X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বোমা হামলা: যা আছে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে

তুহিনুল হক তুহিন, সিলেট
১৬ জুলাই ২০১৭, ০৮:৪৩আপডেট : ১৬ জুলাই ২০১৭, ০৮:৪৮

বোমা হামলায় নিহত সাতজনের মধ্যে ছয় জন সিলেটে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় আতিয়া মহলের অদূরে পরপর দু’দফা বোমা বিস্ফোরণে নিহত সাত জনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর মধ্যে ছয় জনের ময়না তদন্ত হয় সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে। আর র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদের ময়না তদন্ত হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে।

এদিকে, তিন মাসের বেশি সময় পরও ভয়াবহ ওই হামলার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এখনও এক প্রকার অন্ধকারেই চলছে মামলার তদন্ত কাজ। ওই ঘটনায় কারা জড়িত বা কার পরিকল্পনায় বোমা হামলা হয়েছে, তা জানতে চান নিহতদের স্বজনরা। ২৫ মার্চের ওই জোড়া বিস্ফোরণে র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ ও দুই পুলিশ পরিদর্শকসহ সাতজন নিহত হন। আহত হন অর্ধশত সাধারণ মানুষ।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহলের অদূরে পাঠানপাড়া দাখিল মাদ্রাসার কাছের রাস্তায় একটি ব্যাগে বিস্ফোরক ছিল। সেটি বিস্ফোরিত হলে হতাহতের ঘটনা ঘটে। ওই সময় আতিয়া মহল নামের বাড়িটিতে থাকা জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালাচ্ছিল সেনাবাহিনী। এর কয়েকদিন পর মৌলভীবাজারের বড়হাটে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আশরাফুল আলম  নাজিম নামের এক জঙ্গি নিহত হয়।পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জানায়, নাজিমই পাঠানপাড়ার ওই জোড়া বিস্ফোরণের মূল হোতা। সে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার কুমারঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। আশরাফুলের লাশও তার পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করে।

আশরাফুলই যে বোমা হামলার মূল হোতা তা কিভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হলো-এ বিষয়ে জানতে চাইলে  মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পিবিআই’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বোমা হামলার পরপরই পিবিআই ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে। এরপর ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুই শতাধিক মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে দেখা যায়, হামলার আগ মুহূর্তে আশরাফুল নামের ওই ব্যক্তির অবস্থান ছিল পাঠানপাড়ায়। ঘটনার পর তার মোবাইল ফোনের লোকেশন দেখায় মৌলভীবাজারে।’

ঘটনাস্থলে পড়ে আছে দুজনের মরদেহ সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ওই বোমা হামলায় নিহত পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ও আবু কয়ছর এবং স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াহিদুল ইসলাম অপু, জান্নাতুল ফাহমি, শহীদুল ইসলাম ও খাদিম শাহসহ ৬ জনের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পিবিআই’র বোমা হামলা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে গত মে মাসে হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া, র‌্যাবের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে সম্পন্ন হয়। সেখান থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বোমা বিস্ফোরণের পর আবুল কালাম আজাদের বাম চোখ দিয়ে একটি স্প্লিন্টার মাথার পেছনে চলে যায়। এ কারণে তার মৃত্যু হয়। পুলিশ পরিদর্শক আবু কয়ছরের শরীর থেকে একটি স্প্লিন্টার উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তার মুখ, বাম চোখ, কপাল, বাম ও ডান পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আরেক পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলামের শরীরে জখম পাওয়া যায় ১০টি। এছাড়াও তার শরীরে ২৪টি সেলাই ছিল। তলপেটে দুটি বড় গর্ত ছিল। তার শরীর থেকে একটি স্প্লিন্টার বের করা হয়।

স্প্লিন্টারের আঘাতে অপুর ডান চোখটি গলে গিয়েছিল ওয়াহিদুল ইসলাম অপুর। তার গলায়, বুক, ডান হাতের বাহু, ডান পায়ে ৩টা জখম এবং বাম পায়েও গুরুতর জখম ছিল। জান্নাতুল ফাহমির শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। তার শরীরে ৩৫টি সেলাই ছিল। বোমার আঘাতে শহীদুল ইসলামের তলপেটে স্প্লিন্টারের আঘাতে বড় ধরনের গর্ত হয়। তার ডান পা ও বুকের বাম দিকেও জখম রয়েছে। বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে খাদিম শাহ’র বাম চোখ গলে যায়। কপাল, ডান বাহু, ডান পায়ের উরুসহ তার শরীরে পাঁচ জায়গায় গুরুতর জখম ছিল।

বোমা হামলা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক সুশীল রঞ্জন দাস বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবদেনগুলো পেয়েছি। এখন বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে তদন্ত র্কাযক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানা গেছে মৌলভীবাজারের বড়হাটে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত আশরাফুল আলম নাজিম সিলেটের ওই বোমা হামলার ঘটনাটি ঘটিয়েছে। বোমাগুলো ছিল বিশেষভাবে তৈরি, এতে  বিয়ারিংয়ের বল ব্যবহার করা হয়।

জোড়া বোমা বিস্ফোরণে সাতজন নিহতের ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের মোগলাবাজার থানায় দুটি মামলা হয়। এসআই  শিপলু দাস বাদী হয়ে হত্যা মামলা ও আতিয়া মহলের বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় একই থানার এসআই  সুহেল বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন।

এর আগে ২৪ মার্চ ভোর থেকে আতিয়া মহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হয়। ২৮ মার্চ বিকাল পর্যন্ত ‘অপারেশন টুয়াইলাইট’ পরিচালিত হয়। সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোদের এ অভিযানে চার জঙ্গি নিহত হয়। এরপর পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে ১৩ মে মামলা দুটির আলামত ও ডকেট বুঝে নয়ে পিবিআই’র  তদন্তকারী দল।

/এএম

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি