X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরা গণভবন থেকে মোনয়েম খানের নামফলক অপসারণ

নাটোর প্রতিনিধি
১৫ জুলাই ২০১৭, ১৭:৫৩আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৭, ১৭:৫৪

উত্তরা গণভবনে মোনয়েম খানের নামফলক প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলীয় বাসভবন নাটোরের উত্তরা গণভবন থেকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আব্দুল মোনয়েম খানের নামফলক অপসারণ করা হয়েছে। শনিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে এই নামফলক অপসারণের কাজ সম্পন্ন করা হয়।

২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর সারাদেশের সব প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম অপসারণের আদেশ দেন হাইকোর্ট। তারই ধারাবাহিকতায় উত্তরা গণভবন থেকে মোনয়েম খানের নামফলক অপসারণ করা হল। মোনয়েম খানের নামফলক অপসারণ

উত্তরা গণভবনের প্রধান প্রাসাদ থেকে মোনয়েম খানের নামফলক অপসারণের খবরে শনিবার সকাল থেকেই জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ,মহিলা আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ গণভবনের সামনে জমায়েত হতে থাকেন। বিভিন্ন ব্যানারে স্লোগান ও মিছিলসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ জড়ো হন গণভবনের প্রধান ফটকে। এসময় গণভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশও হয়। পরে নাটোরের তিনটি সংসদীয় আসনের এমপি, জেলা প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ, নাটোর পৌরসভার মেয়র, জজকোর্টের পিটিসহ জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মোনয়েম খানের নামফলক অপসারণের লক্ষ্যে গণভবনের ভেতরের প্রধান প্রাসাদের সামনে হাজির হন। এর পর অতিথিরা মোনয়েম খানের নামফলকটি হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে অপসারণ করেন। নামফলকটি অপসারণের সময় উপস্থিত ব্যক্তিরা তালি ও স্লোগান দিতে থাকেন। মোনয়েম খানের নামফলক অপসারণের মাধ্যমে উত্তরা গণভবন কলঙ্কমুক্ত হল বলে দাবি করেছেন উপস্থিত ব্যক্তিরা।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, নাটোর-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জজকোর্টের পিপি অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম, নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মালেক শেখ। এসময় মুক্তিযোদ্ধা, জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন। নাটোরে উত্তরা গণভবন

নামফলক অপসারণ শেষে নাটোর-২ আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল নিজেকে একজন মুজিব সৈনিক দাবি করে বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ত্যাগ, তিতিক্ষা, আন্দোলন, সংগ্রাম আর যুদ্ধের মাধ্যমে এদেশ থেকে পাকিস্তানিদের বিতাড়িত করেছিলেন। আর আমরা নতুন প্রজন্মের মুজিব সৈনিকরা পাকিস্তানের কোনও চিহ্ন এই বাংলার মাটিতে রাখতে চাই না। সেই দৃঢ় সংকল্পের বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই আজ উত্তরা গণভবন থেকে মোনয়েম খানের নামফলক অপসারণ করা হলো। মোনয়েম খান বলেছিলেন, আমি বেঁচে থাকতে শেখ মুজিবুর রহমানকে কখনও জেল থেকে বের হতে দেবো না। এছাড়া মোনয়েম খান আগরতলা ষড়যন্ত্র করতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। মোনয়েম খানের নামফলক অপসারণের মাধ্যমে আজ উত্তরা গণভবন কলঙ্কমুক্ত হলো।’

এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর জেলার তৎকালীন মুসলীম লীগ নেতা জেলার তালিকাভুক্ত রাজাকার আব্দুস সাত্তার খাঁন চৌধুরী ওরফে মধু মিয়ার নামে নামকরণকৃত শহরের ট্রাফিক মোড় থেকে সদর হাসপাতাল রাস্তার নামফলক অপসারণ করা হয়। এরপর রাজাকার কছের উদ্দিনের নামে শহরের বড়হরিশপুর এলাকায় সড়কের নামফলক অপসারণ করা হয়।

জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের শেষ রাজা প্রতিভা নাথ রায় দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। ১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর এই রাজবাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা দেখা দেয়। এরপর ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার রাজবাড়িটি অধিগ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৭ সালের ২৪ জুলাই পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর মোনয়েম খান রাজবাড়িটিকে গভর্নর হাউস হিসেবে উদ্বোধন করেন। এ কারণে তার নামে এই নামফলকটি প্রধান প্রাসাদে স্থাপন করা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জাতিন জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই গভর্নর হাউসের নাম পরিবর্তন করে একে উত্তরা গণভবন হিসেবে নাম দেন। তখন থেকেই প্রধান প্রাসাদে শেখ মুজিবুর রহমান ও মোনয়েম খানের নামের নামফলক পাশাপাশি স্থাপিত ছিল। নামফলক অপসারণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা মিছিল

নাটোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান ও কেয়ারটেকার সবুর তালুকদার জানান, উত্তরা গণভবণের প্রধান প্রাসাদ থেকে মোনয়েম খানের নাম ফলক অপসারণের জন্য গত ২৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির আলোকে গত ৪ জুলাই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুরাইয়া বেগম স্বাক্ষরিত চিঠি ৫ জুলাই পৌছে নাটোর গণপূর্ত বিভাগে। চিঠিতে বলা হয়, নাটোর জেলার উত্তরা গণভবন থেকে স্বাধীনতাবিরোধী কুখ্যাত রাজাকার মোনয়েম খানের নামফলক জেলা প্রশাসনের সহায়তের অপসারণ করে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। এরপর গত ৯ জুলাই এই নামফলকটি অপসারণের দিন ধার্য করা হলেও কাজটি সম্পন্ন না হওয়ায় শনিবার তা সম্পন্ন করা হল।

নামফলক অফসারণ শেষে উত্তরা গণভবনের প্রধান ফটক থেকে আবার মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে আগত ব্যক্তিরা ফিরে যান।

/এফএস/ 

আরও পড়ুন- আমাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করবেন না: প্রধানমন্ত্রী

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’