X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুৎ সংযোগের নামে ১৩ লাখ টাকা লুট

উজ্জল চক্রবর্তী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
০৫ জুলাই ২০১৭, ১১:৩১আপডেট : ০৫ জুলাই ২০১৭, ১১:৪৭





ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি। ছবি- প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের বুড়িশ্বর গ্রামে বিদ্যুৎ সংয়োগ দেওয়ার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বুড়িশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ছায়েব আলী মাস্টার ও ইউনিয়ন যুবলীগ সেক্রেটারি আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ।

বুড়িশ্বর গ্রামের ফজলুল হক ও রেনু মিয়া জানান, বুড়িশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ছায়েব আলী মাস্টার ও ইউনিয়ন যুবলীগ সেক্রেটারি আব্দুল হাই ২০১৫ সালে গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য ২০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ৯৬২টি পরিবারের কাছ থেকে গ্রাহক প্রতি ১৪৫০ টাকা করে মোট ১৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা উত্তোলন করে। তাদের অভিযোগ, প্রতি মিটার বাবদ সরকার নির্ধারিত ফি ৬৫০ টাকা হলেও তারা প্রথম দফায় একটি রসিদ তৈরি করে গ্রাহক প্রতি ২শ টাকা করে নেয়। দ্বিতীয় দফায় ৪শ টাকা এবং তৃতীয় দফায় ৮৫০ টাকা নিয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ শ্রমিকদের খাবার বাবদ প্রতি গ্রাহক থেকে দুই কেজি করে প্রায় ৪৮ মণ চালও উত্তোলন করে।

এলাকাবাসী এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বুড়িশ্বর গ্রামে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। প্রায় দুই বছর পার হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়ে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. ছায়েদুল হকের কাছে অভিযোগ করেছেন বুড়িশ্বর গ্রামের বিদ্যুৎ প্রত্যাশীরা। পরে মন্ত্রী নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির এজিএম নজরুল ইসলামকে ডেকে এনে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

গ্রামবাসীর অভিযোগ মন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিস কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমন কি পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের এজিএমকে ফোন দিলে তিনি ফোনও ধরেন না।

বুড়িশ্বর গ্রামের গৃহবধূ বেদেনা আক্তার বলেন, ‘সুদে টাকা এনে ১৪৫০ টাকা দিছি, চাউল দিছি হের পরও ক্যারে কারেন পাই না? গরমের মধ্যে ছুডু (ছোট) পুলাডা (ছেলেটা) লেহাপড়া (লেখাপড়া) করতে পারে না। আমরারও খুব কষ্ট হয়। এত গরমে কেমনে ঘরে থাহুম এই চিন্তাই করতাছি।’

বুড়িশ্বর গ্রামের শরীফুল হাসান শিপন, গণেশ দেব ও আক্কাস মিয়া বলেন, ‘তারা যখন যত টাকা চেয়েছেন গ্রামের লোকজন তত টাকাই দিয়েছে। কিন্তু সেই টাকা বিদ্যুৎ অফিস পর্যন্ত যে পৌঁছেনি তা আমরা জানতাম না। দীর্ঘ দিন পার হওয়ার পর গ্রামের লোকজন বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ শুরু করলে জানতে পারেন তাদের গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহকের জমা দেওয়া টাকা বিদ্যুৎ অফিস পর্যন্ত পৌঁছেনি। তারপরই গ্রামের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।’

গ্রামবাসীর এই দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম মনিরুজ্জামান জানান, ‘আমার মনে হচ্ছে কোথাও সমস্যা আছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।’
বুড়িশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ছায়েব আলী মাস্টার টাকা নেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘প্রত্যেকেই এখন সশরীরে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে টাকা জমা দেবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রামে বিদ্যুৎ আসবে। মন্ত্রী মহোদয় উদ্বোধন করবেন। ঝামেলা শেষ হয়েছে। এখন বিদ্যুৎ আসবে এটাই বড় কথা।’
ইউনিয়ন যুবলীগ সেক্রেটারি আব্দুল হাই বলেন, ‘আমি ওয়ারিং বাবদ প্রতি পরিবারের কাছ থেকে ২৫০ টাকা করে নিয়েছি। সেই অনুযায়ী ওয়ারিংয়ের কাজও হয়েছে।
তবে আমার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা আদায় বা দুই কেজি করে চাল উত্তোলনের অভিযোগ ঠিক নয়।’
নাসিরনগর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির এজিএম নজরুল ইসলাম জানান, ‘বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে অবৈধভাবে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি আমরা জেনেছি। আমরা এ বিষয়ে বুড়িশ্বর গ্রামে দু-দফা সভাও করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও সমাধানে আসতে পারিনি।’ তিনি আরও জানান, গ্রামের প্রতিটি এলাকায় লাইন টানা আছে। মিটার বাবদ গ্রাহক প্রতি ৬৫০ টাকা জমা পেলেই আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করব।

/বিএল/এনআই/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
‘বিএনপি যে কোনও উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে’
‘বিএনপি যে কোনও উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে’
ফেসবুকে নিজের সমালোচনা দেখে হাসি পায় সাকিবের
ফেসবুকে নিজের সমালোচনা দেখে হাসি পায় সাকিবের
উপজেলা নির্বাচনে পলকের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট
উপজেলা নির্বাচনে পলকের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না