প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৌন্দর্য হারাচ্ছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। ঘূর্ণিঝড় ও বৈরি আবহাওয়ায় সৈকতের আশপাশে গাছপালা উপড়ে এবং ভবনের বিম ও পিলারের বড় বড় অংশ ভেঙে পড়ে আছে। ফলে জোয়ারের সময় সমুদ্রে নেমে আঘাত পেয়ে প্রতিনিয়ত আহত হচ্ছেন পর্যটকরা। সৈকত থেকে আবর্জনা সরানো ও পর্যটকদের জন্য স্বস্তিকর পরিবেশ তৈরিতে অবহেলারও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের জিরোপয়েন্ট এলাকার প্রায় একশ মিটার এলাকাজুড়ে এলজিইডির বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট ভবনের নিচের অংশের বড় বড় স্ল্যাব, সিমেন্ট-খোয়ায় বানানো পিলার, ফ্লোরের অংশ পড়ে আছে। এসব জায়গায় খালি পায়ে স্বাচ্ছন্দে হাঁটতে পারছেন না পর্যটকরা। এমনকি এসব অপসারণ না করায় জোয়ারের সময় গোসল করতে গিয়ে আহতও হচ্ছেন পর্যটকরা। এছাড়াও সৈকতের এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, সিগারেটের প্যাকেট ও অব্যবহৃত অংশ, বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের প্যাকেট, পলিথিন, মাছের বর্জ্য, উচ্ছিষ্ট ফলমূল, সামুদ্রিক বর্জ্য এবং মাছ ধরার নৌকা মেরামত কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আবর্জনা। পর্যটকদের ফেলে যাওয়া ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সৈকতের পশ্চিম দিকে লেবুরবন, পূর্বদিকে ইকোপার্ক এবং গঙ্গামতি রিজার্ভ ফরেস্ট সংলগ্ন আকর্ষণীয় পয়েন্টগুলোরও একই অবস্থা।
জানা গেছে, কুয়াকাটায় রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দর্শনীয় স্থান। আশির দশক থেকে দক্ষিণাঞ্চলের সম্ভাবনাময় ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সমুদ্র সৈকতের কদর বেড়েছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে। একইস্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার এটাই দেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত। ফলে শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষাসহ সব ঋতুতেই পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে এ সৈকত। এছাড়া কুয়াকাটায় রয়েছে নারকেল বিথী, ফয়েজ মিয়ার বাগান, জাতীয় উদ্যান (ইকোপার্ক), শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার, মন্ত্রীপাড়ার সিমা বৌদ্ধ বিহার, কাউয়ার চর, লেম্বুর চর, শুটকি পল্লীসহ ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রের বেলাভূমি। অথচ এ সৈকত সুরক্ষায় পর্যটন করপোরেশনসহ সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোনও উদ্যোগ।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা ইকবাল গাজী বলেন, ‘পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় প্রথমবার ঘুরতে এসেছি। যে রকম আশা নিয়ে এসেছিলাম তার কিছুই নেই এখানে। সৈকতটি বেশ অগোছালো। সৈকতে ভবনের ভাঙা অংশ, পলিথিন, ডাবের খোসা, খালি বোতল পরে আছে। সৈকত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না।’
খাবার ঘর হোটেলের মালিক মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিনই পর্যটকরা খেতে এসে অভিযোগ করেন সৈকতটা সুন্দর না। জোয়ারের সময় সৈকতে ভবনের ভাঙা অংশ পানিতে ডুবে থাকে, তাই গোসল করার সময় অনেক পর্যটক আহত হন।’
কুয়াকাটার পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা বলেন, ‘সৈকত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখভাল করার দায়িত্ব সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির। কিন্তু কমিটি এ বিষয়ে আলোচনা করে না। পৌরসভার পক্ষ থেকে সকালে সৈকতের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়, তবে সেটা যথেষ্ট না।’
সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও পর্যটন হলিডে হোমসের ম্যানেজার এমডি ফারুকুজ্জামান বলেন, ‘কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের উন্নয়নে ব্যবস্থাপনা কমিটিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। কারণ সৈকতের পরিচ্ছন্নতায় পর্যপ্ত বরাদ্দ নেই। আমি নিজেও দেখেছি ভবনের ভাঙা অংশ সৈকতে পড়ে আছে। কিভাবে সৈকতটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।’
জেলা প্রশাসক ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত কমিটি সভাপতি ড. মাছুমুর রহমান বলেন, ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখলে পর্যটকরা কুয়াকাটার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। শিগগিরই ব্যবস্থাপনা কমিটি, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
/এসএনএইচ/এফএস/