X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চে ঈদযাত্রা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের!

আনিসুর রহমান স্বপন, বরিশাল
২৩ জুন ২০১৭, ১২:৩৪আপডেট : ২৩ জুন ২০১৭, ১২:৩৬

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল (ছবি: ফোকাস বাংলা)

দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষের বাড়ি ফেরার অন্যতম মাধ্যম নৌপথ। ঈদের সময় এ অঞ্চলের ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় থাকায় লঞ্চের চাহিদাও থাকে অনেক বেশি। বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি ছুটি শুরু হয়ে যাওয়ায় পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নৌপথও। এ সুযোগে এক শ্রেণির লঞ্চ মালিক ঈদ মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ লক্কর-ঝক্কর লঞ্চে রঙ লাগিয়ে নৌপথে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চেই বাড়ি পথে রওনা হচ্ছেন দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা।

জানা গেছে, ঈদ মৌসুমের ২/৩ মাস আগ থেকেই মালিকরা ডকইয়ার্ডগুলোয় লঞ্চের রঙ-কালি ও রিপেয়ারিংয়ের কাজ শুরু করেন। ফলে ইতোমধ্যে লক্কর-ঝক্কর মার্কা লঞ্চ হয়ে উঠেছে চকচকে। দেখে বোঝার উপায় নেই এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। আর বাড়ি ফেরার উত্তেজনা ও তাড়াহুড়ায় সাধারণ যাত্রীরাও চিন্তা না করেই এসব লঞ্চে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঠে পড়েন। তারপরও অন্য সময়ের তুলনায় এসব লঞ্চে ভাড়া গুনতে হয় প্রায় দ্বিগুণ।

বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে ঢাকা-বরিশাল রুটে বৃহস্পতিবার থেকে ১০ থেকে ১২টি লঞ্চে স্পেশাল সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) অনুমোদনক্রমে  বেসরকারি লঞ্চ মালিকরা। এ বিশেষ সার্ভিস যাত্রীদের চাপ অনুযায়ী ঈদের এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

তবে ডাবল ট্রিপের ব্যবস্থা করা হলেও ঈদের সময় যাত্রীদের ভিড়ের তুলনায় লঞ্চের সংখ্যা কম থাকায় ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে নৌযানগুলো চলাচল করে। যাত্রীরা জানান, সাধারণ সময়ে এ রুটে যাত্রী প্রতি ডেকে ১০০, সোফায় ৫০০, কেবিনে ৮০০-৯০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও ঈদের সময় ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে যায়।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে সাইদুর রহমান রিন্টু দাবি করেন, এ রুটের ১৭০ কিলোমিটার নৌপথের জন্যে ঈদের সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করে বছরের বাকি সময়ে আদায় করা কম-ভাড়ার লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই এবং টিকেট কালোবাজারির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এগুলো অপপ্রচার। এ রুটে প্রতি লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ মাত্র সোফা ও কেবিন সিট এবং তা নিয়ে কিছু সংকট হতে পারে। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ ডেক সিটেরতো সিট নং, আগাম টিকেট বা বুকিং দেওয়ার কোন ব্যবস্থাই নেই। সেখানে কালোবাজারি হবে কী করে?’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছরই ঈদকে কেন্দ্র করে লঞ্চ মালিকদের একটি অংশ বেশি লাভের আশায় ফিটনেসবিহীন পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ পরিচালনা করেন। এতে প্রশিক্ষিত ড্রাইভার, মাস্টার, সারেং, সৃকানী, লস্কর, আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধাও থাকে না। ফলে প্রতিকূল আবহাওয়া, বিক্ষুব্ধ নদ-নদী, মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বোঝাই এ সব নৌযানে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয় দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষকে।

এ বিষয়ে মালিক সমিতির নেতা বলেন, ‘লঞ্চের ফিটনেস, লঞ্চ চালনায় প্রশিক্ষিত জনশক্তি ব্যবহার না করা, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই বিষয়গুলো দেখা ও  নিয়ন্ত্রণে বন্দর কর্তৃপক্ষ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নৌযান-শ্রমিক সংগঠন, যাত্রী সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। লঞ্চের ধারণ ক্ষমতা, নিরাপত্তা সামগ্রী ইত্যাদি বিষয় প্রবেশ মুখে প্রকাশ্যে লেখা  থাকে। খোলের গায়ে সংকেত চিহ্ন দেওয়া থাকে। সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নিলে কারও কিছু বলার থাকে না।’

বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য-সচিব ডা. মিজানুর রহমান এ রুটে ফিটনেস বিহীন নৌযান চলাচলের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘এ রুটের এমভি কালাম খান-১ লঞ্চের পরিবর্তে সম্প্রতি সময় চলাচল শুরু করা যাত্রীবাহী এমভি তাসরিফ-১ লঞ্চের সঙ্গে গত ১৩ জুন মাঝরাতে কীর্তনখোলা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকারের সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও লঞ্চের ১২ যাত্রী আহত হয়েছেন। এ সময় লঞ্চের ছয় শতাধিক যাত্রী মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা অভিযোগ করেন,  রাত ৯টার দিকে বরিশাল নৌ-বন্দর ত্যাগ করার আগেই এমভি তাসরিফ-১ লঞ্চের সার্চ লাইট অচল হয়ে যায়। প্রথম থেকেই লঞ্চটি অন্ধকারে দিক হারিয়ে একে বেঁকে চলছিলো। যাত্রীরা সার্চ লাইচ সচল করার জন্য লঞ্চের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফদের বলা সত্বেও লঞ্চটি চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।’

নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, শুধু বুড়িগঙ্গার সাড়ে চার হাজার বিভিন্ন ধরনের লঞ্চের মধ্যে ফিটনেস পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ৭৮২টির। এসব লঞ্চের ৫০ শতাংশের কোনও ধরনের রেজিস্ট্রেশন নেই। এসব কারণে গত ৩০ বছরে নৌ-দুর্ঘটনায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

তবে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা সরকার মিঠু সরকারি সূত্রের পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, ‘গত ৬৬ বছরে দেশে ২ হাজার ১২২টি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ছয় হাজারের মতো যাত্রী নিহত হয়েছেন। মামলা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার। নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১৪১টি মামলা। বাকি মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে রয়েছে।’

তিনি আরও জানান, এরমধ্যে কিছু মামলার কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোরও উল্লেখযোগ্য কোনও শাস্তি হয়নি।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন অবশ্য দাবি করেছেন, পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবছর আর কোনও লক্কর-ঝক্কর মার্কা লঞ্চ নদীতে নামতে দেওয়া হবে না। এজন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর নির্দেশে ঈদের পাঁচদিন আগেই বেশ কয়েকটি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে।

পাশাপাশি যাতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কোনও লঞ্চ চলতে না পারে সেজন্য র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।

তিনি আরও বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এ বছর লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস বাড়ানো হয়েছে। যেসব লঞ্চ যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে রঙ করা হচ্ছে সেগুলোর দিকে আরও বেশি নজর রয়েছে।’

/এফএস/ 

আরও পড়ুন-


ঈদের বাসযাত্রা: দ্বিতীয় দিনে ‘দুই ঘণ্টা লেট’

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নীলফামারীতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারিসহ ৩ জন গ্রেফতার
নীলফামারীতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারিসহ ৩ জন গ্রেফতার
পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি জাতিসংঘে তুলে ধরলো বাংলাদেশ
পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি জাতিসংঘে তুলে ধরলো বাংলাদেশ
বার্সার বিদায়ে কান্সেলোর অনাগত সন্তানের মৃত্যু কামনা করেছেন সমর্থকরা!
বার্সার বিদায়ে কান্সেলোর অনাগত সন্তানের মৃত্যু কামনা করেছেন সমর্থকরা!
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো ২৭ বস্তা টাকা
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো ২৭ বস্তা টাকা
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি