X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

নদী ভাঙন আতঙ্কে দাকোপ ও কয়রার ২ লাখ মানুষ

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
২৭ জুলাই ২০১৭, ১২:১৬আপডেট : ২৭ জুলাই ২০১৭, ১২:১৬

নদী ভাঙন আতঙ্কে দাকোপ ও কয়রার ২ লাখ মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অবিরাম বর্ষণের কারণে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় খুলনার দাকোপ ও কয়রার নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বেড়িবাঁধ, বসতঘর, কৃষি জমি, গাছপালা ও বিভিন্ন স্থাপনা। গত এক মাসে দাকোপের ৩টি পোল্ডার এলাকার প্রায় ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের এক তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়রা উপজেলায় ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এতে ভয়াবহ নদী ভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় এ দুটি উপজেলার ২ লাখ মানুষ। আতঙ্কিত এসব পরিবার ঘরবাড়ি রক্ষার্থে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাকোপ উপজেলার ৩১, ৩২ ও ৩৩নং পোল্ডারে বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় ৪টি ইউনিয়নে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং জোয়ারের চাপে অধিকাংশ বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। জোয়ারে পানির চাপ বৃদ্ধিতে ৩২নং পোল্ডারের সুতারখালী ইউনিয়নের নলিয়ান বাজারের মূল বাজার থেকে ফরেস্ট অফিস পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার, কালাবগী ঝলন্ত পাড়া বাজারের সামনে ১ কিলোমিটার, গুনারী চিত্ত বিশ্বাসের বাড়ির সামনে ৩শ গজ, কালিবাড়ি লঞ্চঘাট থেকে নিমাইয়ের বাড়ির সামনে পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, সুতরখালী মুজিবর মল্লিকের বাড়ির সামনে ২শ গজ, কামারখোলা ইউনিয়নের জলিয়াখালী, ভিটেভাঙ্গা, উত্তর কামারখেলা, পশ্চিম শ্রীনগর, জয়নগর, কালিনগর এলাকায় ৩ কিলোমিটার বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে।

৩৩নং পোল্ডারের বানিশান্তা বাজার এলাকায় প্রায় ৫শ’ গজ, কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের রামনগর বাজার এলাকায় ২শ’ গজ বাঁধের এক তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। ৩১নং পোল্ডারের কামিনিবাসিয়া পুলিশ ক্যাম্প থেকে ঝালবুনিয়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটার, বটবুনিয়া দুলাল সরদারে বাড়ির সামনে ৪শ’ গজ, পানখালী ঋষিপাড়া, পানখালী ফেরিঘাট, পানখালী ২নং ওয়ার্ড ওয়াপদা রাস্তা, খলিসা, মৌখালী, লক্ষ্মীখোলা, কামিনীবাসিয়া, খোনা, মোজামনগর, গড়খালী সংলগ্ন ওয়াপদা বেড়িবাঁধে ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

কয়রা উপজেলায় বেড়িবাঁধের ১৫টি স্থানে ধস নেমেছে। পাউবোর ১৩/১৪-১ ও ১৩/১৪-২ পোল্ডারের দক্ষিণ বেদকাশির আংটিহারা, চোরামুখা, উত্তর বেদকাশির রত্না, কাটকাটা ও গাজীপাড়া, কয়রা সদরের ৬নং কয়রা, ৪নং কয়রা, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট থেকে কাছাড়িবাড়ী, মহারাজপুরের দশহালিয়া, লোকা, মঠবাড়ি পবনা ও মহেশ্বরীপুরের নয়ানী এলাকার বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ সব এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদী ভাঙন আতঙ্কে দাকোপ ও কয়রার ২ লাখ মানুষ

দাকোপের ৩২নং পোল্ডারের কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মণ্ডল বলেন, ‘নদীর প্রবল জোয়ারের চাপে প্রায়ই বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।’

সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, ‘গত এক মাসে এ পোল্ডারের সাড়ে ৫ কিলোমিটার বাঁধের এক তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদী ভাঙনে এলাকার পরিবারগুলো এখন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।’

৩১নং পোল্ডারের তিলডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান রনজিত কুমার মণ্ডল বলেন, ‘কামিনিবাসিয়া থেকে ঝালবুনিয়া পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গোটা পোল্ডার এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পিযুষ কৃষ্ণ কুণ্ডু বলেন, ‘দাকোপ উপজেলার ৩২ এবং ৩৩নং পোল্ডারের বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিশ্ব ব্যাংকের। এখন ওই দুটি পোল্ডারের ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে পাউবো আগ্রহী নয়। তবে ৩১নং পোল্ডারের ঝুঁকিপূর্ণ কিছু কিছু স্থানে পাউবো কাজ করছে।’

দাকোপ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ শেখ আবুল হোসেন বলেন, ‘নদ-নদীতে পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি পোল্ডারে ৩৫ থেকে ৪০টি স্থানে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কার ও বিকল্প বাঁধ নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ভাঙন কবলিত স্থানগুলোতে প্রাথমিকভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ অর্থায়নে কাজ করার জন্য চেয়ারম্যানদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত সোমবার (২৪ জুলাই) গড়িয়াবাড়ি স্লুইস গেটের পাশে গর্ত হয়ে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এলাকবাসীর সহযোগিতায় সেখানে বাঁধটি আপাতত মেরামত করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া দরকার।’

মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্যাহ আল মামুন লাভলু বলেন, ‘দশহালিয়া এলাকার বেড়িবাঁধে ধসের কারণে ২৫/৩০ ফুট এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। লবণ পানি প্রবেশ করেছে। এলাকাবাসীকে নিয়ে বাঁধ আপাতত রক্ষা করা হয়েছে। তবে, বাঁধটি এখন রয়েছে হুমকির মুখে।’

উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ সরদার নুরুর ইসলাম বলেন, ‘কাটকাটা বাজারের পাশে রত্নার বেড়িবাঁধের সিংহভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সেখানকার লোকজন ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আমাদী সেকশান কর্মকর্তা মো. খায়রুল আলম বলেন, ‘এলাকা পরিদর্শন করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে হাতে থাকা আপদকালীন ফান্ড দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

/এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হাজারীবাগে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
হাজারীবাগে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
ব্রাজিলিয়ান মিগেলের গোলে কষ্টে জিতলো কিংস
ব্রাজিলিয়ান মিগেলের গোলে কষ্টে জিতলো কিংস
তীব্র গরমে সুপার লিগে দুই দিন করে বিরতি
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগতীব্র গরমে সুপার লিগে দুই দিন করে বিরতি
ড্রিমলাইনারের কারিগরি বিষয়ে বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলতে বিমানকে মন্ত্রীর নির্দেশ
ড্রিমলাইনারের কারিগরি বিষয়ে বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলতে বিমানকে মন্ত্রীর নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া