X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যায় রাজশাহীর পাঁচ উপজেলায় ৬ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি

রাজশাহী প্রতিনিধি
১৭ আগস্ট ২০১৭, ০২:২৫আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০১৭, ০২:২৫

রাজশাহীর মোহনপুরের ধুরইল বাধ ভেঙে ফসলের মাঠ ডুবে গেছে উজানের ঢল ও বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট বন্যায় নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়ে রাজশাহীর পাঁচ উপজেলায় ৫ হাজার ৮৩৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্যমতে, রাজশাহীর পাঁচ উপজেলার ৯৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর জমির মধ্যে পানিতে আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে দুই হাজার ১২১ হেক্টর ও সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে তিন হাজার ৭১৩ হেক্টর জমির ফসল। এরমধ্যে রোপা আউশ ৩৮ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমির মধ্যে সম্পূণ পানিতে তলিয়ে গেছে তিন হাজার ১৪ হেক্টর জমির ফসল। আর অংশিক তলিয়ে গেছে এক হাজার ৪৪৮ হেক্টর জমির ফসল।

এছাড়াও ৫৬ হাজার ২০৭ হেক্টরের মধ্যে আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৪৮৪ হেক্টর ও পুরো ক্ষতি হয়েছে ৬৬৬ হেক্টর জমির রোপা আমন।

রাজশাহীতে পানিতে ডুবে গেছে রাস্তা, ছবি রাজশাহীর পাঁচ উপজেলার মধ্যে বর্ষণ ও বন্যার পানিতে তানোরের ২২ হাজার ৮২ হেক্টর জমির মধ্যে চান্দুড়িয়া, তানোর পৌরসভা, তালন্দ, কামারগাঁ ও কমলা ইউনিয়নে আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২২১ হেক্টর জমির রোপা আমন। গোদাগাড়ী উপজেলার ৩৬ হাজার ৬২২ হেক্টর জমির মধ্যে চব্বিশনগর, বিড়ইল, কাঁঠালবাড়ীয়া, ভাটোপাড়া, দেওপাড়া, ঈশ্বরীপুর, রাজাবাড়ী ও গোদাগাড়ী পৌরসভা এলাকার ৩৬০ হেক্টর জমির রোপা আপন পানিতে তলিয়ে গেছে। পবা উপজেলার নয় হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমির মধ্যে পারিলা, নওহাটা, হুজুরিপাড়া, কাটাখালী পৌরসভা, হড়গ্রাম ও বড়গাছী এলাকায় ২১ হেক্টর সম্পূর্ণ ও ১০৬ হেক্টর জমির আংশিক রোপা আমনের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া এই উপজেলায় সবজি ১৭ হেক্টর ও সাত হেক্টর মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে।

এদিকে, বন্যায় রাজশাহীর মোহনপুর ও বাগমারা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুইটি বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। দুই উপজেলায় ২৯ হাজার ১৭২ হেক্টর জমির মধ্যে পাঁচ হাজার ১০২ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে বাগমারা উপজেলার ১৯ হাজার ১৩১ হেক্টর জমির মধ্যে বাসুপাড়া, কাচারীকোয়ালীপাড়া, গোয়ালকান্দী, গনীপুর, গোবিন্দপাড়া, নরদাশ, সোনাডাঙ্গা, দ্বীপপুর, আউচপাড়া, ঝিকরা, শ্রীপুর, তাহেরপুর, শুভডাঙ্গা ও ভবানীগঞ্জ এলাকার এক হাজার ৯৪৯ হেক্টর রোপা আউশ, ১৯ হেক্টর রোপা আপন, ১১ হেক্টর সবজি, দুই হেক্টর পান বরজ ও এক হেক্টর জমির মরিচ ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।

এছাড়া এই উপজেলায় ৫৭৮ হেক্টর রোপা আউশ, ১৪ হেক্টর রোপা আপন, ২১ হেক্টর সবজি, ১৪ হেক্টর পান বরজ ও ছয় হেক্টর জমির মরিচ ক্ষেতের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।

রাজশাহীতে বন্যার পনিতে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ইউনিয়নের শিবনদীর বাঁধ ভেঙ্গে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে এই উপজেলায় এক হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির ফসল একেবারে পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া এক হাজার ১৬৭ হেক্টর জমির ফসলের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৬৫ রোপা আউশ, ২৬৬ হেক্টর রোপা আমন, ১৩ হেক্টর সবজি, পাঁচ হেক্টর পান বরজ ও এক হেক্টর জমির মরিচ ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। আর ৯০০ হেক্টর রোপা আউশ, ১৪৩ হেক্টর রোপা আমন, ১০২ হেক্টর সবজি, ২০ হেক্টর পান বরজ ও দুই হেক্টর মরিচ ক্ষেতের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এই উপজেলার ধুরইল, ঘাসিগ্রাম ও মৌগাছি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘যেসব এলাকায় বন্যা হয়নি। সেসব এলাকা থেকে চারা সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে দেওয়ার জন্য কাজ করছি। আবার দুই-তিন দিনের মধ্যে পানি কমে গেলে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। এছাড়াও উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’

মঞ্জুরুল হক আরও বলেন, ‘বন্যার পানি কমে গেলে কোন এলাকায় কোন ফসলের বীজ বপন করতে হবে, সে ব্যাপারেও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেব।’

তানোর পৌরসভা এলাকার বেলপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান ও টিপু সুলতান জানান, বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পানিতে নিচু এলাকার প্রায় ১০ বিঘা জমির রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে।

তানোর পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘এলাকা ঘুরে পানিবন্দি মানুষ ও রোপা আমন ধানের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করছি। তাদের সরকারি সাহায্যের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি।’

তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শওকাত আলী বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করার জন্য কৃষি অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া পানিবন্দি মানুষদের তালিকা করার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাথমিক তথ্য নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’

মোহনপুর উপজেলার কৃষক সাহেব আলী, মাজেদুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, ইয়াদ আলী, এমদাদ হোসেন জানান, বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে আমাদের ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে এখনও কেউ সহযোগিতা পায়নি।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে।’

/এসএমএ/  

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!