X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘ঘরবাড়ি চাই না, কাজ চাই’

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
০৬ আগস্ট ২০১৭, ০৮:০০আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০১৭, ০৮:১৫
image

 

 

সব হারিয়ে রাঙামাটির আশ্রয়কেন্দ্রে রাবেয়া

‘ঘরবাড়ি, স্বামী হারিয়ে নিঃস্ব আমি। সরকার ঘরবাড়ি বানিয়ে দেবে শুনেছি। কিন্তু এর চেয়ে আমার কাছে দু’টি ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ বড়। যদি একটা কর্মসংস্থান হতো, তাহলে ছেলেমেয়েদের লেখাপাড়া শিখিয়ে মানুষ করতে পারতাম, সুন্দরভাবে ওদের বাচাঁতে পারতাম। আক্ষেপ আর কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন পাহাড় ধসে সব হারানো বিধবা রাবেয়া আক্তার।

গত ৯ জুন রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে স্বামী দরবেশ আলীকে হারান রাবেয়া আক্তার। গত ১৩ জুন প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে বাড়িঘর ঝুঁকিতে পড়ে। সব হারিয়ে রাঙামাটি মেডিক্যাল ছাত্রাবাসে জায়গা হয়েছে তার।

আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া রাবেয়া বলেন, “এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ছেলের রাকিব হোসেনের বয়স ছয় বছর, মেয়ে ফারিয়ার বয়স তিন বছর। আমাদের বাসা ছিল এনএসআই  অফিস সংলগ্ন এলাকায়। গত ৯ জুন আমার বাসার ওপর গাছ পড়ে ঘরটা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পশেই আমার বোনের বাসায় আমরা অবস্থান নিই। গত ১৩ জুন সকাল আটটার দিকে আমার স্বামী দরবেশ আলীর কাছে ফোন আসে তার ভাগিনার। তারা থাকতেন রূপনগর এলাকায়। ভাগিনা ফোনে বলেন, ‘মামা আমাদের ঘরবাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ যেকোনও সময় ভেঙ্গে যেতে পারে, বাসা থেকে মালগুলো বের করতে হবে। তাড়াতাড়ি লোকজন নিয়ে আসেন।আমার স্বামী তাদের সাহায্য করার জন্য বাসা থেকে বের হন। এটাই ছিল আমার সঙ্গে ওনার শেষ দেখা।

 

আশয় নেওয়া বিভিন্ন পরিবারের লোকজন

রাবেয়া জানান, তার স্বামী বাসা থেকে বের হওয়ার ঘণ্টা দুয়েক পর মামি ফোন করে জিজ্ঞাসা করে, তোর স্বামী কোথায়? রাবেয়া তাকে জানান,ভাগিনার বাসায় যাওয়ার জন্য কিছুক্ষণ আগে বের হয়েছেন। তখন তার মামি তাকে বলেন, ‘দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখ ওখানে আছে কিনা।

 রাবেয়া বলেন,‘তখনও আমি কিছুই জানতাম না। আসলে কী ঘটেছে। আমার পাশের বাসার মামীকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করি কিন্তু আমার স্বামীকে পাইনি। তার মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে তার নম্বর বন্ধ পাই। দ্রুত ভাগিনার বাসায় গিয়ে দেখি ২৫ হাতের ঘরটি ৫০ ফুট নিচে মাটিতে চাপা পড়ে আছে। ঘরের কোনও অস্তিত্বও নাই। তিন পাহাড়ের মাটি এমনভাবে স্রোতের মতো নেমেছে, নতুন আরেকটা পাহাড় তৈরি করেছে সেখানে। ঘটনার পর থেকে সাত থেকে আট দিন অনেক খুঁজেছি কিন্তু সেখানে ভাগিনা, ভাগিনার বউ আর আমার স্বামীর কারো লাশ আমরা খুঁজে পায়নি।’

সরকারি সহায়তার বিষয়ে রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘জেলা প্রশাসক এবং জেলা পরিষদ থেকে বিশ হাজার করে টাকা দিচ্ছে। যা আমার সন্তানের জন্য পনের বছরের ডিপোজিট করে ব্যাংকে রাখা হয়েছে। এখন যদি সরকার ঘর করে দেয় তাহলে সন্তানদের মানুষ করতে পারতাম।’

পাহাড় ধসে আশ্রয় নেওয়া লোকজন

রাবেয়া আরও বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েগুলোকে কী খাওয়াবো, কিভাবে পড়াশুনা করাবো, আমি তো কোনও চাকরি করি না। সরকার যদি আমাকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে পারতাম।’

 উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন প্রবল বর্ষণে জনের মতো মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আর সরকারের পক্ষ থেকে বাড়িঘর হারা মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করে। এখন পর্যন্ত ৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় এক হাজার ৪০০ জন অবস্থান করছেন। সরকারি হিসাবে যে পরিমাণ তাদের হাতে অর্থ মজুদ আছে তাতে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত চালাবে যাবে এসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলো।

/এসএমএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা