X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজপ্রাসাদ বানিয়ে দিলেও ওখানে থাকতাম না!

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
২১ জুলাই ২০১৭, ২২:১৯আপডেট : ২১ জুলাই ২০১৭, ২২:৫৫

এভাবে সিঁড়ি বেয়ে ঘরে প্রবেশ করতেন ফাতেমা। ছবি- প্রতিনিধি স্বামী-সন্তান নিয়ে শহরে থাকার স্বপ্ন দেখেছিলেন ফাতেমা। ছিন্নমূল বস্তিতে জায়গা কেনার পর দু’বছর আগে ওই জায়গায় ঘরও তুলেছিলেন। কিন্তু সেই ঘরে বেশি দিন থাকা হলো না তার। শুক্রবার (২১ জুলাই) ভোরে পাহাড় ধসে মারা গেলেন ফাতেমা। একই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তার ছেলেসহ আরও  চার জন। অন্য নিহতরা হলেন- ফাতেমার ছেলে ইউনুস এবং রাবেয়া ও তার দুই মেয়ে লামিয়া ও সামিয়া। স্থানীয়রা জানিয়েছেন পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করায় প্রাণ হারিয়েছেন তারা। 

ফাতেমার সহকর্মী চেমন আরা বলেন, ‘ফাতেমা কিভাবে এই পাহাড়ে বসবাস করতো মাথায় আসে না। আমাকে রাজপ্রাসাদ বানিয়ে দিলেও আমি এত ঝুঁকি নিয়ে এই পাহাড়ে থাকতাম না। একটা কেন, দশটা প্লট দিলেও আমি এখানে থাকবো না।’

পাহাড় ধস। ছবি- প্রতিনিধি চেমন আরা’র বয়স পঞ্চাশ। ফাতেমার সঙ্গে তিনি সানম্যান গ্রুপের সিরিনা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেডের একই ফ্লোরে কাজ করতেন। 
শুধু চেমন আরা নয়, শুক্রবার (২১ জুলাই) দুপুরে সহকর্মীর লাশ দেখতে এসে নগরীর বায়েজিদ এলাকায় অবস্থিত ওই গার্মেন্টসের অনেক পোশাক শ্রমিক ফাতেমার মৃত্যুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকে দায়ী করেছেন। 
সিঁড়ি বেয়ে ফাতেমার ঘরে উঠতে গিয়ে রেনু বেগম নামের আরেক সহকর্মী বলেন, ‘ফাতেমা কিভাবে প্রতিদিন এই পাহাড়ে ওঠা-নামা করতো বুঝে আসে না। রাত ১০টায় গার্মেন্টস ছুটির পর সে কিভাবে এই ঘরে আসতো? আমি হলে একদিনও পারতাম না।’
শুক্রবার রাত আনুমানিক তিনটার দিকে পাহাড় ধসে পড়ে ফাতেমার ঘরের ওপরে। জঙ্গল সলিমপুর এলাকার লটকন শাহ মাজারের শেষ প্রান্তে তিন নম্বর সমাজে পাহাড়ের ঢালে এর অবস্থান। 

পাহাড় ধস। ছবি- প্রতিনিধি নগরীর টেক্সটাইল গেইট এলাকা থেকে এবড়োথেবড়ো পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় জঙ্গল সলিমপুর। সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে ওই পথে যেতে চোখে পড়ে পাহাড়ের বিভিন্ন ভাজে কেটে গড়ে তোলা হয়েছে বসতি। সিএনজি থেকে নেমে প্রায় দুই কিলোমিটার কাদামাটির পথ হেঁটে গেলে মেলে ফাতেমার ঘর। সেখানে একটি পাহাড় থেকে প্রায় ৪০ ফুট ওপরে আরেকটি পাহাড়ের পেটে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে ঘর। কমপক্ষে ৪০টি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় ওই ঘরে। পাহাড় কেটে ঘরটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, প্রথম দেখাতেই যে কেউ ভাবতে পারে হয়তো এখনই পাহাড় ধসে পড়বে ওই ঘরের ওপর।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে ওই ঘরে নিহত ফাতেমাসহ আরও ৯ জন ঘুমিয়ে ছিলেন। অন্যদের মধ্যে তার স্বামী রফিকুল ইসলাম, ছেলে ইউনুস, মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ও সালমা ছিলেন। এছাড়া এদিন ওই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন তাদের বাসায় বেড়াতে আসা তার ননদ রাবেয়া, তার দুই মেয়ে সামিয়া ও লামিয়া এবং রফিকের ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন। পাহাড় ধসে পড়লে রফিক ও গিয়াস উদ্দিন কোনোমতে বেঁচে যান। পরে তারা চিৎকার শুরু করলে আশাপাশের ঘর থেকে লোকজন বেরিয়ে এসে ফাতেমার মেয়ে জান্নাত ও সালমাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে। অন্যরা  মাটি চাপা পড়ে মারা যান। পরে তাদের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

পাশের ঘরের বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, ‘ভোরে হঠাৎ রফিকের চিৎকার শুনে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি, তাদের ঘরের একাংশে পাহাড় ধসে পড়েছে। দ্রুত সেখানে গিয়ে তার দুই মেয়েকে উদ্ধার করি। অন্যরা ধসে পড়া মাটিতে চাপা পড়ায় তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ধসে পড়া মাটি খুঁড়ে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।’

/এনআই/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া