X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘স্বামীর সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে কেনা জায়গা ছেড়ে কোথায় যাব?’

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
২১ জুন ২০১৭, ১৫:২৫আপডেট : ২১ জুন ২০১৭, ১৬:০২

 

রাঙামাটির ঝুঁকি এলাকা (ছবি- রাঙামাটি প্রতিনিধি)

রাঙমাটিতে গত ১৩ জুন ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসের পরও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে কয়েক হাজার পরিবার। এ নিয়ে শিমুলতলী এলাকার খোদেজা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে থাকার জন্য এই জায়গা টুকু কিনেছেন। এখন এই জায়গা ছেড়ে কোথায় যাবো। মরণ হলে হবে। তাও এখানেই থাকবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেশি বৃষ্টি হলে বসে থাকি। প্রথম দিন আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। সেখানে গাদাগাদি করে থাকা যায় না। জায়গার তুলনায় মানুষ বেশি।’

রাঙামাটিতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীরা(ছবি- রাঙামাটি প্রতিনিধি)

পাহাড় ধসে রাঙামাটি শহরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকগুলোর হলো ভেদভেদী যুব উন্নয়ন এলাকা, ভেদভেদী কিনা মুনি এলাকা, সাপছড়ি, ভেদভেদী পোস্ট অফিস এলাকা, ভেদভেদী মুসলিম পাড়া, ভেদভেদি নতুন পাড়া, শিমুলতলী, বালুখালি, মনঘোর, ভেদভেদি সনাতন পাড়া। এই এলাকাগুলো এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন মাকিং করা হলেও অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চান না।

রাঙামাটির ঝুঁকি এলাকা ২ (ছবি- রাঙামাটি প্রতিনিধি)

এ ব্যাপারে ভেদভেদী মুসলিম পাড়া এলাকার মো. হারুন মিয়া বলেন, ‘আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ, অনেক কষ্টে এই জায়গা কিনেছি। আমার পাশের বাড়ির একজন মাটি চাপায় মারা গেছেন। আমার ঘরেও মাটি পড়েছে। আমরা অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছি। মালামাল নিয়ে কোথায়  যাব? তাই এখানেই থাকতে হবে। বৃষ্টি হলেই ভয় লাগে। এ কারণে সকালে বাসায় থাকি আর রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাই। কিন্তু এভাবে কতদিন থাকবো। বৃষ্টি কমলে বাসা মেরামতের কাজ শুরু করবো’  

ভেদভেদি যুব উন্নয়ন এলাকার ভাগ্যলক্ষি চাকমা বলেন, ‘কি করবো যাওয়ার তো আর জায়গা নেই। দিনে যখন বেশি বৃষ্টি হয় তখন আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাই। আর রাত হলে বসে থাকি। সরকার যদি আমাদের সমতলে পুনর্বাসন করে অবশ্যই সেখানে যাবো। ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখানে থাকতে খুব ভয় লাগে।’

 

ভেদভেদী কিনা মুনি এলাকার সুচনা চাকমা বলেন, ‘আমার বাড়ির নিচের অংশ ভেঙে গেছে। কিন্তু যাওয়ার তো কোনও জায়গা নেই। আশ্রয় কেন্দ্রে কয়দিন থাকা যায়। এখন আবার চোরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। বাড়িতে অনেক জিনিস পত্র আছে। চুরি হয়ে গেলে কি করবো? বৃষ্টি হলে ভয় করে। কিন্তু উপায় নেই। বেশি বৃষ্টি হলে বসে থাকি।’

রাঙামাটির ঝুঁকি এলাকা (ছবি- রাঙামাটি প্রতিনিধি)

পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের প্রধান নির্বাহী হেফাজত উল বারি সবুজ বলেন, ‘পাহাড় যে সংরক্ষণ করতে হবে তা নিয়ে প্রশাসন বা পাহাড়-মালিক কারোই মাথা ব্যাথা নেই। বড় ধরণের কোনও দুর্যোগ হলে ব্যাপক প্রাণহানী ঘটবে। রাঙামাটি এখন ঝুঁকিতে আছে। যারা অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাহাড় ও মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এখনই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও বসতকারীদের তালিকা তৈরি করে নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ‘

রাঙামাটির ঝুঁকি এলাকা ৩ (ছবি- রাঙামাটি প্রতিনিধি)

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস না করার জন্য মাকিং করছি। লোকজনও আসতে শুরু করেছে। কেউ ঝুঁকি নিয়ে থাকছে না। শহরের এলজিইডি ভবনের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পিছনে চারটি পরিবার ছিল, আমরা পুলিশ দিয়ে তাদের সরিয়ে এনেছি। কারণ এলজিইডি অফিসটা ধসে গেলে এরা কেউ বাঁচবে না।

উল্লেখ্য গত ১৩ জুন রাঙমাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় ১১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ১০০ জনের ওপরে আহত হয়েছে।

/জেবি/

আরও পড়তে পারেন: ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মংলা বন্দর

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
রামরুর কর্মশালায় বক্তারাঅভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা