X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাটে আ. লীগ-বিএনপি দুই দলেই কোন্দল

আলমগীর চৌধূরী, জয়পুরহাট
০৮ আগস্ট ২০১৭, ০৩:৫৩আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০১৭, ০৪:১৭

জয়পুরহাট জয়পুরহাটের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব প্রবল। হাইব্রিড মিশ্রিত মূলধারা ও খাঁটি মূলধারা নামের দুই পক্ষ পরস্পরের মুখোমুখি। নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে যোগ্য অনেক নেতা দলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার অভিযোগ থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে দলটি গোছানো। সাংগঠনিকভাবেও তারা অনেক মজবুত। অন্যদিকে মামলা,ক্ষমতাসীন দলের দাপট, ভয়ভীতি এবং পুলিশি অভিযান ও কেন্দ্র থেকে চাপানো জেলা কমিটির দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত জেলার বিএনপি। নতুন জেলা কমিটির মাধ্যমে জাতীয় পার্টি জেলায় দল গোছানোর তৎপরতা শুরু করেছে। তবে রাজনীতির মাঠে এখনও নিষ্ক্রিয় জামায়াতে ইসলামী।

ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব

জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগের এখন দুই পক্ষ। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব দ্বন্দ্বের কারণে তৃণমূলও দ্বিধাবিভক্ত। স্থানীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে দলের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে তৃণমূলও ভাগ হয়ে যে যার মত পক্ষ বেছে নেয়। উভয় পক্ষের দ্বন্দ্ব এতোটাই তীব্র যে,দলের রাজনৈতিক কার্যক্রমও দুই ভাগ হয়ে পালন করছেন নেতাকর্মীরা।

জয়পুরহাট জেলার সংসদীয় আসন দু’টি। একটি জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা নিয়ে গঠিত জয়পুরহাট-১ এবং অন্যটি কালাই,ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত জয়পুরহাট-২ আসন। দশম সংসদ নির্বাচনে দুটি আসন আ. লীগের হলেও পঞ্চম থেকে নবম পর্যন্ত আসন দুটি বিএনপি’র দখলে ছিল। দলটির নেতাকর্মীদের দাবি অতিতের চেয়ে জেলায় আ. লীগ এখন অনেক শক্তিশালী। ব্যাপক উন্নয়নের কারণে দলটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

জেলায় এক পক্ষে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি এবং অপর পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আ. লীগের সভাপতি সামছুল আলম দুদু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক এসএম সোলায়মান আলী। স্বপনের পক্ষে আছেন জেলা আ. লীগের বড় একটি অংশ সহ কালাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলার ৫ পৌর মেয়র এবং ৩২ ইউনিয়নের অধিকাংশ চেয়ারম্যান। ফলে দলে তার অবস্থান অনেক মজবুত।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট-১ থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান এমপি ও জেলা আ. লীগের সভাপতি সামছুল আলম দুদু,সাধারণ সম্পাদক এসএম সোলায়মান আলী, পাঁচবিবি পৌর মেয়র ও পাঁচবিবি উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, জেলা আ. লীগের সহ-সভাপতি নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল,অধ্যক্ষ খাজা শামছুল আলম,যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন, জয়পুরহাট পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক,জয়পুরহাট সদর উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম।

জয়পুরহাট-২ (কালাই-ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর) থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সাংদদ ও আ. লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন,জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম সোলায়মান আলী,কালাই পৌর মেয়র হালিমুল আলম জন এবং সাবেক মেয়র তৌফিকুল ইসলাম তালুকদার বেলাল।

জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলী সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,দলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছি। দলে বিভাজন প্রশ্নে তিনি আ. লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপিকে দায়ী করেন।

জেলা আ. লীগের সভাপতি ও জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু বলেন,‘দলের বিভাজন নিরসনে ঢাকায় উভয় পক্ষের শীর্ষ নেতৃবৃন্দদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে মিটিং হলেও জেলায় একটি পক্ষ তাদের মিটিংয়ে আসেন না। তারা আলাদাভাবে মিটিং করেন।

কেন্দ্রীয় আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন,‘জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মকাণ্ডে অধিকাংশ নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ। জেলা কমিটির মেজরিটি তাদের বিপক্ষে। দলের স্বার্থে দেশের স্বার্থে সেই মেজরিটিদের সঙ্গে নিয়ে জয়পুরহাটের উন্নয়নে কাজ করছি।

দলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপি

জয়পুরহাট জেলা বিএনপির দুর্গ। সেই দুর্গের প্রতিপক্ষ আ. লীগ হবে এমন কথা স্বাভাবিক হলেও বাস্তবে ঘটছে তার উল্টো। এখন বিএনপি’র শত্রু আ. লীগ নয়। বিএনপি’র শত্রু বিএনপি। দলীয় কোন্দলে রীতিমত বিপর্যস্ত এখন জেলার জনপ্রিয় এ দলটি। দলের নতজানু অবস্থার কারণে জেলায় বিএনপি’র মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও শঙ্কিত। জেলা সভাপতি ও জয়পুরহাট-১ আসনের সাবেক এমপি মোজাহার আলী প্রধানের সাথে জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার বিরোধ দীর্ঘদিনের হলেও কেন্দ্র থেকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি আংশিক জেলা কমিটির ঘোষণা দেওয়ার পর এবারের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে।
ওই কমিটিতে সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান পুনরায় নির্বাচিত হলেও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম আসে অ্যাডভোকেট নাফিজুর রহমান পলাশের। জেলা বিএনপির ১ নম্বর সদস্য করা হয় প্রয়াত সাবেক এমপি আব্দুল আলীমের ছেলে ফয়সাল আলীমকে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয় মোজাহার আলীর ছেলে জেলা ছাত্রদল সভাপতি মাসুদ রানাকে। আর ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফাকে করা হয় দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি। শহর বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলজার হোসেন সহ স্থান হয়নি দলটির অনেক ত্যাগী নেতাদের। নতুন এই কমিটি ঘোষণার পরই নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে আন্দোলনে নামেন সাধারণ সম্পাদকের দাবিদার দলটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি এমপি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা। বিভিন্ন থানায় তারা বিক্ষোভ এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কুশপুত্তলিকা দাহ করে কমিটি বাতিলের দাবি জানায়। একই দাবিতে বিএনপি’র জেলা কার্যালয়েও তারা আগুন দেয়। এসব ঘটনার পর খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুক গত ৯ মে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সভা করতে এলে তার সামনেই ফয়সাল আলীম ও ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার সমর্থকরা মোজাহার আলী প্রধানের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে। পরে দুই পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়।

তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অভিমত,জেলায় সাধারণ মানুষ তাদের সঙ্গেই আছেন। কিন্তু নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে মানুষ তাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পারছেন না। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু ক্ষমতায় থাকলে নেতারা হুঙ্কার ছাড়তে পারেন। আর ক্ষমতা নাই তাই লেজ গুটিয়ে কেউ বাড়িতে কেউ আত্মগোপন করে পালিয়ে আছে। তারা এর জন্য জেলা নেতৃবৃন্দকে দায়ী করেন।

জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মতিয়র রহমান বলেন,কেন্দ্র থেকে ২৬ সদস্যের জেলা কমিটির আংশিক যে তালিকা পাঠানো হয়েছে সেই নেতাদের সাথে জেলা সভাপতি মোজাহার আলী প্রধানের অনৈক্যের কারণে জয়পুরহাটে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে।

জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা বলেন,‘জেলা বিএনপি’র সভাপতি মোজাহার আলী প্রধানের ব্যর্থ নেতৃত্বের কারণে জেলায় বিএনপি এখন ডুবতে বসেছে।

জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও জয়পুরহাট-১ আসনের সাবেক এমপি মোজাহার আলী প্রধান বলেন,‘দলের মধ্যে কোন বিভাজন নেই। ক্ষমতাসীন দলের সাথে আঁতাত করা দলীয় একটি মহল বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট-১ থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান, বিএনপির প্রয়াত এমপি আব্দুল আলীম এর ছেলে ফয়সাল আলীম। জয়পুরহাট-২ (কালাই-ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর) থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি ইঞ্জিণিয়ার গোলাম মোস্তফা,যুগ্ম সম্পাদক আলী হাসান মুক্তা,লায়ন সিরাজুল ইসলাম বিদ্যুত, ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রওনকুল ইসলাম টিপু চৌধূরী ও আক্কেলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কমল।

জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী

ফেব্রয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠনের পর থেকে জেলায় জাতীয় পার্টিকে চাঙ্গা রাখতে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করেছে দলটির নবনির্বাচিত জেলা কমিটি। তবে জেলায় মহাজোটের শরীক এই দলটি ক্ষমতাসীন দলের কোন সুযোগ সুবিধা না পেয়ে ক্ষুব্ধ এর নেতা-কর্মীরা। মাঝে মধ্যে হঠাৎ করেই দৃশ্যমান কর্মসূচী চোখে পড়লেও কার্যত তাদের কর্মসূচীর ধারাবাহিকতায় সবসময় ছন্দপতন ঘটেছে। গত দশম সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট-১ আসনটি মহাজোটের শরীক দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হলেও দল মনোনীত নেতা আ.স.ম মোক্তাদির তিতাস নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় সেটি আ. লীগের দখলে যায়। ভোটারবিহীন ওই নির্বাচনে জেলা আ. লীগের সভাপতি সামছুল আলম দুদু দল থেকে মনোনয়ন দাখিল করে বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আ.স.ম মোক্তাদির তিতাস জানান, গত দশম সংসদ নির্বাচনে দল তাকে মহাজোটের প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও পারিপার্শ্বিক কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। এবারও কেন্দ্র থেকে জয়পুরহাট-১ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে ঈঙ্গিত পেয়ে তিনি মাঠে গণসংযোগ করছেন।

শতাধিক নাশকতার মামলায় ভারাক্রান্ত জামায়াতে ইসলামী নেতাদের গত কয়েক বছরে জেলার কোথাও সংগঠিত হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়নি।

/এমপি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
আর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
চ্যাম্পিয়নস লিগআর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
টাইব্রেকারে ম্যানসিটির শিরোপা স্বপ্ন ভাঙলো রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগটাইব্রেকারে ম্যানসিটির শিরোপা স্বপ্ন ভাঙলো রিয়াল
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫