X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে দাঁড়িয়েছে মংলা বন্দর

আবুল হাসান, মংলা
৩০ জুন ২০১৭, ০৮:১২আপডেট : ৩০ জুন ২০১৭, ০৮:৩০

মংলা বন্দরে এখন পণ্য খালাস হয় দ্রুতগতিতে অবকাঠামোগত সমস্যাসহ সরকারের অবহালার কারণে দীর্ঘদিন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর মংলা বন্দর। উন্নয়ন বঞ্চিত হওয়ায় নিকট অতীতে এই বন্দরকে বলা হতো নিঝুমপুরী। তবে গত নয় বছরে এই বন্দরের চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। এই সময়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানামুখী উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়নে এ বন্দরে গতি ফিরেছে। এতে দীর্ঘদিন ক্ষতি বয়ে চলা বন্দরটি ফিরেছে লাভের ধারাতেও।
মংলা বন্দরের যাত্রা শুরু ১৯৫০ সালে। কালে কালে বয়স ছুঁয়েছে ৬৭ বছরে। বয়সের খতিয়ান লম্বা হলেও বেশ চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে পথ চলতে হয়েছে বন্দরটিকে।

 

বন্দরে বেড়েছে জাহাজের পরিমাণ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূলত অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও মাথাভারি প্রশাসনের কারণে অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছিল বন্দরটি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও হাত গুটিয়ে নেওয়ায় এক পর্যায়ে লোকসানি বন্দরে পরিণত হয় মংলা।

বন্দর সূত্র জানায়, গত ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে ১১ কোটি টাকা লোকসান দেয় মংলা বন্দর। পরের বছর এই লোকসানের পরিমাণ ছিল নয় কোটি টাকা। লোকসানের ধারা অব্যাহত থাকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত। পরে ২০০৯ সালে অবকাঠামো উন্নয়ন, সংস্কারসহ ৫৭০ কোটি টাকার কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়ায় মংলা বন্দরের গতি ফিরে। 
মংলা বন্দরে আবার বেড়েছে পাট রফতানি মংলা বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স হাসেম অ্যান্ড সন্সের মালিক জুলফিকার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নৌ ও সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করাসহ সময়মতো মাল খালাস হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। প্রাণশক্তি ফিরে পায় বন্দরটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্দরে পণ্য খালাসও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।’
বন্দরের আরেক ব্যবহারকারী নুরু অ্যান্ড সন্সের মালিক এইচ এম দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিংড়ি ও পাট সরাসরি মংলা বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চট্রগ্রাম বন্দরে চলে যেত। বন্দরে অবকাঠামো উন্নয়ন হওয়ায় সেসব পণ্য আবার মংলা বন্দর দিয়ে রফতানি হচ্ছে।’ তিনি জানান, এ বন্দর আরও গতিশীল হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বন্দরের আয় বেড়ে শতকোটি টাকার ঘরে পৌঁছেছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৯৬ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আয় করে এই বন্দর। এ অর্থবছরে ১৩১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ায় নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ৬৪ কোটি ৭৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা। গত পাঁচ বছরে এই বন্দরের সম্মিলিত মুনাফা পরিমাণ ২৫৭ কোটি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর ফারুক হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাহাজের আগমন বেড়ে যাওয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্দরের আয় বেড়ে যাচ্ছে। এগুলো সম্ভব হয়েছে কেবল নতুন নতুন যন্ত্রপাতির সংযোজন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ফলে।’ আগামীতে আরও নতুন নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজিত হবে বলেও জানান তিনি।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানা যায়, আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মংলা বন্দর দিয়ে সরাসরি রফতানির পরিমাণও বেড়েছে। একসময় পাটকলগুলোর কারণে পাট পণ্য রফতানির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল এই বন্দর। কিন্তু বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে একের পর এক পাটকল বন্ধ হওয়ায় এই বন্দর দিয়ে রফতানি কমে যায়। তবে বর্তমানে আবারও পাট রফতানি বেড়েছে। 

কমোডর ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু এখনও হয়নি। ২০১৮ সালের মধ্যে এই সেতু সচল হলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে মংলা বন্দরের দূরত্ব কম হবে, সময় কম লাগবে। এ কারণেই রফতানিযোগ্য তৈরি পোশাকও তখন মংলা বন্দর দিয়ে রফতানি হবে— তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’ 

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক ট্রাফিক মোস্তফা কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বছর এই বন্দর দিয়ে ৩৮ হাজার ৩শ ২৩ মেট্রিক টন পাট রফতানি হয়েছ। চলতি বছরের গত মে মাস পর্যন্ত রফতানি হয়েছে ৪৩ হাজার ২৭৫ মেট্রিক টন।’

/এসএমএ/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা