X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

'এতদিন তো মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল, এখন তো রাস্তায় নামিয়ে দিলো’

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:০০আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৩৫
image

‘আশ্রয়কেন্দ্রে খাইতে না পারলেও তো থাকতে পারতাম। এখান থেকে চলে গেলে কই যামু, কই থাকমু কিছুই জানি না!’ কথাগুলো বলছিলেন ১৩ জুন পাহাড় ধসের পর ছেলেকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পড়ে থাকা ভেদভেদী কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা উমা বড়ুয়া। জেলা প্রশাসন গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে সব আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে জিমনেশিয়াম আশ্রয়কেন্দ্রে ১৮টি ও হাসপাতাল ছাত্রাবাসের আশ্রয়কেন্দ্রে দুইটি পরিবার এখনও রয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে বাধ্য হওয়ায় মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও রইলো না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। 

ভেদভেদীর বাসিন্দা জীবন বসু চাকমা বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে আসার পর আমি এখন আমার আত্মীয়র বাড়িতে উঠেছি। কয়েকদিন এখানে থেকে বাড়ির কাজ শুরু করবো ভাবছি। সরকার আমাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে রাস্তায় নামিয়ে দিলো। এতদিন তো মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল, এখন তো অনেকটা রাস্তায় নামিয়ে দিলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘যা অর্থ পাইছি আর এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা তো করতে হবে।'

অনিশ্চিত গন্তব্য, তাই আশ্রয় কেন্দ্রে ছেড়ে যাওয়ার ভরসা পাচ্ছেন না এই নারী

জিমনেশিয়াম আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা উমা বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আমার স্বামী নাই, এক ছেলেকে নিয়ে বেঁচে আছি। পাহাড় ধসে একমাত্র সম্বল স্বামীর শেষ চিহ্ন বাড়িটাও ধসে গেছে। এখন আমার থাকার মতো কোনও জায়গা নেই। এখন কই যাবো? তাই আশ্রয়কেন্দ্রে রয়ে গেছি। আমার নতুন করে বাড়ি বানানোর মতো কোনও সম্বল নাই। জেলা প্রশাসন থেকে যা দিছে তা দিয়ে আমার কিছুই হবে না। আমাকে বাড়ি বানিয়ে না দিলে আমি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে কোথাও যাবো না।' 

উমা বড়ুয়ার মতো জিমনেশিয়াম আশ্রয়কেন্দ্রে রয়ে গেছেন অনেকেই। তেমনি একজন যুগমায়া চাকমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের এক হাজার টাকা আর ত্রিশ কেজি চাল দিয়ে এখান থেকে যাইতে বলছে। আমরা কই যাবো?’ এক হাজার টাকা আর ত্রিশ কেজি চাল দিয়ে কী হবে- এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা রুবি বড়ুয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতের পর থেকে আর আমাদের খাবার দেয়নি কেউ। আজকের দুপুরটা বনরুটি (পাউরুটি) খেয়ে কেটেছে। রাতেও এমনই করবো। কিন্তু এখান থেকে চলে গেলে থাকারও জায়গাও থাকবে না। তাই পড়ে আছি।’ 

‘খাইতে না পারলেও থাকতে পারছি, খাওয়া না দিলেও এখানেই পড়ে থাকমু।’ এভাবেই মনের কথা জানালেন ভেদভেদী যুব উন্নয়ন এলাকার বাসিন্দা প্রুদি চাকমা।

  আশ্রয় কেন্দ্রে এখনও আছে কয়েকটি বিপন্ন পরিবার

এ বিষয়ে রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু শাহেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের ৬ হাজার টাকা, ৩০ কেজি চাল, ২ বান্ডেল টিন ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ১ হাজার টাকা ও ত্রিশ কেজি চাল দিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে পড়ে আছে, জেলা প্রশাসন তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছে।’

বন্ধ ঘোষণা করা হলেও আশ্রয় কেন্দ্রেই রয়ে গেছে এই পরিবারগুলো

গত ৫ সেপ্টেম্বর পাহাড় ধসের পর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ১৪০ পরিবারকে সরকারি ত্রাণ সহায়তার মাধ্যমে তাদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বিদায় দেওয়া হয়েছিল। আজ শুক্রবার বাকিদেরও বিদায় করে দেওয়া হলো। গত ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসে ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এতে জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত ১২ হাজার ৭৫৩টি পরিবার। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ২৩১ ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৯ হাজার ৫৩৭টি আর বাকিগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

/এমএইচ/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খুলনায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিমার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে: প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল
পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে: প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা