X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতির মামলায় চার্জশিটে নাম থাকা ৪ বেরোবি কর্মকর্তার পদোন্নতি

রংপুর প্রতিনিধি
২০ জুলাই ২০১৭, ০৪:৫১আপডেট : ২০ জুলাই ২০১৭, ০৫:৩৪

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই কমিটির আপত্তি সত্ত্বেও দুর্নীতির মামলার চার্জশিটে নাম থাকা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) চার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিন শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশনের সময়সীমা ২ বছর আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও তাদের বদলে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ওই চার কর্মকর্তাসহ মাত্র ২০ জনকে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভায় নেওয়া এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলার পরও পদোন্নতি দেওয়াটা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তবে উপাচার্য দাবি করছেন, এই পদোন্নতির সিদ্ধান্ত সঠিক।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেরোবির প্রায় তিনশ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশনের সময়সীমা উত্তীর্ণ হয়েছে দুই বছর আগেই। তারা পদোন্নতির জন্য আন্দোলন করছেন। এই আন্দোলনের দাবিতে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাদের পদোন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক নুর উন নবী। সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকার নিয়ে পদোন্নতির জন্য তিনি তালিকা চূড়ান্ত করে উত্থাপন করলেও তা সিন্ডিকেট সভায় পাস হয়নি।
এর মধ্যে গত ১৪ জুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা এসব শিক্ষক-কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিয়ে ২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি দিতে বাছাই কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির অন্যতম সদস্য বেরোবি কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাইদুল হক কমিটির সভাতে ২০ কর্মকর্তার মধ্যে চার জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা ও চার্জশিটে তাদের নাম থাকার বিষয়টি উত্থাপন করেন।
উপাচার্যের সভাপতিত্বে বাছাই কমিটির ওই সভায় জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার শাহাজাহান আলী মণ্ডল, উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) গোলাম ফিরোজ, সহকারী রেজিস্ট্রার মোরশেদ আলম রনি ও সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট) আশরাফুল আলমের নাম রয়েছে দুদকের মামলার চার্জশিটে। এ কারণে তাদের পদোন্নতি নিয়ে বাছাই কমিটি আপত্তি জানালেও উপাচার্য তা আমলে নেননি বলে জানিয়েছেন সভায় উপস্থিত একাধিক সদস্য। পরে ১৬ জুলাই সিন্ডিকেটের সভায় ওই চার কর্মকর্তাসহ ২০ জনের পদোন্নতির অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাছাই কমিটির সভায় বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও সিন্ডিকেট কমিটির সদস্য সচিব ইবরাহিম কবীর ওই চার কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়টি স্বীকার করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সভায় এই চার জনের বিরুদ্ধ দুর্নীতির মামলার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কেন তাদের পদোন্নতি দেওয়া হলো, তা জানি না।’
বাছাই কমিটির অন্যতম সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. সাইদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাছাই কমিটির সভায় চার কর্মকর্তার নাম দুদকের মামলার চার্জশিটে থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। বাছাই কমিটির আরেক সদস্য রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহাম্মেদও সভায় তাদের পদোন্নতি আইনসম্মত হবে না বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু আমাদের আপত্তি তো কোনও কাজে আসেনি।’ এছাড়া, আগের উপাচার্যের আমলে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আপগ্রেডেশন ও পদোন্নতির বিষয়টি সুরাহা না করে নতুন করে ২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়া ঠিক হয়নি বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোজাহার আলী সরকার বলেন, ‘যে চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে এবং মামলার চার্জশিটও দাখিল হয়েছে, তাদের পদোন্নতি দেওয়াটা বিস্ময়কর।’
রংপুরের আইনজীবী এম এ বাশার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই চার কর্মকর্তার নাম চার্জশিটে আসার পরই তাদের সাসপেন্ড করা উচিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তা না করে তাদের পদোন্নতি দেওয়াটা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’ ওই কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করাকেও বেআইনি বলে মনে করেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়ে আসছে। তবে যে ২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে, সেটা রাইটলি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকলে সেটা আদালত দেখবে।’ আগের উপাচার্যের আমলে সিদ্ধান্ত নেওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কাগজপত্র দেখে তারপর তাদের পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। আপাতত বাছাই কমিটি ২০ কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনা করেছে বলেই সিন্ডিকেট সভায় তা অনুমোদিত হয়েছে।’

আরও পড়ুন-

সিলেটে মাছ ধরতে গিয়ে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজের দেয়ালে বাঁশ!

কুড়িয়ে পাওয়া এক লাখ টাকা ফেরত দিলেন পুলিশ কনস্টেবল

/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা