X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘চাউল কিনতে ট্যাকা শ্যাষ, অন্য খরচ কী দিয়া করি’

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
২১ জুন ২০১৭, ১০:১১আপডেট : ২১ জুন ২০১৭, ১০:১৫

দাম বেড়ে যাওয়ায় একদিনের চাল কিনছেন এক দিনমজুর (ছবি: কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি) কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দূর্গাপুর বাজার এলাকা থেকে রিকশা নিয়ে কুড়িগ্রাম শহরে এসেছেন পঞ্চাশোর্ধ রিকশাচালক আব্দুল হাই। সারাদিন রিকশা চালিয়ে আয় করেছেন ২৩০ টাকা। পাঁচ সদস্যের পরিবারের এক দিনের খাবার জোগাতে তিন কেজি চাল কিনেছেন। কত করে চাল কিনলেন- জানতে চাইলে আব্দুল হাই বলেন, ‘আর কন না বাবা, চাউল কিনতে ট্যাকা শ্যাষ হয়, অন্য খরচ কী দিয়া করি। মাস খানেক থাকি খুব কষ্টে দিন যাবার লাগছে।’  প্রতি কেজি মোটা চাল ৩৮ টাকা কেজি দরে কিনেছেন তিনি।

রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে যে টাকা রোজগার করেন তা দিয়ে চালের পেছনে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে হাঁপিয়ে উঠেছেন আব্দুল হাই। তার মতোই অবস্থা এখন কুড়িগ্রামের অগনিত রিকশাচালকসহ নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের।

সদর উপজেলার পৌর এলাকার ভরসার মোড়ের বাসিন্দা কাছিরন বেওয়া ও পুষ্পমালা। দুজনই নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। চালের দাম নিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। বাংলা ট্রিবিউনকে তারা জানান, নারী বলে মজুরি পান কম। প্রতিদিন চাল কিনতে হয়। এরমধ্যে চালের বাড়তি দামের কারণে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু অতিরিক্ত আয়ের কোনও সুযোগ তাদের নেই। তাই টানাপোড়নে আছেন তারা।

একই অবস্থার কথা জানান, ভোকেশনাল মোড় এলাকার নির্মাণ শ্রমিক ইসমাঈলসহ বেশ কয়েকজন নিম্ন আয়ের মানুষ, যারা দিনমজুরের কাজ করে প্রতিদিন চাল কিনে দিন কাটাচ্ছেন।

কুড়িগ্রামের কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে মোটা ও চিকন চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। হঠাৎ করে চালের দাম কেজি প্রতি প্রকার ভেদে ৮-১২ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। ফলে সাধারণ ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে মোটা চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের লোকজন দৈনিক খাবার জোগার করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্রের দামের ঊর্দ্ধগতির সঙ্গে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

জেলা শহরের পৌর চাল বাজারের বিভিন্ন চালের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মোটা চাল ৩৮ টাকা থেকে ৪৪ টাকা দরে, ইরি-বোরো ২৮ ও ২৯ জাতের মাঝারি চিকন চাল ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকা, মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৪ টাকা এবং বাসমতি জাতের বিভিন্ন প্রকার চিকন চাল ৫৮ টাকা থেকে ৬২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগেও মোটা জাতের চাল প্রতি কেজি ২৮ থেকে ৩০ টাকা ও চিকন চাল প্রতি কেজি ৩৬ থেকে ৪২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

হঠাৎ করে চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ জানাতে পারেননি। তবে তারা মনে করেন, চালের ব্যবসা এখন চলে গেছে অটোরাইচ মিল মালিকদের হাতে। তারা মৌসুমের শুরুতে কৃষকদের কাছে ধান কিনে নিয়ে নিজেদের মজুদে রেখে দেন। ফলে বাজার মূল্যের নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে তাদের হাতে চলে যায়। আর এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী, যারা কৃষক না হলেও মৌসুমের শুরুতে ধান কিনে দাম বাড়ার আশায় তা মজুদ করে রাখে। কুড়িগ্রামে চালের আড়ত (ছবি: কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি)

কুড়িগ্রাম শহরের সবচেয়ে বড় চালের বাজার পৌর চাল বাজারের চাল ব্যবসায়ী আবু হোসেন বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে চালের ব্যবসা করি। কিন্তু এ ধরণের পরিস্থিতি কখনও দেখি নাই। ভরা মৌসুমে চালের দাম বেশি। তবিল (মূলধন) খাওয়া ব্যবসায় পড়ছি।’

এই ব্যবসায়ী বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন, ‘কালো টাকার মালিকরা ধান আর চাল কিনে মজুদ করছে, সেজন্যই দাম বাড়ছে।’

পৌর চাল বাজারের চাল ব্যবসায়ী বায়জীদ রাইস এজেন্সি-র স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও দাম বেশি বলে বিক্রি অনেক কম। গত ১২/১৫ দিন থেকে মোট চালের দাম বস্তা প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে বেড়েছে। আর ইরি-বোরো-২৮ এর দাম বেড়েছে বস্তা প্রতি ১০০/১৫০ টাকা। সারা দিনে ৮/১০ বস্তা চালও বিক্রি করতে পারছি না।’

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে এই চাল ব্যবসায়ী জানান, ‘দাম বাড়ার পেছনে আমাদের চাল ব্যবসায়ীদের কোনও হাত নেই। আমরা মোকাম থেকে যে দামে চাল পাই সে অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করি।’

এদিকে জেলার কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেষ সময়ে ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তারা এবার ধান চাষে লোকসান গুনছেন। 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হোলোখানা ইউনিয়নের কৃষক জুয়েল ও নজরুল জানান, ‘এ বছর অজানা রোগে বেশিরভাগ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে উৎপাদন খরচই ওঠাতে পারিনি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো.মকবুল হোসেন জানান, ‘চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে যা পরিমাণে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন। বাজারে ধান-চালের সরবরাহ অনেক বেশি। এরপরও কেন দাম বেশি সেটা আমার জানা নেই।’

তবে জেলার অভ্যন্তরীণ কোনও কারণে চালের দাম বাড়েনি বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

/বিএল/এফএস/

আরও পড়ুন- 

চাল নিয়ে চালবাজি!
সরকারি গুদামে চাল নেই কেন?

শুল্ক প্রত্যাহারের আশায় চাল খালাস করে বন্দরের ওয়্যার হাউসে!

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক