X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি

জামালপুর প্রতিনিধি
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৭:১৩আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৭:২০

জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা নতুন করে আবারও তাদের ক্ষেতে ফসল ফলানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে বন্যায় বীজ তলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ধানের বীজ নিয়ে বেশ বিপাকে রয়েছেন। সরকারিভাবে জেলার বন্যাদুর্গত এলাকার বিভিন্ন স্থানে আমন ধানের বীজ বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তাই কৃষকরা চড়া মূল্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধানের বীজ সংগ্রহ করছেন।

মেলান্দহ উপজেলা দুরমুঠ ইউনয়িনের সরুলিয়া গ্রামের বিপ্লব্, মহসিন ও শামীম জানায়, পরপর দুইবারের বন্যার কারণে তারা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নতুন করে ফসল ফলানোর খরচ যোগাতে তারা বেশ হিমসিম খাচ্ছেন। তারা আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে নতুন করে ক্ষেত তৈরি করছে। তবে বন্যার কারণে জমিতে প্রচুর পলি জমায় আগামী রবি শস্য উৎপাদন বেশ সহজ হবে বলে জানান তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. হানিফ জানান, বন্যায় জেলায় মোট ৫০ হাজার ১২৭ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রোপা আমন ও বীজতলা এবং বিভিন্ন সবজি ক্ষেত।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.আব্দুল মজিদ জানান, বন্যায় এবার জেলায় ৯ হাজার ৩৪৪টি পুকুর, দিঘি ও খামার প্লাবিত হয়েছে। এ সব পুকুর খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে করে ৫ হাজার ৫৯৬ দশমিক ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও জানান, মাছের ক্ষতির ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ক্ষতি পুষিয়ে উঠার ব্যাপারে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আবেদনের কোন জবাব আসে নাই।

জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাসেল সাবরিন জানিয়েছেন, জেলায় ৪০১টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং আংশিক-১৯ হাজার ৮৫৬টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি আরও জানান,ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকের ঘরবাড়ি মেরামত বা পুননির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরিপ করা হচ্ছে। জরিপ শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঢেউটিন এবং মেরামতের জন্য টাকা দেওয়া হবে।

সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো.আব্দুর রাজ্জাক জানান, বন্যায় ১ হাজার ৮৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭১১টি প্রাথমিক ও ৩৭২টি মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে।

জামালপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো.নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যায় ১৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক সম্পূর্ণ ও ৬৮৬ কিলোমিটার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বন্যায় ২ কিলোমিটার পাকা সড়ক সস্পূর্ণ ও ৪০১ কিলোমিটার পাকা সড়ক আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন,‘এবারের বন্যায় জেলায় ২৫ কিলোমিটার বাঁধের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।’

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্কার পরিছন্ন ও মেরামতের উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো.আব্দুর রাজ্জাক।

জামালপুর সিভিল সার্জন ডা.মোশায়ের-উল ইসলাম রতন বলেন,‘জেলায় বন্যদুর্গত এলাকায় ৭৭টি মেডিক্যাল টিম কাজ করে যাচ্ছেন।’

ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা একেএম শহীদুল ইসলাম জানান, বন্যা পরবর্তী কোন রোগ বালাই নেই বললেই চলে। তবে স্বাভাবিক নিয়মে দুই একজন ডায়রিয়ার রোগী পাওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় ৭ উপজেলার ৮টি পৌরসভা, ৬২টি ইউনিয়নের ৬৭৪ গ্রামের ১ হাজার ২৮৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বন্যার পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে,বন্যাদুর্গতদের মাঝে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এখনও তাদের ত্রাণ সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকারি ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় বানভাসী মানুষদের অভিযোগ ছিল ব্যাপক।

এ ব্যাপারে ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম এহছানুল মামুন বলেন, ‘সুষ্ঠু তদারকির অভাবে বন্যার্তদের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করা হলেও কোথাও কোথাও ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা যেনো সরকারি ত্রাণগুলো হাতে পায় সে ব্যাপারে সর্তক দৃষ্টি রাখা হয়েছে।’

ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো.মসিউর রহমান বাদল বলেন, ‘বন্যার পানিতে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশী। বানের পানিতে তাদের ক্ষেতের সব ফসল এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যায় রাস্তা ঘাট ভেঙে যাওয়ায় মানুষের চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তবে এরই মধ্যে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় লোকজন তাদের নিজ নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। এছাড়া বন্যার তীব্রতায় কোথাও কোথাও ঘরবাড়ির মাটির মেঝে, খুঁটি ও চালা ভেঙে গেছে।

 

/এমডিপি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!