গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে নীলফামারীতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার (৯ আগস্ট) রাত থেকে শুক্রবার সারাদিন টানা বৃষ্টির কারণে নীলফামারী জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা ও তিস্তা নদী অববাহিকার গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে। ভারী বর্ষণে শুক্রবার প্রায় তিন হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় ওই সব পরিবারকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০) দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শুক্রবার ডালিয়া পয়েন্টে সকাল ৬টা থেকে পানি বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বিকাল ৩টায় পানি আরও দুই সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ টি স্লুইচ গেইট (জলকপাট) খুলে রাখা হয়েছে। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত (রাত সাড়ে ৯টা) উজানের ঢল ও অবিরাম বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাহিনুর আলম ও ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বন্যা কবলিত এলাকার পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে ডিমলাসহ আশেপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
ডালিয়া পানি উনয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, শুক্রবার তিস্তা অববাহিকায় ডালিয়া পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৩৩ মিলিমিটার। বুধবার ১৫৮ মিলিমিটার ও বৃহস্পতিবার ১৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল তিস্তা অববাহিকায়। ফলে গত ৭২ ঘণ্টায় ৪৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
ডিমলা আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উপজেলা শহরে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১৩৫ মিলিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা সদরে বৃষ্টিপাত হয়েছে দুইশত মিলিমিটার। এতে রোপা আমন ক্ষেতসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলা সদরের খোকসাবাড়ি ইউনিয়নের ইছামতি শাখা নদীর পানি উপচে ওই ইউনিয়নের কুমারপাড়া গ্রামটি তলিয়ে গেছে। বন্যা কবলিত পরিবারগুলোকে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে জানান, ইউপি চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান।
রবিবার (৬ আগস্ট) ডিমলা টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের পূর্বখড়িবাড়ি এলাকায় তিস্তা নদীর ডান তীরে স্বপন বাঁধ ভেঙে হয়। বৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই গ্রামে হুহু করে নদীর পানি প্রবেশ করে। গ্রামের ৭শ পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এছাড়া ১৫টি পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ৫০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন।
উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, ঝাড়শিঙ্গেশ্বর গ্রামে ৭৪৫টি পরিবারের ঘরবাড়িও তলিয়ে গেছে। খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কিছামত গ্রামে ২৩০টি পরিবারের বসত ঘরের ভেতর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন।
জলঢাকা খুটামারী ইউনিয়নের বুড়িখোড়া নদীর পানি উপচে জেলেপাড়া গ্রামের ৫৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ শামীম।
ডিমলা উপজেলার ছোটখাতা কুমলাই মৎস্য চাষী সমবায় সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে তার সমিতির ৪শ একর পুকুরের ৫ লক্ষাধিক টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, তার এলাকার পুকুরের ২ লক্ষাধিক টাকার মাছ ভেসে গেছে।
/এনআই/