X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মোর জন্যে একনা খাবারের ব্যবস্থা করি দ্যাও’

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
১৭ আগস্ট ২০১৭, ১১:৪৮আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৩২

বন্যায় খাদ্যের অভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধা ছবিরণ ‘ভোক ( ক্ষুধা) সহ্য হয় না, মোর জন্যে (আমার জন্য) একনা (একটু) খাবারের ব্যবস্থা করি দ্যাও। এই বয়সে যদি না খায়া মরং (না খেয়ে মরি) তাইলে কী হইবে বাবা’— ত্রাণ সহায়তা পেতে এভাবেই নিজের আকুতি প্রকাশ করলেন ৮০ বছরের বৃদ্ধা ছবিরণ। বন্যার কারণে ছয় দিন ধরে পাকা রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

শুধু ছবিরণ নন, ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন পাঁচগাছী ইউনিয়নের ঝাকুয়া পাড়ার ৭ নং ওয়ার্ডের যাত্রাপুরগামী রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া আরও অনেকে। তাদেরই আরেকজন তহিমা (৩৫)। মানসিক বিকারগ্রস্ত স্বামী তাকে ছেড়ে গেছে অনেক আগে। দুই সন্তানের জন্য খাবার যোগাতে দিনমজুরের কাজ করতেন তহিমা। সেটাও হাতছাড়া হয়েছে বন্যায়। এ কারণে এখন সন্তানদের তিন বেলা খাবার দিতে পারছেন না তিনি।

ত্রাণ সহায়তা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাস্তার পাশে আশ্রয় নেওয়া বানেছা নামে এক বানভাসি। তার প্রশ্ন, ‘হামার কি এক মুঠও হক নাই! পাঁচ-ছয়দিন ধরি রাস্তাত পড়ি আছি, মেম্বার-চেয়ারম্যান কি হামাক (আমাকে) দেখে না?’

বুধবার (১৬ আগস্ট) সদর উপজেলার যাত্রাপুর ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তা ও উঁচু বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিদের সঙ্গে কথা বলে তাদের খাদ্যকষ্টের এমন করুণ চিত্র দেখা গেছে। তাদের কেউ কেউ ১০ কেজি চাল পেলেও বেশিরভাগ বানভাসির ভাগ্যে জোটেনি কোনও ত্রাণ সহায়তা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা রাস্তার পাশে এভাবেই ঘর বানিয়ে থাকছে

পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাকে যে পরিমাণ ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয় সবই বিতরণ করি। কিন্তু এগুলো চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ কারণে অনেক পরিবার ত্রাণ বঞ্চিতই থাকে, এখানে আমার করার কিছু নেই।’

এদিকে যাত্রাপুর ইউনিয়নের ওয়াপদা বেড়িবাঁধে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় তিন শতাধিক বানভাসি পরিবার। বাঁধের দুই পাশে গবাদি পশু আর মানুষের দিন কাটছে একসঙ্গে। বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও এখনও প্রতিটি বাড়ি হাঁটু পানির নিচে। কোনোটি আবার একবুক পানিতে তলিয়ে আছে।

ব্রহ্মপুত্র আর ধরলার মিলিত স্রোতে নিজেদের ঘর ভেসে যাওয়ায় ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদিপাড়ার ফাতেমা ও মর্জিনা। সন্তানদের নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিলেও কোনও ত্রাণ পাননি বলে জানান গৃহহারা এই নারীরা। আর বন্যার পানি নেমে গেলে কোথায় গিয়ে উঠবেন তাও ভেবে পাচ্ছেন না তাদের কেউ।

একই বাঁধে আশ্রয় নেওয়া আমিনা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পরিবার নিয়ে পাঁচ দিন ধরে এখানে আছেন তিনি। তার কপালে জুটেছে ১০ কেজি চাল। এছাড়া কোনও ত্রাণ সহায়তা মেলেনি। তার ভাষ্য, ‘খালি চাউল দিয়া কি করমো? আলুর কেজি ৩০ ট্যাকা, আলু ভর্তা করিও ভাত খাবার পাই না। আর বাইগনের (বেগুনের) বগলত (কাছে) যাওয়া যায় না।’ ‘মোর জন্যে একনা খাবারের ব্যবস্থা করি দ্যাও’

পলিথিন, চট আর কাপড় দিয়ে ছাউনি নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া এই পরিবারগুলোর জন্য বাড়তি দুশ্চিন্তা হিসেবে আছে বৃষ্টির শঙ্কা। নিজেদের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে চর পার্বতীপুরের সমস্ত বেগম (৪০) বলেছেন, ‘কারও খাবার আছে, কারও নাই। বৃষ্টি হইলে ছওয়া-পওয়া (বাচ্চাদের) নিয়া বসি থাকা নাগে।’

গারুহারা গ্রামের রাহেনার কথায়, ‘বান আইসে, পানি ওঠে, বাড়িত কষ্ট করি রান্দি খাই। কিন্তু এবার বাড়ি ছাড়ি আসা নাগছে। থাকারও কষ্ট, খাওয়ারও কষ্ট!’

এদিকে বানভাসিদের খাদ্য সংকটের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। এছাড়া বেশিরভাগ এলাকাতেই দেওয়া হয়নি কোনও টিউবওয়েল কিংবা অস্থায়ী স্যানিটারি লেট্রিন। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও ভুগছেন এসব বানভাসি পরিবারের শিশুসহ সবাই।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবার বন্যা কবলিত। আমি নিজেও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। আশ্রিত পরিবারগুলোকে ত্রাণ সহায়তা দিতে গেলে প্রায় ৫০ মেট্রিক টন চাল প্রয়োজন। কিন্তু এসেছে মাত্র ১০ মেট্রিক টন। আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, পেলে দেওয়া হবে।’

বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোর জন্য কিছু টিউবয়েল দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে স্বীকার করেছেন ইউনিয়নের এই চেয়ারম্যান। তিনি আশ্বাস দিয়ে জানান, তারা আরও টিউবওয়েল বসানোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

ত্রাণ সংকটসহ বানভাসিদের বিভিন্ন সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন আল পারভেজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আরও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। চেয়ারম্যানদের বলে হয়েছে যেন প্রত্যেক বানভাসি ত্রাণ সহায়তা পায়। আশা করি সমস্যা হবে না।’

/এআর/জেএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!