X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মজুদ শেষের পথে, তবু বগুড়ায় নেই খাদ্য সংগ্রহ অভিযান

বগুড়া প্রতিনিধি
২২ জুন ২০১৭, ২১:২৪আপডেট : ২৩ জুন ২০১৭, ০০:১০

আদমদীঘির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গুদাম (ছবি- সংগৃহীত) বগুড়ার আদমদীঘির খাদ্য গুদামগুলোয় মজুদ প্রায় শূন্যের কোঠায়। দেড় লাখ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার সাইলো, সিএসডি ও এলএসডিতে এখন খাদ্য শস্যের মজুদ মাত্র সাত হাজার ৮২৭ মেট্রিক টন। তা সত্ত্বেও এই উপজেলায় খাদ্য সংগ্রহে কোনও অভিযান নেই। এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্রুততম সময়ে খাদ্য সংগ্রহ অভিযান শুরুর দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে দেশের বৃহত্তম খাদ্য সংরক্ষণাগারগুলোর অন্যতম। এখানে ৬০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি ধারণক্ষমতার কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার (সিএসডি), ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার খাদ্য সংরক্ষণাগার সাইলো, ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার দেশের প্রথম মাল্টিস্টোরিড ওয়্যারহাউজ খাদ্য গুদাম, সাড়ে ১০ হাজার মেট্টিক টন ধারণক্ষমতার সান্তাহার লোকাল সাপ্লাই ডিপো (এলএসডি) ছাড়াও আদমদীঘি উপজেলা সদর ও উপজেলার নসরতপুর লোকাল সাপ্লাই ডিপোর (এলএসডি) সাধারণ ধারণক্ষমতা দুই হাজার মেট্রিক টন। সব মিলিয়ে এই উপজেলায় খাদ্য গুদামগুলোর মোট ধারণক্ষমতা এক লাখ সাড়ে ২২ হাজার মেট্রিক টন। এখানে দেড় লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ করা যায়।
জানা গেছে, গত বছর এই সময়ে আদমদীঘির এসব গুদামে সাধারণ মজুদের চেয়েও বেশি খাদ্য ছিল। ফলে গুদাম খালি করে খাদ্য অন্যত্র পাঠিয়ে ইরি-বোরো ধান-চাল সংগ্রহ করতে হয়েছিল। কিন্তু এবারের চিত্র উল্টো। লক্ষাধিক মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহের জায়গা খালি থাকলেও নেই ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান। কৃষক-ব্যবসায়ীরাও সরকারি গুদামে ধান-চাল বিক্রির আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এর পেছনের কারণ ধান-চালের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া।
সিএসডির ব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন সাধারণধারণ ক্ষমতার তিন এলএসডিতে মজুদ আছে এক হাজার ৬০২ মেট্রিক টন খাদ্য।’ অন্যদিকে, সান্তাহার রাইস সাইলোতে মজুদ চালের পরিমাণ মাত্র ৬৩০ মেট্রিক টন এবং সান্তাহার খাদ্য শস্য সাইলোতে (গম সংরক্ষণাগার) সোমবার পর্যন্ত গমের মজুদ চার হাজার ৪০০ মেট্রিক টন বলে জানিয়েছেন ওই দুই প্রতিষ্ঠানের অধিকক্ষ ইলিয়াছ হোসেন।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি এটিএম আমিনুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার কেজিপ্রতি ৩৪ টাকা দরে চাল সংগ্রহ করছে। কিন্তু আমাদের প্রতিকেজি চালের উৎপাদন খরচ ৩৮ টাকা। ফলে সরকারের কাছে চাল বিক্রি করলে কেজিতে ৪ টাকা করে লোকসান গুণতে হবে। কম পুঁজির মিলারদের পক্ষে এ লোকসান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই মিলাররা চুক্তিবদ্ধ হননি।’
মিলাররা চাল বিক্রি না করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাইন উদ্দিন বলেন, ‘সরকারকে খাদ্য সংগ্রহে সহযোগিতা না করায় আগামী চার মৌসুম এক হাজার ২১৭ জন মিলারের কাছে কোনও খাদ্য কেনা হবে না।’ অন্য মিলারদের সঙ্গে চুক্তি হতে দেরি হওয়ায় খাদ্য গুদামগুলোতে মজুদ কমে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, খাদ্য গুদামে মজুদ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ জানাচ্ছেন সচেতন ব্যক্তিরা। সান্তাহারের গণমাধ্যমকর্মী হারেজ উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর এসময় খাদ্য গুদামগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি চাল-গমের মজুদ ছিল। এবার সংগ্রহ অভিযান ঠিকমতো না হওয়ায় গুদামে মজুদ শূন্যের পথে। এমনিতেই এখন বাজারে চালের দাম বেশি। সরকারি গুদামে চাল না থাকলে ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’ একই ধরনের মন্তব্য করেছেন আদমদীঘির ব্যবসায়ী হাফিজার রহমান, এনজিওকর্মী সাগর হোসেন, মিহির সরকার প্রমুখ। তারা এ সংকট নিরসনে অবিলম্বে সরকারের খাদ্য শস্য সংগ্রহ অভিযান জোরদারের অনুরোধ করেছেন।
ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘এবার সংগ্রহ অভিযান সঠিকভাবে পরিচালিত না হওয়ায় খাদ্যের মজুদ অনেক কমে গেছে। চলাচল কর্মসূচি থাকায় যেকোনও সময় এই মজুদ শূন্যে নেমে আসতে পারে।’ এ অবস্থা থেকে উত্তরণে খাদ্য সংগ্রহ অভিযান জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন-

বন্দরনগরী ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ

বিসিক প্রকল্পে দুর্নীতি, পরিচালকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া যুবদলের সেই দুই নেতাকর্মী কারাগারে

/এসএস/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না
বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
খুলনায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা