গত তিন দিনের মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ ও ভারতের গজলডোবো ব্যারাজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়াসহ ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে নীলফামারী সদর ও ডিমলা উপজেলার ৫৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘লালমনিরহাট জেলার দোয়ানিতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি শনিবার সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৯টায় ২৭ সেন্টিমিটার (৫২ দশমিক ৪০ মিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সব (৪৪টি) স্লুইস গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা প্রশাসক খালেদ রহীম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘তিস্তায় ভারী বর্ষণ ও ভারতের গজলডোবো ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে দেওয়ায় ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের ত্রাণ সহায়তার জন্য ওপরে বলা হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, তিস্তায় ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। যে কারণে তিস্তার তীরবর্তী লোকজনকে (বন্যার্তদের) মাইকিং করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, তিস্তার বন্যায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়বাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ী ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুণ্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ২৪টি চর ও চর গ্রামের ১৫ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা ও কালিগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত চর ও চরের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে।
ডিমলা টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘গত বুধবার ভোর রাত থেকে অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এতে করে ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি, পূর্বখড়িবাড়ি, টাপুরচর, ঝিঞ্জিরপাড়া ও মেহেরটারী গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।’
উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ‘ইউনিয়নের পশ্চিম বাইশপুকুর, পূর্ব বাইশপুকুর, সতিঘাট ও ছোটখাতা গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে বেশ কিছু বাড়িতে পানি উঠেছে।’
এদিকে নীলফামারী সদরের ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর ফলে শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা করুণ। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে শহরের বাড়াই পাড়া, বাবু পাড়া, সওদাগড় পাড়া, নিউবাবুপাড়া, সবুজ পাড়া, থানা পাড়ার প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুজার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত তিন দিনের অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ২৫ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য ওজমান গনি নানদিয়া জানান, বুড়িখোড়া নদীর পানি বেড়ে চারটি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এর ফলে ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত শুক্রবার (১১ আগস্ট) থেকে চুলা জ্বালাতে না পেরে শুকনা খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করছেন তারা।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউর করিম জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলে ও ভারত থেকে নেমে আসা তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেট খুলে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যার্তদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে ও দুর্গতদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
/জেবি/
আরও পড়তে পারেন: চুয়াডাঙ্গায় আড়াই কেজি স্বর্ণের গহনাসহ একজন আটক