X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত বিচার নিষ্পত্তিতে নজির জামালপুরে

বিশ্বজিৎ দেব, জামালপুর
২৩ আগস্ট ২০১৭, ০৭:৫৪আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০১৭, ০৭:৫৪

জামালপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (ছবি- প্রতিনিধি)

দ্রুত বিচার নিষ্পত্তিতে বাস্তব পদক্ষেপ ও হয়রানির মামলা বন্ধে আদালতের সরাসরি উদ্যোগ ফলপ্রসু হয়েছে জামালপুরে। চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এই কার্যক্রম বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাস অর্জন করেছে। গত তিন বছরে মামলা নিষ্পিত্তি হয়েছে ২৩ হাজারের বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মজিবুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর মামলাজট কমাতে উদ্যোগ নেন। শুরুতেই মামলা দ্রুত নিষ্পতির ওপর জোর দেন। এরপর মিথ্যা অভিযোগে দায়ের করা মামলা ও হয়রানির মামলা কমাতে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নেন তিনি। এতেই সফলতা এসেছে মাত্র তিন বছরে।

সূত্রমতে, মামলার শ্রেণি ও প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মজিবুর রহমান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের চালু করা অঞ্চলভিত্তিক চারটি আমলি আদালত ভেঙে থানাভিত্তিক সাতটি সিআর এবং জিআর আমলি আদালত চালু করেন। আদালতে বিচারিক কার্যক্রম ঢেলে সাজানোর কারণে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিন বছরে মামলা নিষ্পত্তি হয় ২৩ হাজার ৬৪টি, যা আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি। বর্তমানে বিচারাধীন মামলা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র আট হাজার ৬০০টি। এছাড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের এবং নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে কয়েকটি চেকিং পয়েন্ট তৈরি করেছেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আমলি আদালতে মামলা দায়েরের পর অভিযোগকারীকে ভালোভাবে পরীক্ষা করে মামলা আমলে নেওয়া হয়। প্রয়োজনে সাক্ষীদেরও ভালোভাবে যাচাই করা হয়। মামলার গুরুত্ব বুঝে প্রয়োজনে তা খারিজ করারও নির্দেশ দেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটরা এ রেওয়াজ চালু করায় মিথ্যা অভিযোগে দায়ের করা মামলা বা হয়রানির মামলা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।

এছাড়া নিয়মিত পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে থানায় মামলা রেকর্ডের ক্ষেত্রে এবং হয়রানিমূলক মামলা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এতে থানাতেও মিথ্যা অভিযোগে হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের সংখ্যা অনেকাংশেই কমে গেছে।

আগে মামলার মেরিট বিবেচনা না করেই অভিযোগের তদন্ত করতে বিভিন্ন সংস্থাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হতো। বর্তমানে ঢালাওভাবে এ কাজটি না করে আদালতেই মেরিট বিবেচনা করে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্টেটকে নির্দেশ দেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এ কারণে আদালতে মামলা হলে মামলাটি বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার কাছে তদন্তের জন্য পাঠানোর হারও কমে যায়। এতে মানুষের হয়ারানি কমেছে।

চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাস (ছবি- প্রতিনিধি)

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কর্মকর্তারা জানান, অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, মামলা ইউপি চেয়ারম্যান, স্কুলের শিক্ষক বা স্থানীয় কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এতে বিভিন্ন কারণে তদন্ত রিপোর্ট দিতে যেমন দেরি হয়, তেমনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেন না তদন্ত কর্মকর্তারা। এতে করে মামলার ফরিয়াদি অহেতুক আর্থিক হয়রানি থেকে শুরু করে নানান সমস্যায় পড়েন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ক্লু বিহীন ঘটনা— খুন, ডাকাতি বা অন্যান্য গুরুতর বিষয় ছাড়া থানায় কোনও মামলা এফআইআর  হিসেবে গণ্য করার নির্দেশনা দেওয়া হয় না। মারামারির ঘটনার ক্ষেত্রে ফরিয়াদি এবং সাক্ষীদেরকে পরীক্ষা করে এবং জখমির মেডিক্যাল সার্টিফিকেট তলবের পর ঘটনার সত্যতাসহ অভিযোগের সমর্থনে আসলে আসামিদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। এতে করে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি অনেকাংশেই কমে গেছে। অভিযোগ শুনানির ক্ষেত্রেও ঢালাওভাবে অভিযোগ গঠন বা অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয় না। আইনগত বিষয়ের পাশাপাশি যেসব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সুনির্দিষ্ট থাকে শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। অন্যথায় আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এতে করে মানুষ দ্রুত সুবিচার পাচ্ছেন।

নারাজি আবেদন দাখিল হলে দাখিলের দিনই অথবা পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে শুনানি করে নিস্পত্তি করা হয়। দিনের পর দিন কোনও আবেদনের শুনানি এবং আদেশের জন্য পেডিং থাকে না। তদন্তাধীন মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য প্রত্যেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই তদন্তাধীন মামলার তদন্ত রিপোর্ট দ্রুত আসতে শুরু করেছে। ২০১৪ সালের আগে কোনও মামলা তদন্তাধীন নেই বললেই চলে। বিচারাধীন জিআর মামলার সাক্ষী উপস্থাপনের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইতোমধ্যে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। এতে সাক্ষী হাজিরার হার বেড়েছে। জিআর মামলার সাক্ষীদের প্রতি সমন ইসু করার পরেও যদি কোনও সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হন তাহলে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৯ ধারার বিধানমতে মামলাটি স্থগিত করে আসামিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার অধীন সব ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে ন্যায়বিচারের জন্য দীর্ঘদিন আদালতে জনগণকে আর ঘুরতে হয় না।

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদেশ বা রায়ের নকল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন। কোনও আদালতে সাক্ষীরা এসে যেন ফেরত না যান সেজন্য প্রতিদিন কোন আদালতে কতটি সাক্ষী এসেছেন এবং কতটি সাক্ষ্য রেকর্ড করা হয়েছে এবং কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড করা না হলে কেন রেকর্ড হয়নি এ বিষয়ে প্রতিদিন প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটদের ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দিয়েছেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

বিচারপ্রার্থী মানুষের বসার জন্য নিজ উদ্যোগে এজলাসের বারান্দায় প্রয়োজনীয় চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা করেছেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রে। মামলা দায়ের থেকে শুরু করে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি  হওয়া পর্যন্ত প্রতি স্তরে বিচার বিশ্লষণ করার ফলে মামলা নিষ্পত্তির হার বহুলাংশে বেড়েছে।

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মজিবুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত জেলা কারাগার পরিদর্শন, আদালতের বিভিন্ন শাখা পরিদর্শন করায় প্রত্যেক আদালতে কাজের গতি বেড়েছে। এছাড়া আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সার্বক্ষণিক সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে ধ্বংসযোগ্য আলামত ধ্বংস করা হয়েছে। নিলামযোগ্য আলামত নিলামে বিক্রির জন্য কমিটি করে দিয়েছেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ওই কমিটি প্রকাশ্য নিলামে বিভিন্ন আলামত বিক্রির অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিয়মিত জমা দিচ্ছে।

প্রত্যেক সেরেস্তা থেকে নিষ্পত্তি রেকর্ড (মামলার নথি) রেকর্ডরুমে পাঠানোর পর ধ্বংসযোগ্য রেকর্ড ধ্বংস করার জন্য একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটি নিয়মিত রেকর্ড ধ্বংস করে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর প্রতিবেদন পাঠাচ্ছে।

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মজিবুর রহমানের নেতৃত্ব, উদ্যোগ এবং নিয়মিত বিভিন্ন আদালত পরিদর্শন, তদারকি ও বিভিন্ন স্তরে বিশ্লেষণ করার ফলে একদিকে যেমন মামলার নিষ্পত্তির হার বেড়েছে, অন্যদিকে বিচারপ্রার্থী মানুষের হয়রানি কমে ন্যায়বিচারের পথ সুগম হয়েছে। এর সুফল জামালপুরবাসী ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছেন।

 

/এমএ/এসএমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!