X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘চাইল কেনার টেকা নাই কাপড় কিনুম ক্যামনে’

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ
১৯ জুন ২০১৭, ২০:২৫আপডেট : ১৯ জুন ২০১৭, ২০:২৫

ভিজিএফ এর চাল নিতে নারীদের ভিড় চাইল কেনার টেকা নাই কাপড় কিনুম ক্যামনে? পোলাপাইন ঈদে নতুন জামাকাপড়ের লাইগা বায়না ধরে হেরারে বুঝাইয়া রাখছি। ঈদের দিন ফিরনি সেমাই তো দূরের কথা নুন, চাল, ডাল কেনাই তো দায়- এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের বলদা ও লুবার হাওরের তীরবর্তী পুছনা গ্রামের ফুলবানু (৫০)। আসছে ঈদ তাদের জন্য কোনও খুশির বার্তা বয়ে আনছে না। সীমাহীন অভাব আর অনটনে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। অকাল বন্যায় একমাত্র ফসল হারিয়ে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় চলছে তীব্র অভাব আর অনটন। কোথাও কোনও কাজ নেই। কর্মক্ষম নারী-পুরুষ বেকার দিনযাপন করছেন। দৈনিক আয়-রোজগার না থাকায় প্রতিটা দিন কাটাতে হচ্ছে দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে।  বিগত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির কারণে হু হু করে বেড়ে গেছে মোটা চালের দাম। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবাদির দামও বেড়ে গেছে। গত ২৯ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে জেলার সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জসহ ১১টি উপজেলার ছোট-বড় ১৪২টি হাওরের কাঁচা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সরকারি হিসেবে ১ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। কিন্তু বেসরকারিভাবে ক্ষয়ক্ষতি ২ লাখ হেক্টর ছাড়িয়েছে। ফসলহানির পর কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টিতে হাওরবাসী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একের পর এক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হাওরবাসীর সামনে কোনও স্বপ্ন নেই। আগামী বোরো ফসল ঘরে ওঠার আগ পর্যন্ত তাদের দুর্যোগ আর অভাব অনটন পিছু ছাড়বে না।

‘চাইল কেনার টেকা নাই কাপড় কিনুম ক্যামনে’ বর্তমানে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর জন্য মাত্র দেড় লাখ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে সরকারি খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে সরকার। যা চাহিদার তুলনায় খুবই নগন্য। বেসরকারি পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য কোনও ত্রাণ তৎপরতা নেই। ফলে খুব কষ্টে দিন কাটছে হাওরবাসীর।

পুছনা গ্রামের লাহেলা খাতুন বলেন, তাদের গ্রামে ৭২টি অতি দরিদ্র পরিবারের বসবাস কিন্তু ভিজিএফ এর চাল পায় মাত্র চারটি পরিবার। এতেই বুঝা যায় ত্রাণ কতোটা পর্যাপ্ত।

একই গ্রামের রোজিনা আক্তার বলেন, স্বামী বছরে দুটি কাপড় দেয়। এ বছর ফসল ডুবে যাওয়ায় কাপড় কিনতে পারেননি। তাই জোড়াতালি দেওয়া কাপড় পড়েই কোনও রকম শরীর ঢেকে রেখেছেন।

ষাটোর্ধ্ব তোলা মিয়া বলেন, ‘জীবনে এমন অভাব আর দেখিনি। ভাতের অভাব, কাপড়ের অভাব, টাকার অভাব, কর্মসংস্থানের অভাব। যতদিন যাচ্ছে অভাব আরও প্রকট হচ্ছে।’

শাহানা বেগম বলেন, সরকার ওএমএস এর চাল দেয়। এ চাল কেউ পায়, কেউ পায় না। ডিলার চালের বস্তার মুখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে শতশত অভাবী মানুষ চালের দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। নিমিষেই শেষ হয়ে যায় চাল।

মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার পুত নাই, ক্ষেত নাই, তিনটি ঝি সম্বল। সরকারি কোনও সাহায্য আমার কপালে জোটেনি।’

‘চাইল কেনার টেকা নাই কাপড় কিনুম ক্যামনে’ ত্রাণ ও পুর্নবাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈদের আগে ১১টি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯২৭টি ও ৪টি পৌরসভায় ১৫ হাজার ৪০৪টি ভিজিএফ কার্ডের আওতায় ১ হাজার ৫৯৪ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে। এসব চালের মধ্যে সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৩০১ ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ১৮৩ টন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ৮ ইউনিয়নে ৮ হাজার ৫৫০ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ৮৫ দশমিক ৫০ টন, জগন্নাথপুরের ৮টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৬৩ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ১৮০ দশমিক ৬৩ টন, ছাতকের ১৩ ইউনিয়নে ২৮ হাজার ৭০ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ২৮০ দশমিক ৭০ টন, দিরাইয়ের ৯টি ইউনিয়নের ১৬ হাজার ৪৫৬ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ১৬৪ দশমিক ৫৬ টন, শাল্লার ৪ ইউনিয়নে ৮ হাজার ১০৪ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ৮১ দশমিক ৪০ টন, দোয়ারাবাজারের ৯ ইউনিয়নে ১০ হাজার ৫১৫ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ১০৫ দশমিক ১৫ টন, জামালগঞ্জের ৬ ইউনিয়নের ৭ হাজার ৯৬৬ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ৭৯ দশমিক ৬৬ টন, বিশ্বম্ভরপুরের ৫ ইউনিয়নে ৭ হাজার ৪৪৭ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ৭৪ দশমিক ৪৭ টন ও ধর্মপাশা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১০ হাজার ৩৪৪ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ১০৩ দশমিক ৪৪ টন এবং সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৪ হাজার ৬২১ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ৪৬ দশমিক ২১ টন, ছাতক পৌরসভার ৩ হাজার ৮১ জনের মধ্যে ৪৬ দশমিক ২১টন, জগন্নাথপুর পৌরসভার ৩ হাজার ৮১ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ৩০ দশমিক ৮১ টন ও দিরাই পৌরসভার ৩ হাজার ৮১ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ৩০ দশমিক ৮১ টন চাল বিতরন করা হবে।

বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, সরকার যে সাহায্য করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না। এ সাহায্যের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। তা না হলে হাওরের বিশাল জনগোষ্ঠী খাদ্য নিরাপত্তা পাবে না।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান বলেন, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে সরকারের ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে মোট ১ হাজার ৪৩৯ মেট্রিক টন চাল উপজেলা পর্যায়ে ও চারটি পৌরসভায় ১৫৪ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হবে। এসব চাল ঈদের আগেই বিতরণ করা হবে। এছাড়া ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ঢেউটিন ও নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য বেসরকারি উদ্যোগে সেলাই মেশিন দেওয়া হবে।

/বিএল/  

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একাডেমিক মান উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাস্টার প্ল্যান’
একাডেমিক মান উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাস্টার প্ল্যান’
তীব্র গরমের মধ্যে আগুনে পুড়লো চাঁদপুরের ১৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
তীব্র গরমের মধ্যে আগুনে পুড়লো চাঁদপুরের ১৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
ঘাম কম হবে এই ১০ টিপস মানলে
ঘাম কম হবে এই ১০ টিপস মানলে
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সর্বাধিক পঠিত
সিলিং ফ্যান ও এসি কি একসঙ্গে চালানো যাবে?
সিলিং ফ্যান ও এসি কি একসঙ্গে চালানো যাবে?
টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের
টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস