ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চাঁদপুর সদর উপজেলার পদ্মা-মেঘনা পাড়ের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন। বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানির স্রোত বাড়ায় এমন ভাঙন চলছে। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) থেকে ওই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। পদ্মার ভাঙনে এ পর্যন্ত দেড়শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটেমাটি হারানো পরিবারগুলোর মাঝে চলছে আহাজারি। আবার আতঙ্কিত অনেকেই ব্যস্ত ঘর ও আসবাবপত্র সরিয়ে নেয়ার কাজে।
এদিকে ভাঙনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, পদ্মা-মেঘনা বেষ্টিত এ এলাকাটি খুবই ভাঙন প্রবণ হওয়ায় আপাতত তাদের কিছুই করার নেই।
রাজরাজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী জানান, বুধবার দিনগত রাত ১২টার পর থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত গড়ে এক হাজার ফিট এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটেহারা হয়েছেন কমপক্ষে ১৫০ পরিবার। তারা তাদের ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। আবার অনেকে নিজের বসতঘরও রক্ষা করতে পারেননি।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ইউনিয়নের পূর্ব পাশে মেঘনা এবং ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পদ্মা নদী। চরাঞ্চল হওয়ায় এ এলাকা ভাঙন প্রবণ। কয়েক বছর আগে রাজরাজেশ্বর এলাকায় একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। তবে ভাঙন প্রবণ এলাকা হওয়ায় তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী জীবন কৃষ্ণ দাস অনুমতি দেননি। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, এখানে কোনও স্থায়ী স্টাকচার নির্মাণ করা উচিত হবে না। সেসময় থেকেই এ এলাকায় ভাঙন চলে আসছে।
ভাঙনকবলিত লোকজন জানান, জোয়ার শেষে ভাটা শুরুর সময়টাতেই ভাঙন শুরু হয়। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে আবারও ভাঙন শুরু হয়।
তারা বলছেন, আমরা কোনও ত্রাণ চাই না। আমরা চাই আমাদের ভিটে রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। এলাকার ভাঙন ঠেকাতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
রাজরাজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, ভাঙনের খবর পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, এসিল্যান্ডসহ কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কর্মকর্তারা চিড়া-গুড় বিতরণ করেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের পক্ষ থেকে কিছু ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ এলাকাটির একপাশে মেঘনা আরেক পাশে পদ্মা। এখন ভাঙছে পদ্মা অংশের এলাকা। রাজরাজেশ্বরে আমাদের বাস্তবায়িত কোনও প্রকল্প নেই। ওই এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে আমাদের আপাতত তেমন কিছুই করার নেই। তাছাড়া ওখানে প্রটেকশন দেওয়া খুবই কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পওর বিভাগের অধীনে যেসব প্রকল্প আছে সেগুলোই আমরা দেখছি। এসব প্রকল্পের অনেক এলাকাতেই সমস্যা হচ্ছে সেগুলো নিয়েই আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’
তিনি জানান, আজকে গোয়ালন্দ ঘাটে পদ্মার ডেঞ্জার লেভেল ছাড়িয়ে গেছে। বন্যার পানির কারণে চাঁদপুর অঞ্চলে পানির চাপ বেড়েছে। চাঁদপুরে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ৩ দশমিক ৬৩, দুপুর ১২টায় ৩ দশমিক ৭৭ মিটার পানির লেভেল ছিল। এখানে ডেঞ্জার লেভেল ৪ মিটার।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। নদীর অবস্থা খারাপ। যে কোনও মুহূর্তে আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘সেখানে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের লোকজন ওই এলাকায় আছে। ঘরবাড়ি হারানো লোকজনের তালিকা করা হয়েছে। তাদের সহায়তা করার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি।’
/বিএল/
আরও পড়ুন:
গাইবান্ধায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন বন্যাদুর্গত ৪ লাখ মানুষ