X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

তিস্তার ভাঙনে সর্বস্বান্ত অর্ধশত পরিবার

আরিফুল ইসলাম, তৈয়বখাঁ থেকে ফিরে
২৩ জুন ২০১৭, ২২:০৫আপডেট : ২৩ জুন ২০১৭, ২২:২১

তিস্তার ভাঙনে বিলীন হওয়ার হুমকিতে দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি (ছবি- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি)

তিস্তার ভয়াল রূপ এখন আচড়ে পড়ছে আনন্দ মোহনের বাড়ির আঙ্গিনায়। আতঙ্কিত হয়ে তিনি তার চারটি ঘর ভেঙে খুঁটি, বেড়া ও চাল সরিয়ে নিচ্ছেন অন্যের জায়গায়, যাচ্ছে প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জামও। একই অবস্থা জীবন সায়াহ্নে পৌঁছা বীর মুক্তিযোদ্ধা যুগেন্দ্রনাথ রায়ের। নদী এসে উপস্থিত হয়েছে তার ঘরের দরজায়। স্ত্রী ও কন্যার সহযোগিতায় ঘর ভেঙে সরিয়ে নিতে হচ্ছে অন্যের জমিতে। যুদ্ধ জয় করে দেশ রক্ষা করতে পারলেও তিস্তার ভাঙন থেকে নিজের ভিটে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

কেবল আনন্দ মোহন বা যুগেন্দ্রনাথ রায় নয়; এমন হাল এখন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়বখাঁ গ্রামের সব বাসিন্দাদের। বর্ষার শুরুতেই তিস্তার ভাঙনে ভিটেমাটি ও আবাদি জমিসহ সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ গ্রামের অনেকেই। গত দশ দিনে তিস্তার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়েছে প্রায় অর্ধশত পরিবার। হুমকিতে রয়েছে আরও অন্তত দেড় শতাধিক পরিবার। ঝুঁকির বাইরে নেই এ গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপসনালয় বা কৃষি জমি।

আনন্দ মোহনের অভিযোগ, ‘ভাঙন শুরুর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থা নিলে আমাদের আজ ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হতে হতো না। স্ত্রী-সন্তান ও গবাদি পশু নিয়া এখন কই থাকব, কিছু বুঝতেছি না।'

যুগেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘জীবনের শ্যাষে আসি এমন করি ভিটা হারান লাগবে, কোনদিনও চিন্তা করি দেখি নাই। সরকার ভাঙন ঠেকাইলে হামাক ভিটা ছাড়ি যাওয়া লাগিল না হয়। এলা মানুষের জমিত যায়া ঘর তুলি থাকা লাগবে।'

বসতঘর সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে অন্যত্র (ছবি- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি)

ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া ব্যবস্থা খুব একটা কাজে আসবে বলে মনে করতে পারছেন না এ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গৃহিত ব্যবস্থায় ভাঙন প্রবণতা কিছুটা কমবে, তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়।'

সরেজমিনে তৈয়বখাঁ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার তাণ্ডবে আতঙ্কিত হয়ে ঘরবাড়িসহ নানান স্থাপনার স্থানান্তরযোগ্য মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা। ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ বাড়িঘর সরিয়ে অন্যের জমিতে অস্থায়ীভাবে ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছেন। ভাঙনে বিলীন হয়েছে তৈয়বখাঁ বাজারের প্রায় ২৫টি দোকানসহ বিদ্যানন্দ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও তৈয়বখাঁ বাজার জামে মসজিদ। প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের পাশাপাশি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে তৈয়বখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মন্দির, আবাদি জমিসহ কয়েকশ’ হেক্টর পাট খেত।

ভাঙছে পাড়, বাড়ছে আতঙ্ক তৈয়বখাঁবাসীর (ছবি- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি)

এদিকে, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে পাইলিং করে জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম শুরু করেছে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তৈয়ব খাঁ গ্রামকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে ১০ লাখ টাকার কাজ করার অনুমতি পাওয়া গেছে।'

বাঁশ ও কাঠ দিয়ে চলমান পাইলিং প্রক্রিয়ায় ভাঙন রোধ হবে কি না, জানতে চাইলে এই নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আসলে চলমান ভাঙনে স্রোতের দিক পরিবর্তনের জন্য পাইলিং করে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধ সম্ভব নয়। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের জন্য ওই এলাকায় ব্লক দিয়ে রিভেটমেন্ট ওয়ার্ক করতে হবে। কিন্তু এই ভরা বর্ষায় আপাতত সেটা করা সম্ভব নয়।’

ভাঙন রোধে চলছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাইলিংয়ের কাজ (ছবি- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি)

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, ‘ভাঙনের মূল অংশে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যে অংশে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেখানে ভাঙন প্রবণতা কম। ফলে ভাঙনের কবল থেকে স্থানীয় পরিবারগুলো রক্ষা পাচ্ছে না। এভাবে কাজ করলে শুধু জনগণের টাকাই পানিতে যাবে, ভাঙন রোধ হবে না'

এই ইউপি সদস্য আরও বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে হতদরিদ্র হিন্দু ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এ গ্রাম তিস্তার ভাঙনের শিকার হলেও প্রশাসন থেকে  কার্যকর কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি ভাঙনে ভিটেহারা গ্রামবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনও অর্থ সহায়তাও দেওয়া হয়নি।'

তিস্তার ভাঙনে বিলীন হওয়ার হুমকিতে দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি (ছবি- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি)

এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকসহ আমরা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙন রোধে চলমান কার্যক্রম নিয়ে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে দ্রুততার সাথে কাজ করতে বলেছি। ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, তাদের যথাসাধ্য সাহায্য করা হবে।'

/এমএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল স্বাভা‌বিক
৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল স্বাভা‌বিক
সুইডেনের বিপক্ষে পর্তুগাল দলে জায়গা হয়নি রোনালদোর
সুইডেনের বিপক্ষে পর্তুগাল দলে জায়গা হয়নি রোনালদোর
মিয়ানমারের বিমান হামলায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ মহাসচিব
মিয়ানমারের বিমান হামলায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ মহাসচিব
ইনজুরিতে আর্জেন্টিনার প্রীতি ম্যাচে খেলা হচ্ছে না মেসির  
ইনজুরিতে আর্জেন্টিনার প্রীতি ম্যাচে খেলা হচ্ছে না মেসির  
সর্বাধিক পঠিত
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই