X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাত খুন মামলা: হাইকোর্টের রায়ে বাদী ও স্বজনদের সন্তোষ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
২২ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৪৯আপডেট : ২২ আগস্ট ২০১৭, ২২:৩৪

রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন মামলার বাদী বিউটি (ছবি- নাসিরুল ইসলাম)

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় হাইকোর্টের রায়ে সন্তোষ জানিয়েছেন মামলার বাদীসহ নিহতদের স্বজনরা। তবে আদালয়ের রায়ে যাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তাদেরও ফাঁসি বহাল থাকলে তারা আরও খুশি হতেন বলে জানিয়েছেন। একইসঙ্গে দ্রুত এই রায় কার্যকরের দাবি জানান তারা।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) হাইকোর্টে সাত খুন মামলার রায়ে সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও মাসুদ রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। এছাড়া, রায়ে ১১ জনকে যাবজ্জীবন ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সাত খুন মামলার বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আরও খুশি হতাম যদি নূর হোসেনের সহযোগীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড না হয়ে ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখা রাখা হতো।’ তিনি বলেন, ‘সাত খুনের পর আমরা নিহতদের পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে গণভবনে দেখে করেছিলাম। তিনি কথা দিয়েছিলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। সেই বিচার হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একইসঙ্গে আমরা নিহতদের পরিবারের সদস্যরা আবারও তার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’

সাত খুন মামলায় গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে বিউটি বলেন, ‘সাত খুনের পর আমরা সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি প্রিন্ট, ইলেট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায়। মিডিয়ার পূর্ণ সমর্থনের কারণেই সাত খুনের রায় দ্রুত হয়েছে।’ ভবিষ্যতে কোনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেন এ ধরনের অপরাধে না জড়িয়ে পড়েন, তা নিশ্চিত করতে দ্রুত এই রায় বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।

সাত খুন মামলার আরেক বাদী নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ে প্রকৃত দোষীদের সর্বোচ্চ দণ্ড ফাসিঁ বহাল আছে। এখন আইনি প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত এই রায় বাস্তবায়ন চাই।’

নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ে ডা. সুস্মিতা সরকার বলেন, ‘আমরা এই রায়ে অবশ্যই খুশি হয়েছি। প্রথমে আমরা কিছুটা শঙ্কায় ছিলাম। তবে সেই শঙ্কা কেটে গেছে। দ্রুত এই রায় কার্যকর করা হোক, সেটাই আমরা চাই।’

সাত খুনের ঘটনায় নিহত তাজুল ইসলামের ছোট ভাই রাজু আহমেদ বলেন, ‘সাত খুনের ঘটনায় কেবল সাত জন ব্যক্তিকেই খুন করা হয়নি, সাতটি পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কারণ নিহতরাই ছিল তাদের প্রত্যেকের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এ মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ে আমরা খুশি।’ তাজুলও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফের আরেকবার সাক্ষাতের দাবি জানান।

তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের রায়ের প্রতিক্রিয়া বলেন, ‘উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে আমি খুশি। এখন আমাদের দাবি, দ্রুত এই রায় কার্যকর করা হোক, যেন জীবিত অবস্থাতেই ছেলের হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর দেখে যেতে পারি।’



রায় ঘোষণার পর ‘ভি’ চিহ্ন দেখাচ্ছেন নজরুলের স্ত্রী ও স্বজনরা

তবে উচ্চ আদালতের রায়ে খানিকটা অসন্তুষ্টি জানিয়েছেন নিহত মনিরুজ্জান স্বপনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান রিপন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাত খুনের রায়ে ডেথ রেফারেন্স ও অপিল বিভাগের রায়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। কারণ যারা প্রকাশ্য দিবালোকে প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ভাইকে খুন করতে চেয়েছিল, নিম্ন আদালত তাদের অনেকের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। উচ্চ আদালত নূর হোসেনের সেই সব সহযোগীদের কয়েকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এরা কারাগারে বসেই ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাবে— সেই শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।’

সাত খুনের ঘটনায় নিহত ড্রাইভার জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সামসুন নাহার নুপুর বলেন, ‘নূর হোসেনের কাছ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে র‌্যাব সদস্যরা আমার নিরপরাধ স্বামীকে খুন করেছিল। স্বামীকে হারিয়ে মেয়েকে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে। ওই ঘটনার সময় আমার মেয়ে ছিল গর্ভে। বাবার মুখটা দেখতে পেল না সে। কী দোষ ছিল তার?’ রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান তিনি।

সাত খুন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, অনেক আন্দোলন করেছি। দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চালিয়েছি। আশা করেছিলাম, নিম্ন আদালতে দেওয়া ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে। তা হয়নি। তবে বিচার বিভাগের ওপর আমাদের র্পূণ আস্থা রয়েছে। বিচার বিভাগ যে রায় দিয়েছে, তাকে আমরা সম্মান জানাই। তবে ২৬ জনের ফাঁসি বহাল থাকলে কেবল আমি নই, নারায়ণঞ্জের সব আইনজীবীসহ সব স্তরের মানুষ খুশি হতেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত বলেন, ‘উচ্চ আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, কয়েকজনের জন্য পুরো বাহিনী দায়ী হতে পারে না। আমরাও প্রথম থেকেই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত র‌্যাবের বিপথগামী সদস্যদেরই দায়ী করেছি, বাহিনী হিসেবে র‌্যাবকে দায়ী করিনি। উচ্চ আদালত রায়ে র‌্যাবকে যে সম্মান দিয়েছেন, সেটা যেন তারা ধরে রাখতে পারে। র‌্যাবে যেন ভবিষ্যতে তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও রানার মতো বিপথগামী অফিসার তৈরি না হয়— সেই আশাই করি আমরা।’

আরও পড়ুন-


‘ন্যায়বিচার পেয়েছি’

অপরাধীর পরিচয় অপরাধীই: মেয়র আইভী

রায় যেন না বদলায়, প্রত্যাশা নিহতদের স্বজনের

আদালতের পর্যবেক্ষণ: হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত

নূর হোসেন, তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল

/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা