X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে কিভাবে বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংযোগ পায়?’

চট্টগ্রাম ব্যুরো
১০ জুলাই ২০১৭, ২৩:০২আপডেট : ১০ জুলাই ২০১৭, ২৩:০২

 

 

চট্টগ্রামের পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়- উল্লেখ করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দেওয়ার দায়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমিন। সোমবার (১০ জুলাই) বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৬তম সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘আমরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে  নই। আইন প্রয়োগ করছি না বলে হয়তো অবৈধ সংযোগ নিতে সাহস পাচ্ছে। নাহলে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা কিভাবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ পান? যারা এসব সংযোগ দিয়েছেন এবং যারা এসব লাইন নিয়েছেন সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’ এসময় তিনি সংশ্লিষ্ট সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে  ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীরা কিভাবেবিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ পায় সে বিষয়ে জানতে চান।

বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমিন বলেন, ‘অনেক সময় পাহাড়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় জেলা প্রশাসনের ওপর চাপানো হয়। অথচ যেখানে যাদের মালিকানাধীন (সংস্থা) পাহাড় রয়েছে, এগুলো তদারকি করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কেউ এসে পাহাড় কাটবে, সেখানে বাড়িঘর তৈরি করবে, অথচ পাহাড়ের মালিকরা কিছুই করবে না, তা হতে পারে না। পাহাড়ের মালিকরা যদি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেন, তবে ওইসব সংস্থার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। পাহাড়ের মালিকরা নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবেন। কত সংখ্যক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, কতটুকু সফলতা পেয়েছেন সেটি আগামী সভায় অবহিত করবেন। অবৈধ সংযোগগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তাদের করণীয় সর্ম্পকে অবহিত করবেন।’

চট্টগ্রামের পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস সভায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষসহ ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো যেসব সংস্থার মালিকানায় রয়েছে তারা নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে রুটিন কাজ হিসেবে পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে। এই ক্ষেত্রে তারা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন মনে করলে তাদের তা করা হবে।’

সভায় বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির  সমালোচনাও করা হয়। সভায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আব্দুল জলিল বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আমাদের লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। কিন্তু অভিযান থেকে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেসব লাইনের সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসাবাসকারীদের উচ্ছেদে অভিযান চালানোর প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র ওইসব পাহাড়ে কয়েকদিন বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বন্ধ রাখলেই ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীরা পাহাড় ছেড়ে পালিয়ে যাবে।’

চট্টগ্রামের পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস এসময় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মতিঝরণাসহ ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অনেক আগেই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় ১৫ বছর এসব এলাকায় কোন সংযোগ দেওয়া হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা পিডিবির অজান্তে নিজেরা এসব সংযোগ নিয়ে নেয়। খবর পেয়ে নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আমরা সেসব লাইন কেটে দিই। কিন্তু তারা স্থানীয় ইলেক্ট্রিশিয়ানের মাধ্যমে ফের সংযোগ স্থাপন করে নেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবৈধ সংযোগ গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করি। অনেকগুলো মামলা এখনও চলমান রয়েছে।’ ম্যাজিস্ট্রেট আছিয়া খাতুন বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অভিযানে গেলে দেখি প্রতিনিয়ত নতুন বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। সংস্থাগুলো জানে কতটি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় না। উল্টো আমরা অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় এসব সংস্থার প্রতিনিধিরা লুকোচুরি করার চেষ্টা করেন।’ 

সভায় রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী আতাউল হক ভূইয়া বলেন, ‘ফয়েজ লেক এলাকায় রেলওয়ের পাহাড়ে ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষ অবৈধ বসতি গড়ে বসবাস করছে। গহিন অরণ্যে তারা বসতি স্থাপন করায় সেখানে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।’ তিনি রেলওয়ের স্থাপনা উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। তবে রেলওয়ের উচ্ছেদ পদক্ষেপ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি। সভায় সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, ‘হাতিয়া, সন্দ্বীপ, নোয়াখালী, লক্ষীপুর থেকে এসে কয়েক হাজার মানুষ সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় পাহাড়ে অবৈধভাবে বাড়িঘর নির্মাণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় তারা অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে আসলেও প্রশাসনের নজরে আসে দুই মাস আসে।’

চট্টগ্রামের পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা আরেকটি ভূমি ধসের জন্য অপেক্ষা করব না। আরেকটি বর্ষার জন্য অপেক্ষা করব না। তার আগেই আমাদের এ দুযোর্গের সমাধান করতে হবে। আমরা অপেক্ষা করার কারণে আগে যেখানে পাহাড়ে ৩০টি পরিবার ছিল, সেখানে এখন তিন হাজার পরিবার হয়েছে।’  শিগগিরই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসাবাসকারীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে তাদের পুর্নবাসন করার  সিদ্ধান্ত হয় সভায়।

/এএম

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!