X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মায় পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমছে না রাজবাড়ীতে

তানভীর মাহমুদ, রাজবাড়ী
২০ আগস্ট ২০১৭, ০৯:৫৯আপডেট : ২০ আগস্ট ২০১৭, ০৯:৫৯

রাজবাড়ীতে বন্যা (ছবি: প্রতিনিধি) উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পদ্মার পানি বাড়লেও এখন ধীরে ধীরে তা কমতে শুরু করেছে। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার বলেন, ‘এতদিন পানি বৃদ্ধির মাত্রা আশঙ্কাজনক ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এখন থেকে পানি কমতে থাকবে।’

প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার জানান, শনিবার (১৯ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মার পানি ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে বিকাল ৩টায় পানি পরিমাপ করে দেখা গেছে তা ২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১০৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার (২০ আগস্ট) পানি বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তবে যেহেতু এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তাই এ বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘জেলার কিছু স্থানে বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। তবে সেসব স্থানে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত রাজবাড়ীতে তেমন কোনও সমস্যা হয়নি, আশা করছি আর সমস্যা হবে না।’ রাজবাড়ীতে বন্যা (ছবি: প্রতিনিধি)

এদিকে গত দু’দিনে রাজবাড়ী জেলার নদী তীরবর্তী ও বাঁধের ভেতরে বসবাসরত এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

শনিবার বিকাল ৩টার দিকে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বন্যায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৪০ হাজার ৮৪৫টি এবং মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৩ জন।

বন্যার পানির কারণে জেলায় রেললাইন, বসতবাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসা, হাট-বাজারে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে ৩ হাজার ৪২৪ হেক্টর ফসলি জমি। ভেসে গেছে বন্য কবলিত এলাকার প্রায় ৫০টি মাছের পুকুর। বন্ধ রয়েছে জেলার ৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কর্মহীন হয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন বানভাসি মানুষ।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুব সামান্য বলে জানিয়েছেন বানভাসিরা। এছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটও রয়েছে।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী জানান, জেলার পাঁচটি (রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা, কালুখালী ও বালিয়াকান্দি) উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভার ২০৯টি গ্রামের ৪০ হাজার ৮৪৫টি পরিবারের এক লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৩ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলার বন্যা কবলিতদের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া ৩৮৩ দশমিক ৭৪০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১১৬ দশমিক ২৬০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা আমাদের কাছে জমা রয়েছে। যতদিন বন্যার পানি থাকবে ততদিন পর্যন্ত বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ দেওয়া হবে। রাজবাড়ীতে বন্যা (ছবি: প্রতিনিধি)

বন্যা কবলিত পরিবারগুলোর জন্য চারটি উপজেলায় ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে ১১৯টি পরিবারের ৪০৫ জন মানুষ ইতোমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩ হাজার ৪২৪ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পানি ওঠায় বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, বন্যায় পানিবন্দি হয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ৮টি, গোয়ালন্দে ১৩টি, কালুখালীতে ৪টি ও পাংশায় ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রয়েছে। পানি নেমে গেলে এসব বিদ্যালয়ে আবার পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান জানান, পানিবন্দির কারণে গোয়ালন্দে ৪টি, কালুখালীতে ১টি ও পাংশায় ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া গোয়ালন্দের আরও দু’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যা কবলিতরা আশ্রয় নেওয়ার কারণে ওই উপজেলায় মোট ৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মজিনুর রহমান জানান, পানি বৃদ্ধির কারণে রাজবাড়ী জেলার যেসব নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে তাতে ৫০টির মতো মাছের পুকুর ভেসে গেছে।

এদিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার রেল স্টেশন থেকে গোয়ালন্দঘাট রেল স্টেশন পর্যন্ত লাইনে বন্যার পানি উঠে ছয় কিলোমিটার রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার এসএম কামরুজ্জামান জানান, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার রেল স্টেশন থেকে গোয়ালন্দঘাট রেল স্টেশন পর্যন্ত লাইনে বন্যার পানি উঠেছে। এতে বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) দুপুর থেকে ওই ছয় কিলোমিটার রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। লাইনের ওপর থেকে পানি না নামা পর্যন্ত ওই ছয় কিলোমিটার ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।

/এফএস/ 

আরও পড়ুন- ‘খাইমু কী কইরা, বাঁচমু কী কইরা’

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা