি শুক্রবার এসব কথা বলেন।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পল্লীতে সোমবার (১২ জুন) বিকালে এ কমলা নিহত হয়। কমলার পরিবারের দাবি, যৌতুকের দাবিতে তাদের মেয়েকে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করে হত্যা করেছে। যদিও কমলার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখনও কোনও কারণ জানায়নি পুলিশ।
শুক্রবার বাংলা ট্রিবিউনকে কমলার মা বলেন, ‘ঘটনার আগের দিন রবিবার আমি মেয়ের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। কিন্তু পরের দিন খবর পাই আমার মেয়ে মারা গেছে। ওরা নির্যাতন করে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে।’ মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিকালে কমলার লাশের ময়না তদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এরই মধ্যে কমলার ছবি দিয়ে একটি পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ওই পোস্টে বলা হয়েছে, যৌতুকের দাবিতে দুই সন্তানের মা কমলাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত কমলা উপজেলা পোড়াদহ ইউনিয়নের জুলহকের ছেলে কাপড় ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান মানিকের স্ত্রী। একই উপজেলার আমলা ইউনিয়নের বুরাপাড়া গ্রামের সেকেন্দার আলীর মেয়ে। কমলার মৃত্যুর পর তার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি সবাই পলাতক। কিন্তু তার সন্তান দুটি তার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের কাছে রয়েছে।
কমলার বোন চুমকি খাতুনের অভিযোগ, ‘দীর্ঘদিন ধরে যৌতুকের দাবিতে আমার বোনকে শারীরিক নির্যাতন করছে তার স্বামী মানিক। এরই জের ধরে সোমবার দুপুরে কমলার স্বামী, শ্বশুর জুলহক, শাশুড়ি শাহানারাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে আমার বোনকে বাড়ির ছাদে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে কমলা মারা যায়। তারপর সেটাকে আত্মহত্যা বলে চালায়। এ ঘটনার পর কমলার স্বামী মানিক, শশুর জুলহক, শাশুড়ি শাহানারা লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।’
নিহতের মামা কারিম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে। আমরা শনিবার (১৭ জুন) একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছি।’
এ ব্যাপারে স্থানীয় আহাম্মদপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ মাজাহারুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। রিপোর্ট আসলেই তার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আকতারুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় মিরপুর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তবে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না।
/এসটি/