গত তিন বছর ধরে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ থাকায় যশোরে গড়ে উঠেছে বেশকিছু গরুর খামার। অধিকাংশ খামারি গরু পালনকে পেশা হিসাবে নিয়েছেন। কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে মুনাফা করেন খামারিরা। প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, খামারগুলোতে দেশি ও সম্পূর্ণ নিরাপদ পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, কোরবানির জন্য যশোরে ২৯ হাজার গরু ও ২৫ হাজার ছাগলের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে খামারগুলো থেকে ৩৫ হাজার ৭শ’ গরু ও ৩২ হাজার ৩শ’ ছাগল সরবরাহ করা যাবে। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব পশু বাইরের জেলাগুলোতেও পাঠানো সম্ভব।
যশোরের ৮টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে ছোট বড় প্রায় ৯ হাজার খামার। প্রথমে শখের বশে করলেও এখন গরু পালন ও মোটাতাজাকরণকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন বেকার ও অন্য পেশার মানুষরা। তারা কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে গত ৬ মাসের পরিচর্যায় মোটাতাজা করেছেন কয়েক হাজার গরু। যা এখন বিক্রির জন্য প্রস্তুত।
যশোর শহরের শংকরপুর এলাকার যুবক মিরাজ আলম অভ্র। পড়াশুনার পাশাপাশি গরুর খামার করেছেন। ২/৩ বছর ভারত থেকে গরু না আসায় তার মতো অনেক যুবক গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তিনি ৯টি গরু, ঘর তৈরি ইত্যাদি মিলিয়ে ছয়-সাত লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এবার ঈদের আগে গরু বিক্রি করে মুনাফা করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
যশোর সদরের গোপালপুর এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, ‘আগে ইটের ব্যবসা করতাম। সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন গরুর খামার করেছি। প্রথমে ৬টি গরু দিয়ে শুরু করি। এখন ১৪টি রয়েছে। গরু পরিচর্যায় খরচ এখন অনেক বেশি। তবে, ভারত থেকে গরু না এলে আমাদের লাভ হবে।’
একই এলাকার টনি আহমেদ বলেন, ‘শখের বশে খামার করেছিলাম, এখন পেশা হিসেবে নিয়েছি। তিনটি গরু দিয়ে শুরু। এখন খামারে গরু রয়েছে ২০টি। গরুর খাবার বিশেষ করে খড়, খইল, ভূষির দাম একটু বেশি।’
ঝিকরগাছা উপজেলার উজ্জ্বলপুর এলাকা খামারি হাসান আলী বলেন, ‘তিন বছর আগে ৫টি গরু দিয়ে খামার শুরু করি। লাভ হয় বেশ ভালো। এ বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ৭৯টি গরু লালন-পালন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, খামারে ৪ মণ থেকে ১৪ মণ পর্যন্ত মাংসের গরু রয়েছে। ভারত থেকে গরু না এলে খামারের গরু সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা দামে বিক্রি হবে।’
যশোরে গড়ে ওঠা এসব খামারে নিয়মিত কাজ করছেন পশু চিকিৎসকসহ প্রাণিসম্পদ অধিদদফরের কর্মীরা।
পশু চিকিৎসক জাহিদ হাসান তালুকদার বলেন, ‘গরু মোটাতাজাকরণের উদ্দেশেই খামারিরা গরু লালন পালন করছেন। আমার তত্ত্বাবধানে এই অঞ্চলের ১৫-২০টি খামার রয়েছে। খামারিরা কোনও রকম রাসায়নিকদ্রব্য কিংবা কোনও ওষুধ প্রয়োগ না করেই স্বাভাবিক খাবারের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করছেন।’
ভেটেনারি সার্জন ডা. সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘যশোর অঞ্চলে যেসব ফার্ম গড়ে উঠেছে, সেগুলো প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন নিয়মিত দেখাশুনা করেন। এসব ফার্মে প্রয়োজনীয় যেসব ওষুধ ও ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন-আমরা সেগুলো সাপ্লাই দেই। গরু মোটাতাজাকরণে আমরা খামারিদের দেশীয় এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ পদ্ধতিটিই সাজেস্ট করি। তারা সেই পদ্ধতিই ফলো করছেন।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ভবতোষ কান্তি সরকার বলেন, ‘ভারত থেকে গরু না আসায় আমাদের কৃষকরা ব্যাপক উৎসাহে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন। জেলায় ছোটবড় মিলিয়ে সাড়ে তিন হাজারের মতো কৃষক গবাদিপশু লালন পালনে সম্পৃক্ত। অনেকেই এটিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন।’