X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

গো-খাদ্য সংকটে বানভাসি মানুষ, নেই কোনও সরকারি উদ্যোগ

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
১৮ আগস্ট ২০১৭, ১৫:২১আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০১৭, ১৫:২৩

গো-খাদ্য সংকটে বানভাসিরা বন্যায় গো-খাদ্যের চরম সংকটে পড়েছেন কুড়িগ্রামের বানভাসি মানুষ ও খামারিরা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ উঁচু বাঁধ ও রাস্তার ধারে মানুষের সঙ্গে হাজার হাজার গবাদি পশু আশ্রয় পেয়েছে। তবে গো-খাদ্য সংকটে ভুগছে এসব গবাদি পশু। এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি এসব গবাদি পশুদের জন্য সরকারিভাবে এখনও কোনও গো-খাদ্য সরবরাহ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার গবাদি পশুর মালিক ও জনপ্রতিনিধিরা।

জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফতর সূত্র মতে, পানিবন্দি প্রতিটি পশুর জন্য দিনে এক কেজি দানাদার খাদ্য ও তিন কেজি খড়ের প্রয়োজন। কিন্তু জেলার পানিবন্দি প্রায় ৫০ হাজার গবাদি পশুর ভাগ্যে এখন পর্যন্ত তা জোটেনি।

বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বানভাসি মানুষজন তাদের গবাদি পশু নিয়ে বিভিন্ন বাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। নিজেরা খোলা আকাশের নিচে থাকলেও গবাদি পশুদের পলিথিন কিংবা কাপড়ের তৈরি ছাউনিতে রাখছেন। অনেকের সেই সামর্থ্যটুকুও না থাকায় গবাদি পশুদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করছেন। কষ্টে পালন করা এসব গবাদি পশু চুরি কিংবা হারানোর ভয়ে কাটাচ্ছেন নির্ঘুম রাত। কিন্তু বন্যার পানি থেকে নিজেদের গবাদি পশুদের রক্ষা করতে পারলেও গো-খাদ্য সংকটে এসব পশুর জীবন রক্ষা করাই তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। নিজেদের খাদ্য সংকটের সঙ্গে সঙ্গে গবাদি পশুর খাদ্য সংকটে নাকাল হয়ে পড়েছেন জেলার কয়েক লাখ বানভাসি।

সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের স্লুইচগেট সড়ক, একই ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তা, যাত্রাপুর ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ জেলার উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকার বানভাসি মানুষজন গো-খাদ্যের চরম সংকটে ভুগছেন।

পাঁচগাছী ইউনিয়নের ছত্রপুর পানাতি পাড়ার হোসেন (৫৫) বলেন, ‘৮৮র বন্যাতেও আমার বাড়িত পানি ওঠে নাই। এবার বাড়িত এক বুক পানি। বউ-বাচ্চা আর গরু নিয়া আশ্রয় নিছি বাঁধের মধ্যে। নিজেরা কোনও রকম দুই বেলা খাবার পাইলেও গরুগুলার খাবার জোগার করবার পাই না। চতুরপাকে পানি, কোনও ঘাস নাই। পোয়ালের (খড়ের) ডিপি পানিত ডুবছে। গরু নিয়া খুব কষ্টে আছি।’

যাত্রাপুর ইউনিয়নের ওয়াপদা বেড়ি বাঁধে আশ্রয় নেওয়া গবাদি পশুর মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও তারা কোনও গো-খাদ্য সহায়তা পাননি। উচ্চ মূল্যে খড় কিনে এক বেলা,কোনও দিন দুবেলা খাবার দিচ্ছেন। কিন্তু যে খড় কয়েকদিন আগে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে কিনতে পারতেন বন্যার কারণে সেই খড় এখন কিনতে হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। তাও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে খাদ্য কষ্টে ভুগে স্বাস্থ্যহানি ঘটছে এসব গবাদি পশুর। চারদিকে পানিতে নিমজ্জিত থাকায় প্রাকৃতিক কোনও খাবার জোগাড় করাও সম্ভব হচ্ছে না।

যাত্রাপুরের ওয়াপদা বেড়ি বাঁধে আশ্রয় নেওয়া গারুহারা গ্রামের মাসুদ্দি জানান, তিনি ও তার শ্বশুর মোট ১১টা গরু নিয়ে সাতদিন ধরে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতিদিন এক মুঠো করে খড় ছাড়া অন্য কিছু খাওয়াতে পারেননি গবাদি পশুগুলোকে। এখনও কোনও গো-খাদ্য পাননি তারা।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইযুব আলী সরকার বলেন, জেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাট থাকায় আমার ইউনিয়নে অনেক পরিবার গরু পালন করে। কিন্তু এবারের বন্যায় আমার গোটা ইউনিয়ন পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় এখানকার বেশিরভাগ পরিবার তাদের গবাদি পশুর খাবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফতর থেকে ১৫০ প্যাকেট গো-খাদ্য সরবরাহ করা হলেও তা খুবই কম।  

এদিকে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নসহ প্রত্যন্ত চরাঞ্চলেও কোনও গো-খাদ্য সরবরাহ করা হয়নি বলে জানা গেছে।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনও গো-খাদ্য বিতরণ করা হয়নি। খড়ের ঢিপি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শুকনো খড়ের অভাবে অনেকের গবাদি পশু দিনে এক বেলা আবার কোনও দিন সেটুকু খাবারও পাচ্ছে না।’

রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে এমন কোনও পরিবার নেই যারা গরু-ছাগল পালন করে না। প্রায় চার হাজার পরিবারের প্রত্যেকের দুই থেকে পাঁচ-সাতটি গরু রয়েছে। বন্যা কবলিত এসব পরিবার সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে তাদের এসব গরু নিয়ে।’

চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর জানান, বন্যার পানিতে প্লাবিত গোটা ইউনিয়নে ঘাসতো নেই, খড়ও পাওয়া যাচ্ছে না। খড় কিনে আনতে হয় চিলমারী থেকে। কিন্তু উচ্চ মূল্য আর পরিবহন সমস্যার কারণে বানভাসিরা সেই খড়ও কিনে আনতে পারছেন না।

খাদ্য সংকটে পানিবন্দি এলাকার গবাদি পশুর স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কার কথা জানিয়ে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল হাই বলেন, ‘আমাদের বিভাগ থেকে পানিবন্দি গবাদি পশুর স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। গবাদি পশুর খাদ্য সরবরাহের জন্য আমাদের বিভাগে কোনও বরাদ্দ নেই। তবে জেলা প্রশাসন থেকে গো-খাদ্য সরবরাহের জন্য প্রতি উপজেলায় ৪০ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যা প্রক্রিয়াধীন।’

/বিএল/

আরও পড়ুন:
বন্যায় রাজশাহী বিভাগে ৫৬৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া বন্ধ

গাইবান্ধায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন বন্যাদুর্গত ৪ লাখ মানুষ

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ