X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে বাবাকে খুন: পরিবারসহ পলাতক আসামি আকাশ

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
২৫ জুলাই ২০১৭, ২০:৩২আপডেট : ২৫ জুলাই ২০১৭, ২০:৪২

নিহত কাজী মাহাবুব গোপালগঞ্জে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করে সন্ত্রাসীদের হামলায় বাবা নিহত হওয়ার ঘটনার মূল হোতা আকাশ মাদকাসক্ত। এছাড়া, চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গেও সে জড়িত বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। এদিকে, ঘটনার পর থেকেই আকাশসহ তার পুরো পরিবার পলাতক রয়েছে।
স্থানীয়দের কাছে জানা গেছে, আকাশের বাবা আক্তার খাঁ একজন রাজমিস্ত্রি, মা বাসাবাড়িতে রান্নার কাজ করেন। ছেলে আকাশ ও স্ত্রীকে নিয়ে আক্তার খাঁ থাকেন শহরের মিয়াপাড়া একটি ভাড়া বাসায়। শহরের আসার পর মাদক সেবন, চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে আকাশ। মাদক সেবনের অভিযোগে আকাশকে বেশ কয়েকবার মারধরও করে স্থানীয়রা। সম্প্রতি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে একটি মামলায় আদালতে চালান দেয়। পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয় সে। তবে আকাশ কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সস্পৃক্ত ছিল না।
এই বাড়িতে থাকতেন কাজী মাহাবুব জানা গেছে, মেয়েকে উত্ত্যক্ত করায় কাজী মাহাবুব থানায় আকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে পুলিশ তাকে আটক করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। তবে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছিল— এমন অভিযোগ করে সে মাহাবুবের কাছে মামলার খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেয় সে। পরে আকাশের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায় মাহাবুবের ওপর।
মিয়াপাড়ায় আকাশদের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, বাসায় কেউ নেই। দরজা তালাবন্ধ। অভিযুক্ত আকাশের চাচাও তাদের দোকান বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে। ফলে আকাশের পরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে আকাশ সম্পর্কে নেতিবাচক কথাই বললেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় অধিবাসী হাসিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বখাটে আকাশ তার বাবা ও মাকে নিয়ে মিয়াপাড়ায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকত। সে মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়ে। তার অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসী একাধিকবার মারধরও করেছে। তারপরেও শুধরায়নি আকাশ।’
কাজী মাহাবুবের স্বজনদের আহাজারি বাশার মিয়া ও ঝন্টু খান জানান, শুধু কাজী মাহাবুবের মেয়ে নয়, এলাকার অনেক মেয়েকেই উত্ত্যক্ত করত আকাশ। তাকে একাধিকবার এ বিষয়ে সাবধান করা হলেও সে কারও কথা শোনেনি।
এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যতে শোকের মাতক চলছে মাহাবুবের পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে। নিহত কাজী মাহাবুবের সহপাঠী ও প্রতিবেশী শেখ বদরুল আলম নাসিম বলেন, ‘মাহাবুবের মেয়েকে বখাটে আকাশ প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। তাকে নিষেধ করলেও সে শোনেনি।’
নিহতের স্ত্রী তাপসী রবেয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আকাশ মাঝে মধ্যেই আমাদের হুমকি দিতো। সে প্রায়ই আমাদের কাছে টাকা দাবি করে আসছিল। কিন্তু আমরা তাকে টাকা দিতে অস্বীকার করলে সে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। পরে তো আমার স্বামীকেই কুপিয়ে রেখে ফেলে যায় আকাশ ও তার দলবল।’
বন্ধ রয়েছে আকাশের চাচার দোকান এদিকে, মাহাবুব মারা গেলেও এখনও এ ঘটনায় কোনও মামলা দায়ের হয়নি। গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হলেও এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় মাহাবুবের পরিবারের কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি আকাশও তার পরিবারসহ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে আমরা আসামিদের ধরতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, শিগগিরই আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পারবো।’
উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জে শহরের পাবলিক হল রোডের বাসিন্দা কাজী মাহাবুবের মেয়ে বীণাপাণি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত বখাটে আকাশ। এ বিষয়ে কাজী মাহবুব থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ কয়েকদিন আগে আকাশকে ধরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এর জের ধরে গত শনিবার (১৫ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শহরের পাবলিক হল রোডে বখাটে আকাশের (২২) নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী মাহাবুবকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে পালিয়ে যায়। রবিবার (২৩ জুলাই) গভীর রাতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাজী মাহাবুব মারা যান।
নিহত কাজী মাহাবুব গোপালগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের একজন স্টাম্প ভেন্ডর ও হরিদাসপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার ছিলেন।

আরও পড়ুন-
মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ, বাবা খুন

মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে খুন, ২৪ ঘণ্টায়ও মামলা হয়নি

/এআর/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!